ফাইল চিত্র।
প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে কয়লাঘাট কমপ্লেক্সের খোলনলচে বদলাচ্ছে রেল। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ কয়লাঘাট ভবনের পাশাপাশি ওল্ড কয়লাঘাট ভবনেরও অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবে তারা।
গত ৮ মার্চ অগ্নিকাণ্ডের সময়ে কয়লাঘাট কমপ্লেক্সের সঙ্কীর্ণ পরিসরের জন্য আগুন নেভাতে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল দমকলকে। স্ট্র্যান্ড রোডের ওই অংশে রাস্তার গাছ ছাড়াও ভিতরের সঙ্কীর্ণ জায়গার জন্য যান্ত্রিক মইয়ের জায়গা বার করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল দমকলকর্মীদের। সে কথা মাথায় রেখেই এ বার ওই নতুন ও পুরনো ভবনের মাঝের সব নির্মাণ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ওই অংশ উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। খুব দ্রুত এই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাছ বা অন্য কোনও বাধার কারণে বহুতলের কাছাকাছি পৌঁছতে অসুবিধা হতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখলেই তা দ্রুত সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপত্তি থেকে বেরিয়ে আসার পথ নির্দিষ্ট করার কাজ শুরু হয়েছে দু’টি ভবনেই। প্রত্যেক তলের সংখ্যা এবং সেখানকার পথ-নির্দেশ চিহ্নিত করা ছাড়াও কোন অংশ দিয়ে কর্মীরা নিরাপদে বেরোতে পারবেন, তা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বহুতলের সব ক’টি সিঁড়িকে ছাদ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাতে ছাদে ওঠার পথ খোলা থাকে সেই জন্যই ওই ব্যবস্থা। পাশাপাশি, ছাদ ব্যবহার করে দমকলকর্মীরা প্রয়োজনে বহুতলের উপরের তলায় তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারবেন। বছর দশেক আগে পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডে ওই ভবনে আটকে পড়া অনেকেই ছাদে ওঠার পথ না পেয়ে কার্যত ঝলসে মারা গিয়েছিলেন। সেই সময়ে ওই ভবনের ছাদে ওঠার পথের কোল্যাপসিবল গেট বন্ধ থাকায় কেউ সেখানে পৌঁছতে পারেননি। সেই পরিস্থিতি এড়াতেই বহুতলের সব সিঁড়ি ছাদ পর্যন্ত প্রসারিত করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। সিঁড়ির প্রতি তলে এমন প্রশস্ত ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যা বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করে ভিতরে আটকে পড়া কাউকে উদ্ধার করা যাবে।
গত ৮ মার্চের ঘটনায় হাইড্রান্টে জল না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন দমকলকর্মীরা। এ বার সব ক’টি হাইড্রান্টে জলের ব্যবস্থা থাকছে। এ জন্য অতিরিক্ত পাম্প বসানো হচ্ছে। ভবনের যে কোনও অংশে আগুন লাগলে মিনিটে ৯০০ লিটার জল পাওয়ার উপযোগী সংযোগ তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে ডিজ়েল পাম্প ব্যবহার করার ব্যবস্থা থাকবে। ফায়ার অ্যালার্ম ছাড়াও বসানো হচ্ছে স্প্রিঙ্কলার। নিউ কয়লাঘাট ভবনের চারতলা পর্যন্ত আপাতত ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে দমকল। ওই অংশে স্প্রিঙ্কলার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশে এখনও ঢুকতে পারছেন না কর্মীরা।
কয়লাঘাটের অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে বিদ্যুতের আকস্মিক লোড বৃদ্ধির বিষয়টিও উঠে এসেছিল। অনেক সময়েই শর্ট সার্কিটের পরে লোড বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছিল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মতো বৈদ্যুতিক সামগ্রী যাতে বিপত্তি বাড়িয়ে না তোলে, সে জন্য স্মোক অ্যালার্ম ছাড়া অন্য স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। যার সাহায্যে সমস্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সংযোগ আপনা থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
রেলের এক আধিকারিক বলেন, “আগুনের মতো বিপর্যয় মোকাবিলায় কোনও খামতি না রাখার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী। এ জন্য কোন ফাঁক (জিরো টলারেন্স) না রেখে যাবতীয় পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।”
ওই অগ্নিকাণ্ডের ফলে ১৪ তলা নিউ কয়লাঘাট ভবনের উপরের দু’টি তল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত, প্রথম ধাপে ওই ভবনের প্রথম ছ’টি তলে (১ থেকে ৬) যাবতীয় প্রস্তুতি সারতে চায় রেল। ধাপে ধাপে উপরের তলগুলিতে কাজ শেষ হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন কর্তৃপক্ষ।
অগ্নি-সুরক্ষার প্রস্তুতি ছাড়াও ওই দুই ভবনের সব কর্মীদের সেই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাউসকিপিং বা প্যান্ট্রিতে যে ঠিকাকর্মীরা কাজ করেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের নির্দেশও ইতিমধ্যেই দিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy