উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। নিজস্ব চিত্র।
দেশভাগের ইতিহাসকে পাথেয় করে ৭৫-এ পা নাকতলা হাই স্কুলের। বেসরকারি স্কুলের ইঁদুর দৌড়ে ইংরেজি মাধ্যম চালুর ভাবনার পাশাপাশি স্কুলের সুনাম এবং পড়ুয়াদের ধরে রাখতে প্রাক্তনীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজের অঙ্গীকারও করেছে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান।
প্ল্যাটিনাম জুবিলি বর্ষে বছরভর একাধিক কর্মসূচির পাশাপাশি স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হচ্ছে বিনামূল্যের হেলথ ক্যাম্প। এই স্বাস্থ্য শিবিরে স্কুলের ছাত্র, প্রাক্তনী, অভিভাবকদের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করতে পারবেন এলাকাবাসীও। একইসঙ্গে রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হবে স্কুলের তরফে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অতীন দাস বলেন, "বর্তমানে সরকার পোষিত স্কুলে যেখানে ছাত্র সংখ্যা কমছে, সেখানে আমরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সমাজের প্রতি আরও দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তুলতে।"
দেশভাগের সময়ে বহু বাস্তুহারা মানুষের ঠাঁই হয় নাকতলা-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সেই উদ্বাস্তু পরিবারগুলির চেষ্টাতেই ১৯৫১ সালে নাকতলা হাই স্কুলের জন্ম। প্রথমে দরমার বেড়া দেওয়া একচালা ঘরে গুটি কয়েক ছাত্রকে নিয়ে শুরু হয়েছিল পড়াশোনা। সাড়ে সাত দশকের পথচলা পেরিয়ে এখন সেখানেই রয়েছে পাকা স্কুলবাড়ি, খেলার মাঠ। গবেষণাগার থেকে কম্পিউটার ল্যাব, জিমন্যাশিয়াম-সহ নানা অত্যাধুনিক পরিকাঠামো।
স্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষক ভূদেব মজুমদার বলেন, “আমাদের ছাত্ররা প্রতি বছরই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে দারুণ ফল করে। পাশাপাশি, তাদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য খেলাধুলো, গান, ক্যুইজ, নাটক-সহ বিভিন্ন উপায়ে সংস্কৃতি চর্চার উপরেও জোর দিই আমরা।”
বাঙালির গর্ব ও আবেগের অন্যতম পরিসর ফুটবল। তাতেই ময়দান কাঁপানো ‘ভারতের মারাদোনা’ কৃশানু দে থেকে অবনী আইচ, রতন দত্তের বিশিষ্ট ফুটবলারেরা এই স্কুলেরই প্রাক্তনী। শুধু খেলার জগতের মহারথীরা নন, চিকিৎসা জগতের নামজাদা ধন্বন্তরিরাও রয়েছেন প্রাক্তনী তালিকায়। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক শুভানন রায়। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক অভিনয় জগতের পরিচিত নাম রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যরাও রয়েছেন তালিকায়।
সব বয়সের ছাত্র, প্রাক্তনী, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী ও অভিভাবকদের নিয়ে এলাকায় এক সুদীর্ঘ শোভাযাত্রায় পা মিলিয়ে স্কুলের ৭৫ বছর উদযাপন শুরু হয়েছে গত ১৬ জানুয়ারি। চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। উদযাপনে নানা ভাবে শামিল স্কুলের প্রাক্তনী, অভিভাবক, স্কুলের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। যার মধ্যে বিশেষ ভাবে সক্রিয় প্রাক্তনীদের সংসদ। বর্তমানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৮০০-রও বেশি। তাদের জন্য প্রাক্তনীদের উদ্যোগেই রং করা হয়েছে স্কুলবাড়ি, তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক শৌচাগার এবং নাটকের গ্রুপ।
স্কুলে বিনামূল্যের স্বাস্থ্য শিবির চলবে ১৮ তারিখ পর্যন্ত। ১৯ তারিখ সেই রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে মানুষের হাতে। এই রিপোর্ট দেখতে সাহায্য করবেন স্কুলের প্রাক্তনী প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকরা। সাহায্য করবে স্থানীয় একটি বেসরকারি ল্যাবও। একই সঙ্গে ওই দিন আয়োজিত হবে রক্তদান শিবিরও। স্কুলের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্বর্ধনা প্রদান করা হবে সন্তোষ ট্রফি বিজেতা বাংলার কোচ সঞ্জয় সেনকে । স্কুলের প্রাক্তনী সংসদের সেক্রেটারি সোমেন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য ওষুধ কিনে দেওয়ারও চেষ্টা করছি।”
প্ল্যাটিনাম জুবিলি বর্ষ পালনের প্রথম দিনে প্রভাতফেরিতে প্রধান অতিথি ছিলেন পবিত্র সরকার। এর পরে স্কুলের মূল মঞ্চে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শামিল ছিলেন ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসের ডিরেক্টর তনুশ্রী সাহা দাশগুপ্ত, সঙ্গীতশিল্পী সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, স্কুলের সভাপতি তথা অঞ্চলের পৌরাপিতা প্রসেনজিৎ দাস-সহ প্রমুখ। বিদ্যালয়ের বার্ষিক পত্রিকা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশের জন্য উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা চিকিৎসক নবকুমার বসু। পাশাপাশি, চার দিন ধরে স্কুল প্রাঙ্গণেই অভিভাবকেরা আয়োজন করেছেন খাদ্য মেলা এবং হস্তশিল্প মেলা। স্কুলের ক্লাসঘরে চলছে বইমেলাও। এই ক’দিন বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্ররাও নাটক, গান, আবৃত্তি-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy