পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশ্যে আসা একটি চিঠি ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশ্যে আসা রহস্যময় চিঠিটি (যার সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) ঘটনার রাতেই লেখা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই অনুমান তদন্তকারীদের একাংশের। পুলিশ সূত্রে আগেই খবর মিলেছিল, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ধৃত পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত তদন্তকারীদের কাছে জেরায় দাবি করেছিলেন, চিঠিটি নাকি তিনিই লিখেছিলেন! কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পর তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, চিঠির নেপথ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধৃত দুই প্রাক্তনী এবং হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী আর সপ্তক কামিল্যা।
গত ৯ অগস্ট, বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের তিনতলা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে হস্টেল থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করে পুলিশ। সেই ডায়েরির পাতায় লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, ডিন অব স্টুডেন্টসের উদ্দেশে লেখা সেই চিঠির ব্যাপারে ধৃতদের জেরা করা হয়। সেই জেরায় দীপশেখর স্বীকার করেছেন, চিঠিটি তাঁর লেখা। প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া নিজে লিখতে পারছিলেন না বলেই তাঁকে লিখে দিতে বলেছিলেন। তদন্তকারীদের সূত্রেই দাবি, এ ব্যাপারে পরে বাকিদেরও জেরা করে জানা গিয়েছে যে, সৌরভ এবং সপ্তকের মাথাতেই চিঠি লেখানোর পরিকল্পনা এসেছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেলের এ-২ ব্লকের ১০৪ নম্বর ঘরেই যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত। রাত ৯টার পর প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে চার তলায় ওই ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ এবং সপ্তক ছিলেন। ছিলেন আরও ধৃত পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ। সেখানেই চিঠিটি লেখা হয়েছে বলে জানা প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে বলে খবর তদন্তকারীদের সূত্রে।
চিঠিটি প্রকাশ্যে আসতেই অভিযোগ উঠেছিল, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে দিয়ে জোর করে লেখানো হয়ে থাকতে পারে চিঠিটি। সেই চিঠিতে দেখা গিয়েছিল, সেটি বিভাগীয় সিনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিন অফ স্টুডেন্টস’কে লেখা হয়েছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, বিভাগীয় সিনিয়রেরা হস্টেলের পরিবেশ নিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। চিঠিতে এক জনের নামও নেওয়া হয়েছে। তিনিই প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে ‘ভয় দেখানোর’ চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। ডিনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার আর্জিও চিঠিতে জানানো হয়েছে। বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল সেই চিঠি ঘিরে। যেমন— চিঠিটির শেষে মৃত পড়ুয়ার নামে দু’টি সই কেন? শুধু তা-ই নয়, চিঠিটি যে হেতু ডিনের উদ্দেশে লেখা, তা হলে সেটি ডায়েরির পাতায় কেন লেখা হল? কেন সাদা এ৪ কাগজে লেখা হল না? এই সব প্রশ্নেরও উত্তরের খোঁজ করছিলেন তদন্তকারীরা।
মৃত পড়ুয়ার পরিবার আগেই জানিয়েছিল, এই চিঠির হাতের লেখা তাদের চেনা নয়। অর্থাৎ, প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার নয়। মৃতের মামা স্বরূপ কুণ্ডু আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘চিঠিটা আমি দেখেছি। ওই হাতের লেখা যে ওর (মৃত পড়ুয়ার) নয়, এ ব্যাপারে আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। আমাদের দাবি, হস্টেলে যারা থাকে, সকলের হাতের লেখা পরীক্ষা করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, চিঠিটা কে বা কারা লিখেছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের মনে হয়, তদন্তকে প্রভাবিত করার জন্যই এই চিঠি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ চিঠি জোর করে লেখানোর নেপথ্যে মনোতোষ এবং দীপশেখরের ভূমিকা থাকতে পারে বলেও দাবি করেছিলেন সরকারি আইনজীবী।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় চিঠির পাশাপাশি প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার একাধিক সইও মিলেছে। পড়ুয়ার হাতের লেখা এবং সই রয়েছে, এমন বেশ কিছু খাতা, ডায়েরি এবং নথি ভাল করে খতিয়ে দেখে জানার চেষ্টা চলছে, চিঠিটির হাতের লেখা এবং সই কার? পুলিশ সূত্রে খবর, হাতের লেখা বিশারদকে দিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে। দীপশেখরের হাতের লেখাও পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্র জানাচ্ছে, যদি তা পড়ুয়ারই হয়ে থাকে, তা হলে তাঁকে ওই চিঠি লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না, তা-ও ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে। যদি সত্যিই তাঁকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানো হয়ে থাকে, তা হলে তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? এই প্রশ্নও তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy