শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ।
পরীক্ষার ফল ভাল হয়নি। তা ছাড়া পরিবারের খরচ সামলাতে কাজও করতে হয় তাঁকে। শ্যামবাজারের ওই যুবক ভেবেছিলেন, উত্তর কলকাতার শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজে বিএ জেনারেলে ভর্তি হয়ে পড়া আর কাজ দুই-ই চালাবেন একসঙ্গে।
তবে ভাবনাই সার। ফর্ম পূরণ করে বেশ কিছু দিন অপেক্ষার পরে কলেজে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, বিএ, বি এসসি এবং বি কম জেনারেল পড়ানোই বন্ধ করে দিয়েছে তারা। তাই এ বার থেকে আর জেনারেল পাঠ্যক্রমে ছাত্রই ভর্তি করাচ্ছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ গেটে এক ছাত্রনেতা যুবকটিকে বলে দেন, ‘অন্য কলেজ দেখুন। এ বছর থেকে বিএ, বি এসসি জেনারেল পড়ানো হচ্ছে না আমাদের কলেজে।’ অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেও মেলে একই উত্তর। ছাত্রটির প্রশ্ন, ফর্ম পূরণের সময়ে এ কথা জানানো হয়নি কেন? তা হলে অন্য কলেজে আবেদন করতেন। এখন তিনি কোথায় যাবেন! রবিবার অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ওয়েবসাইটে কিছু সমস্যা ছিল। পরে ভুল শুধরে নেওয়া হয়েছে। আর বিএ, বি কম, বি এসসি জেনারেল পড়ানোর মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই।’’
চলতি বছরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পাকাপাকি ভাবে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) চালু করেছে। তার আগে গত শিক্ষাবর্ষে সিবিসিএস চালুর প্রস্তাব ওঠার সময়েই জয়পুরিয়া কলেজ বি কম জেনারেলে পঠনপাঠন তুলে দেয়। চলতি শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে পরিচালন সমিতিতে বিএ এবং বি এসসি জেনারেল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও এ নিয়ে ইতিমধ্যেই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছেন ওই কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
জেনারেল বিষয়ে পড়াশোনা তুলে দেওয়ার পক্ষে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, অনার্স এবং জেনারেলে পড়াশোনা একসঙ্গে চালানোর মতো ক্লাসঘর এবং পরিকাঠামো নেই তাঁদের। তার উপরে সিবিসিএস চালু হওয়ায় ছাত্রদের কলেজে উপস্থিতি বাড়তে পারে। ফলে সব ছাত্রকে বসতে দেওয়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যদিও এই যুক্তির বিরোধিতা করে অন্য শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা বলছেন, এটা ছাত্র-বিরোধী পদক্ষেপ। প্রায় এক হাজার পড়ুয়া জয়পুরিয়ায় জেনারেল বিষয়ে পড়তেন। সেই পাঠ্যক্রম তুলে দিলে তাঁদের কী হবে! এখন যাঁরা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন, তাঁরাই বা যাবেন কোথায়?
অধ্যক্ষ বলছেন, সিবিসিএস চালু হওয়ায় এখন এক জন পড়ুয়া তাঁর ইচ্ছে মতো অনার্স এবং পাসের বিষয় ঠিক করতে পারবেন। ফলে আগের থেকে পঠনপাঠনের বিষয় বাড়ছে। তা ছাড়া, কলেজে উপস্থিতির উপরে ভিত্তি করে পড়ুয়াদের নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক-একটি বিষয়ে যত সংখ্যক পড়ুয়া কলেজে উপস্থিত থাকবেন, তাঁদের একসঙ্গে সামাল দেওয়া খুব সমস্যার। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা কেউ কেউ ফোটোগ্রাফি পড়তে চাইলে তাঁদের জন্য তো আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে। জেনারেল কোথায় বসাব, অনার্সদেরই বা কোথায় বসতে দেব?’’
যদিও অধ্যক্ষের কথার বিরোধিতা করে পড়ুয়াদের একাংশ বলছেন, কলেজের নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে শোভাবাজার এলাকায়। তা হলে জেনারেল বিষয় তুলে দেওয়ার মানে কী? কলেজের এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় ফেসবুকে একটি পেজও তৈরি করেছেন জয়পুরিয়া কলেজের প্রাক্তনীরা। তাঁদের প্রশ্ন, কলেজ কি এ ভাবে আদৌ জেনারেল-এর পঠনপাঠন তুলে দিতে পারে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কলেজ এই সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে করতে হবে।’’ জয়পুরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষও জানাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে অনুমতি নিয়েছেন তাঁরা। ফলে আপাতত শুধু অনার্সই পড়াবে জয়পুরিয়া কলেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy