Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Scam

প্রায় কোটি টাকার গয়না উধাও শহরের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের লকার থেকে, পুলিশের হাতে পেনসিল

এটিএম-কাণ্ডের মতো লকার রহস্যও ক্রমশ একটা বড়সড় কেলেঙ্কারিতে পরিণত হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:৩৩
Share: Save:

পনেরো দিনের মধ্যে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক ব্যাঙ্কের লকার থেকে উধাও হয়ে গেল প্রায় ৮০ লাখ টাকার সোনার গয়না! পর পর তিনটি ঘটনা ঘটলেও কী ভাবে লকার থেকে গয়না উধাও হচ্ছে তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। শুধু পুলিশই নয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের নিজস্ব তদন্তেও মেলেনি কোনও সূত্র। প্রথমে হেয়ার স্ট্রিট, তার পর চিৎপুর, সবশেষে গড়িয়াহাট। তিন তিনটি অভিযোগ গত ১৫ দিনে জমা পড়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে।

হাসমুখ রাই ডি পটেল। সত্তরোর্ধ্ব ওই ব্যবসায়ী আগে থাকতেন কলকাতার নাকতলা লেনে। এখন মুম্বইয়ের বাসিন্দা। প্রায় ৫০ বছর ধরে তাঁর লকার রয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হেয়ার স্ট্রিট শাখায়। তিনি এ মাসের প্রথম সপ্তাহে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন যে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় এসে লকার খুলে দেখেন প্রায় ২৫ লাখের গয়না ও সোনার কয়েন উধাও।

একই রকমের অভিযোগ দমদম রোডের বাসিন্দা স্বর্ণালী দত্তের। বছর পঞ্চাশের স্বর্ণালী দেবীর লকার রয়েছে নর্দার্ন অ্যাভিনিউয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি লকার খুলে দেখেন সেখানে কয়েকটি আংটি ছাড়া বাকি সমস্ত গয়না উধাও। ওই লকারে স্বর্ণালী এবং তাঁর আরও দুই আত্মীয়ের মিলিয়ে প্রায় ৪২ লাখ টাকার গয়না ছিল।

আরও পড়ুন: চাবি গ্রাহকের কাছে, গড়িয়াহাটে লকার থেকে উধাও ৩০০ গ্রাম সোনার গয়না!

এর পরের অভিযোগটি উঠেছে গড়িয়াহাটের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখার বিরুদ্ধে। ব্রড স্ট্রিটের বাসিন্দা চিকিৎসক ভীম মাইতি এবং তাঁর স্ত্রী রেবার অভিযোগ, ওই শাখার লকার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকার গয়না!

আগের দু’টি ক্ষেত্রে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যাঙ্ক কর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির জালিয়াতি দমন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক আধিকারিকদের দাবি, লকার থেকে গ্রাহকের উপস্থিতি ছাড়া কোনও জিনিস উধাও হওয়া অসম্ভব। তা হলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কি অভিযোগকারীরা ভুল অভিযোগ করছেন?

আরও পড়ুন: তদন্তে যাবে পুলিশ, অভিযোগকারী কেটে দিলেন বিমানের টিকিট!

একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘‘গ্রাহক এবং ব্যাঙ্কের মাস্টার কি একসঙ্গে না হলে লকার খোলা সম্ভব নয়।” স্বর্ণালী দেবীর প্রশ্ন, ‘‘ব্যাঙ্ক আমাকে আমার চাবি দেওয়ার সময় তো একটি নকল চাবি করিয়ে রাখতে পারে তো!’’ এই অভিযোগ মানতে নারাজ ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা উপদেষ্টা যিনি প্রাক্তন পুলিশ কর্তাও। তিনি বলেন, ‘‘লকার গ্রাহককে ভাড়া দেওয়ার সময়ে সিল অবস্থায় দু’টি চাবি গ্রাহকের সামনে দেওয়া হয়। সিল ভেঙে একটি দেওয়া হয় গ্রাহককে। অন্যটি থাকে ব্যাঙ্কের কাছে।”

যদিও কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক এই ব্যাবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘যখন কোনও গ্রাহক লকার ছেড়ে দেন, তার পর সেই একই লকার বরাদ্দ করা হয় অন্য কোনও গ্রাহককে। নতুন গ্রাহককে পুরনো ওই লকার বরাদ্দ করার সময় কি ব্যাঙ্ক লকারের তালা বদল করে? তা না করলে তো চাবি সত্যিই নকল হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।”

পুরনো লকার নতুন গ্রাহককে ভাড়া দেওয়ার সময়ে সেই লকারের তালা চাবি আদৌ বদল করা হয় কি না তা নিয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। তবে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক স্বীকার করে যে, তালা আদৌ বদল করা হয় না।

লকার রহস্য নিয়ে অন্ধকারে থাকা তদন্তকারীরা সব ক’টি ঘটনাতেই দু’টি মিল খুঁজে পেয়েছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গ্রাহকেরা পঞ্চাশোর্ধ। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই লকারের গ্রাহকেরা দীর্ঘ দিন পর ওই লকার খুলেছেন। আর সেখান থেকেই তদন্তকারীরা আরও একটি আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘হতে পারে লকারের গ্রাহকদের কাছ থেকে চাবি অন্য কেউ হাতিয়ে ব্যাঙ্কের কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে গয়না সরিয়েছে।”

তবে সেটাও কতটা সম্ভব? কারণ লকার খুলতে গেলে গ্রাহককে নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রারে সই করে লকারের ঘরে যেতে হয়। সেখানে গ্রাহকের বদলে অন্য কেউ গেলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

তবে পুলিশ কর্তারা স্বীকার করছেন, এটিএম-কাণ্ডের মতো লকার রহস্যও ক্রমশ একটা বড়সড় কেলেঙ্কারিতে পরিণত হচ্ছে।

এবং এখনও তদন্তাকারীদের হাতে কোনও সূত্র নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy