রবিবার পাকুড়িয়ার কার্যালয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ভোটের ফলের দিকে নজর ছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
দলবদল করেও তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। প্রচারে তো বটেই, রবিবার ফল ঘোষণার আগে পর্যন্তও মনে করেছিলেন, এলাকার ভোটারদের মন বুঝতে তাঁর ভুল হচ্ছে না। কিন্তু তাঁর সেই ‘অনুমান’ যে বুমেরাং হয়ে তাঁর দিকেই ফিরে আসবে, সেটা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি পদ্ম শিবিরের রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬-য় রাজ্যে ‘ফার্স্ট বয়’ পরাজিত হলেন কেন, তা নিয়ে যেমন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন রয়েছে, তেমনই সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে কৌতুহল। আর তাই রবিবার তো ছিলই, এমনকি সোমবার দিনভরও ডোমজুড়ের চায়ের দোকান থেকে পাড়ার মোড়ের জটলা— সব জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাজীবই।
এই ময়না-তদন্তে একটা জিনিস খুব স্পষ্ট ভাবে উঠে এসেছে। তা হল, ডোমজুড়ের প্রায় ৩৪-৩৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট পুরোপুরি ভাবে থেকেছে জোড়া ফুলের দিকে। আর সেটাই মূলত প্রাক্তন বিধায়ক তথা দল বদলে পদ্ম শিবিরে যাওয়া রাজীবকে ডোমজুড়ের মাঠে পরাজিত করেছে। যদিও ১০ বছরের বিধায়ক রাজীব ভেবেছিলেন, সংখ্যালঘু-ভোটের কিছুটা অংশ তাঁর দিকে আসবে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সেটা না হওয়ার মতো একটা হাওয়া কিন্তু ভোটের আগেই তৈরি হয়েছিল বাঁকড়া-১,২, ৩ এবং সলপ-২ এলাকায়। তবুও কিছুটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন রাজীব। এ বার থাকল হিন্দু ভোট। সেখানে কিছু যেমন ব্যক্তি রাজীবের ঝুলিতে গিয়েছে, তেমনি আবার বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে রাখতে জোড়া ফুলের কল্যাণ ঘোষের দিকেও গিয়েছে কিছু ভোট।
ডোমজুড় বিধানসভায় প্রায় ৪০০টির মতো বুথ রয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু বুথে রাজীব এগিয়ে থেকেছেন। কিন্তু সেখানে যখনই সংখ্যালঘু ভোট ঢুকেছে, তখন লিডের কয়েক গুণ বেশি মাইনাস হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, বালি-জগাছা ব্লকের আটটি অঞ্চলের মধ্যে পাঁচটিতে রাজীব এগিয়ে ছিলেন। এ ছাড়াও নারনা, সলপ-১ সহ আরও কয়েকটিতে তিনি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সলপ-১ বাদ দিলে বাকি জায়গায় এগিয়ে থাকার ব্যবধান ছিল ৫০০-১৫০০ ভোট। প্রতিপক্ষ কল্যাণের বাড়ি সলপ-১ এলাকায়। সেখানে প্রায় সাড়ে তিন-চার হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন রাজীব।
কিন্তু মার্কশিটে দেখা যাচ্ছে, ডোমজুড়ের সাপ-লুডোর খেলায় রাজীব পিছিয়ে গিয়েছেন মূলত বাঁকড়ার তিনটি অঞ্চল, যা পুরো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এবং সলপ-২ এ, যেখানে হিন্দু ও সংখ্যালঘু উভয় ভোটারই রয়েছেন। এ ছাড়াও কাটাকুটির খেলায় নিশ্চিন্দার মতো আরও কিছু জায়গায় পিছিয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক। ফলাফলের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বাঁকড়া-২ অঞ্চলে প্রায় ১৯ হাজার, বাঁকড়া-১ এ প্রায় সাড়ে ৯ হাজার, বাঁকড়া-৩ অঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার, সলপ-২ অঞ্চলে প্রায় ৩ হাজার এবং নিশ্চিন্দায় আড়াই হাজার— এই পাঁচটি অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ৪০,৫০০ ভোটে পিছিয়ে গিয়েছেন রাজীব। এর সঙ্গেই যোগ হয়েছে আরও কিছু এলাকার ভোট। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ হাজার ভোটে রাজীবকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন কল্যাণ।
১০ বছর ধরে যে জায়গা তাঁর চেনা, সেখানকার নাড়ির গতি কেন বুঝতে পারলেন না? রাজীব বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে এখন আর আলোচনা চাইছি না। আমার কাছে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমান। তাই মানুষের রায় মাথা পেতে নিয়েছি। বিগত ১০ বছর ডোমজুড়ের মানুষের জন্য কাজের সুযোগ পেয়েছি। সে জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। ডোমজুড়ের জয়ী প্রার্থীকেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’ যদিও কল্যাণের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট বিকাশ দে বলেন, ‘‘ডোমজুড়ের মানুষের সঙ্গে উনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সেই কারণে কিছু জায়গায় উনি এগিয়ে থাকলেও, সেই ভোটের সংখ্যা অনেক কম। সেখানে প্রত্যাখ্যানই বেশি। মানুষ নিঃশব্দে ভোট বাক্সে সেই উত্তর দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy