নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়
‘শহর জুড়ে মিছিল হচ্ছে, জানেন তো?’
প্রশ্ন শুনে স্মিত হেসে বৃদ্ধা বললেন, ‘‘ভালই তো হচ্ছে। হওয়াই তো দরকার।’’
তবে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মিছিলে হাঁটতে না পারার আক্ষেপও রয়েছে নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বলছেন, ‘‘কলকাতায় ছিলাম না, তাই পারিনি। আমার অনেক বন্ধু মিছিলে হেঁটেছেন। আমারও ইচ্ছে রয়েছে।’’
ধর্মনিরপেক্ষ দেশটাকে বিভাজনের হাত থেকে বাঁচাতে এ বার কোনও প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলাতে চান নির্মলাদেবী। সোমবার তাঁর বড় ছেলে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, বিশ্বের দরবারে ভারতের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত যে কোনও ভারতীয়ই উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। বর্তমান ভারতের সঙ্গে নাৎসি শাসনের দিকে এগিয়ে চলা জার্মানির বড্ড বেশি মিল দেখা যাচ্ছে।’’
ছেলের মতোই উদ্বিগ্ন নির্মলাদেবী। মঙ্গলবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ফ্ল্যাটে বসে নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কথা বলার ফাঁকে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে বৃদ্ধার। বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলছেন ওঁদের বার করে দাও। কোথায় যাবেন ওঁরা? এই দেশ তো সবার। আমরা সকলেই তো সমান। ‘কিছু মানুষ ভারতমাতার নাম বলে বলছেন, আমরাই সব সামলাব’। তা কি হয়?’’
আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির বিরুদ্ধ স্বর কি ‘আজাদি’ স্লোগানই
শীতের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে তাইল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছিলেন নির্মলাদেবী। সেখান থেকে ফিরে কিছু দিন কাটিয়েছেন দিল্লিতে। শহরের বাইরে থাকলেও বন্ধুদের থেকে খবর নিয়েছেন প্রতিবাদের। নজরে রেখেছেন, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। পারিবারিক ছুটি কাটানোর ফাঁকে সেই পরিস্থিতি নিয়ে কি ছেলের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে? ‘‘হয়েছে মাঝেমধ্যে। বিষয়টা জেনে রাগও হয়েছে’’— বললেন নির্মলাদেবী। রাগ যে এখনও রয়েছে, বৃদ্ধার কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু করিনি বলেই আজ দেশের এমন অবস্থা। আমরা অনেক কিছু দেখেও তো দেখিনি। তাই তরুণ প্রজন্মকে আজ এগিয়ে আসতে হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে নতুন আইনের বিরোধিতা করছেন, তাকেও সমর্থন জানিয়েছেন নির্মলাদেবী।
আরও পড়ুন: মনোবল চুরমার করতেই কি হস্টেলে হামলা
সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ ও মহিলাদের উন্নয়নে এক সময়ে প্রচুর কাজ করেছেন অর্থনীতিবিদ নির্মলাদেবী। এখনও চান করতে। কিন্তু সেই কাজে কখনও জাত-ধর্মের বিভেদ দেখেননি। আর কারওই সেটা দেখার কোনও প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করেন। বরং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কথা শুনে তাঁদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করাই দরকার, এমনটাই মত বৃদ্ধার।
রবিবার জেএনইউ ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালায় গুন্ডাবাহিনী। তাদের হাত থেকে রেহাই পাননি ছাত্রী ও শিক্ষকেরা। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারই অভিজিৎ বলেছেন, ‘দেশে ভিন্ন মতের পরিসর নষ্ট হওয়ার যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তা ভারত নামক প্রকল্পটিকে বিপন্ন করে তোলে।’ ভারতের অবস্থা, জেএনইউয়ের অবস্থা দেখে ছেলের মতোই স্বস্তিতে নেই মা নির্মলাদেবীও।
ছেলে অভিজিৎ যখন জেএনইউ-এ পড়াশোনা করতেন, কোনও দিন এমন তাণ্ডবের আতঙ্কে কাটাতে হয়নি নির্মলাদেবীকে। হস্টেলে খাবার ভাল নয়, থাকার একটু সমস্যা হচ্ছে ছাড়া আরও কোনও সমস্যার কথাও শুনতে হয়নি ছেলের থেকে।
সেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ছেলেই কলকাতায় আসছেন জানুয়ারির শেষে। মায়ের মতো কি তিনিও হাঁটবেন প্রতিবাদ-মিছিলে? ‘‘ওর সময় কোথায়? তবে যদি ইচ্ছে হয়, নিশ্চয় হাঁটবে’’— হেসে বললেন নির্মলাদেবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy