গার্ডেনরিচ নিয়ে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন নওশাদ সিদ্দিকি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় কলকাতা পুরসভা এবং প্রশাসনকেই দায় নিতে হবে বলে দাবি জানালেন নওশাদ সিদ্দিকি। মঙ্গলবার সকালে গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনাস্থলে হাজির হন আইএসএফ নেতা। সেখানেই তিনি প্রশ্ন তোলেন শহরের বুকে জলাশয় বুজিয়ে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে। তাঁর যুক্তি, এই ধরনের বেআইনি কাজে শুধু একা প্রোমোটারকে দায়ী করে তাঁকে জবাই করলে চলবে না। আরও যাঁরা এই ধরনের বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত থাকেন, তাঁদেরকেও গ্রেফতার করতে হবে। নওশাদের দাবি, ‘‘তাতে যদি কোনও বড় নাম উঠে আসে, সেটা দেখলে চলবে না। যাঁরা যাঁরা দায়ী, প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে।’’
রবিবার গভীর রাতে গার্ডেনরিচে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে। সেই বহুতলের ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বহুতল সংলগ্ন কিছু অস্থায়ী বাড়ি বা ঝুপড়ির বাসিন্দাদের। আহত হন বহু। অনেককেই উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও মৃত্যু হয় কয়েক জনের। মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ন’জনের মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায়। অন্য দিকে, এই ঘটনায় ওই বেআইনি বহুতলের এক প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম ওরফে ওয়াসিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে সোমবার। এই পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবারই গার্ডেনরিচে যান আইএসএফ নেতা নওশাদও। সকালে সেখানে পৌঁছে প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানান তিনি। যদিও তৃণমূল জানিয়েছে, আইএসএফ নেতার সব দাবিই অবান্তর।
নওশাদ যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন, সেগুলি হল—
১) সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে, তা আরও দ্রুত গতিতে হতে হবে।
২) পুকুর বুজিয়ে এবং জলাশয় বুজিয়ে কী ভাবে বেআইনি ভাবে বহুতল বানানো হল, তার দায়ভার কলকাতা পুরসভা এবং প্রশাসনকে নিতে হবে।
৩) জনরোষকে চাপা দিতে শুধু প্রোমোটারকে গ্রেফতার করিয়ে তাঁর উপর দোষ চাপিয়ে পিঠ বাঁচানো যাবে না। মানুষকে এ ভাবে ভুল বোঝানো যাবে না।
৪) যাঁরা এই অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে। তাঁদের মধ্যে যদি বড় কোনও নাম বেরিয়ে আসে, তবে তাঁকেও গ্রেফতার করতে হবে।
৫) যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাঁদের কোনও আত্মীয়-স্বজন মারা গিয়েছেন, তাদের অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, যত দিন না তাঁদের বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তাঁদের বাড়ি ভাড়া দিয়ে সরকারকে রাখতে হবে।
গার্ডেনরিচে দাঁড়িয়ে নওশাদ বলেন, ‘‘আমি এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষের কথা ভাবা আগে দরকার। আমি সেটাই করতে এসেছি।’’ যার জবাবে তৃণমূল এবং কলকাতা পুরসভার বক্তব্য, ‘‘ভোটের আগে এক গুচ্ছ অবান্তর দাবি তুলে রাজনীতি করলে চলবে না। প্রশাসনের যা করণীয়, তার প্রাথমিক কাজ ইতিমধ্যেই করা হয়েছে।’’
মঙ্গলবার কলকতা পুরসভার বরো ১৫-র চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল বলেছেন, ‘‘ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সারা রাত সেখানে থেকেছি। উদ্ধার কাজ করেছি। এমনকি, যাঁদের বাড়ি ভেঙে পড়েছে তাঁদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়েছি। তার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এসে আহতদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছেন। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তাঁদের বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও ঘোষণা করা হয়েছে। এখন অবান্তর এক গুচ্ছ দাবি তুলে রাজনীতি করার কোনও অর্থ হয় না।’’
এ ব্যাপারে বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে বড় নেতাদের যুক্ত থাকা এবং তাঁদের গ্রেফতারির যে দাবি তুলেছেন নওশাদ, সে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রঞ্জিত বলেছেন, ‘‘শুধু প্রোমোটারকে গ্রেফতারি নয়, যাঁরা এই বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ভূমিকা তদন্ত করে দেখাও হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy