দুর্ঘটনার পর বিক্রমের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র
একটা দুর্ঘটনা। নিমেষে শেষ হয়ে গেল একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত। সঙ্গে তুলে দিয়ে গেল বেশ কয়েকটা প্রশ্ন।
গভীর রাত পর্যন্ত শুটিংয়ের পর, ভোররাত পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে ডিনার পার্টি ছিল। কে জানত, এটাই জীবনের শেষ রাত হতে যাচ্ছে সনিকার! শনিবার ভোরের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল জনপ্রিয় মডেল এবং অভিনেত্রী সনিকা সিংহ চৌহানের। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসছিল সাদা রঙের বিলাসবহুল গাড়িটি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁদিকের ফুটপাথে প্রথমে একটি গম্বুজে, তার পর একটি দোকানে ধাক্কা মেরে প্রচণ্ড গতিতেই পাক খেয়ে ঘুরে সেটি ধাক্কা মারে ডানদিকের ডিভাইডারে। পরপর প্রবল ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া সেই গাড়িটি থেকে বিক্রম ও সনিকাকে বের করে আনতে যথেষ্টই বেগ পেতে হয় স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: গাড়ি দুর্ঘটনায় মডেলের মৃত্যু, আহত অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়
গত মাসেই ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল গায়ক কালিকাপ্রসাদের। কয়েক মাস আগের গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তৃণমূল সাংসদ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক। কিছু দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অভিনেতা হিরণ। বাইক দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে গুরুতর চোট নিয়ে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি অভিনেতা রণদীপ বসু। বছর দেড়েক আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান আর এক জনপ্রিয় অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়। ফের একটি দুর্ঘটনা ছিনিয়ে নিল আর একটা তরতাজা প্রাণ। প্রচণ্ড গতিই কী এর জন্য দায়ী? নাকি রয়েছে অন্য কোনও কারণ? ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
যে ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল বিক্রমের গাড়ি
বিক্রমের বাবা বিজয় চট্টোপাধ্যায় জানান, গত কাল রাত আড়াইটে নাগাদ টালিগঞ্জ থেকে শুটিং শেষ করে বেরিয়েছিলেন বিক্রম। বন্ধুদের সঙ্গে ডিনার করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। শুটিং ফ্লোর থেকেই এজেসি বসু রোডের একটি পাঁচতারা হোটেলে ডিনারে চলে যান। ভোররাতে সেখান থেকে বেরিয়ে হেস্টিংসে সনিকাকে তাঁর বাড়িতে ড্রপ করতে যাচ্ছিলেন। তার পর কসবায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসার কথা ছিল বিক্রমের। বিক্রম নিজেই ছিলেন চালকের আসনে। তাঁর পাশের আসনে ছিলেন বান্ধবী সনিকা সিংহ চৌহান।
আরও পড়ুন: গতিই আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে, বলেছিলেন সনিকা
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র
টালিগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার সময় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি। প্রচণ্ড গতির জন্যই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল গাড়িটি। অভিনেতা সড়ক বিধি যথাযথ ভাবে মেনেছিলেন কিনা, তিনি মদ্যপ ছিলেন কী না— সে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রশ্ন উঠেছে গাড়ির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও। পুলিশ সূত্রে খবর, যে সংস্থার তৈরি, যে মানের গাড়ি চালাচ্ছিলেন বিক্রম, সেটির সুরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত মানের। পাঁচটি এয়ার ব্যাগ রয়েছে এতে। কিন্তু বিপুল গতিতে ধাক্কা খাওয়ার পরেও কেন খুলল না এয়ার ব্যাগগুলি, সে বিষয়েও ধোঁয়াশা কাটছে না। তা হলে কী গাড়ির কোনও ত্রুটি ছিল? সে বিষয়ে কি অবগত ছিলেন অভিনেতা? দুর্ঘটনার পর থেকেই উঠছে এই প্রশ্নগুলো।
হাসপাতালে বিক্রমের চিকিৎসক দীপাঞ্জন ভদ্র জানিয়েছেন, অভিনেতার অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। তাঁর মাথায় পাঁচটা সেলাই পড়েছে। তাঁর শিড়দাঁড়ায় ও কোমরে চোট রয়েছে। চোটের গভীরতা পরখ করতে শীঘ্রই শিড়দাঁড়ার সিটি স্ক্যান করা হবে। তবে বিক্রম এখনও ট্রমার মধ্যে রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন দীপাঞ্জনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy