প্রতিমা বরণের পরে সিঁদুর খেলা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
পঞ্জিকা মেনে পুজো শেষ হয়ে গিয়েছে শনিবার। যদিও উৎসব-আনন্দ, ঘোরাঘুরিতে এখনও ছেদ পড়েনি। দিনভর বিভিন্ন মণ্ডপে সিঁদুর খেলা, গঙ্গাপাড়ে বিসর্জনের ভিড়ের পাশাপাশি রবিবার, একাদশীতে সন্ধ্যা নামতেই চলল শেষ লগ্নে বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে প্রতিমা দর্শন। কেউ সকাল সকাল পাড়ার পুজোর বিসর্জন-পর্ব শেষ করে বিকেলে বেরোলেন মণ্ডপ দর্শনে, কেউ আবার ঘুরে দেখলেন একটু রাত করে। যদিও উৎসবের শেষ বেলায় ধর্মতলায় জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে বিষাদের ছবির বদল হল না এ দিনও।
পঞ্জিকা মেনে শুক্রবার একই সঙ্গে ছিল অষ্টমী-নবমী। ফলে শনিবার রীতি মেনে দশমীর পুজো শেষ হতেই গঙ্গার ঘাটে শুরু হয়েছিল বিসর্জনের তোড়জোড়। মূলত বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় ওই দিন। এর পরে রবিবার সকাল থেকে কঠোর নিরাপত্তায় বাড়ির প্রতিমার পাশাপাশি বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন শুরু হয় গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে। গঙ্গার প্রতিটি ঘাট ঘিরে রেখে চলে বিসর্জন-পর্ব। সকাল থেকে পুরকর্মীরা গঙ্গার প্রতিটি ঘাটে উপস্থিত ছিলেন। বিসর্জনের পরে প্রতিমার কাঠামো তুলে সরিয়ে নিয়ে যেতে তৎপর ছিলেন তাঁরা। মাইক হাতে পুলিশকেও তৎপর থাকতে দেখা গিয়েছে। প্রতিমা নিয়ে ঘাটে আসা উদ্যোক্তাদের কাউকেই জলের কাছাকাছি যেতে দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যার দিকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বাবুঘাটে আসেন।
একে রবিবার, তায় একাদশী— দুইয়ের প্রভাবে সকালের দিকে শহরের রাস্তাঘাট ছিল কার্যত জনশূন্য। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। যদিও বিকেলের পর থেকে বদলাতে থাকে রাজপথের এই ছবিটা। রেড রোডের কার্নিভালে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া পুজোগুলির পাশাপাশি, শহরের একাধিক বড় বাজেটের পুজোর প্রতিমা এ দিনও বিসর্জন হয়নি। ফলে সন্ধে নামতেই সেই সব মণ্ডপে প্রতিমা-দর্শনের ভিড় শুরু হয়। উত্তরে বাগবাজার সর্বজনীন ও দক্ষিণের দেশপ্রিয় পার্ক পুজোমণ্ডপে এ দিন ছিল সিঁদুর খেলার ভিড়। সিঁদুর খেলেই অনেকে মণ্ডপ-দর্শনে বেরিয়ে পড়েন। যদিও শনিবার রাতের তুলনায় সেই ভিড় ছিল বেশ কিছুটা কম। তবু সেই সব মণ্ডপের বাইরে দর্শনার্থীরা দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়েছেন। উত্তর-দক্ষিণের একাধিক মণ্ডপের বাইরেই ছিল এই একই চিত্র।
এ দিন সন্ধ্যায় হাতিবাগানের মণ্ডপের সামনে লাইনে দাঁড়ানো, দক্ষিণ কলকাতার এক তরুণী বললেন, ‘‘কে বলবে আজ একাদশী? ভেবেছিলাম, ফাঁকায় ফাঁকায় দেখব। কিন্তু কোথায় কী!’’ পাশেই মুখে সিঁদুর মেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন দমদমের বাসিন্দা এক মহিলা। বললেন, ‘‘বাগবাজারে এসেছিলাম সিঁদুর খেলতে। ফেরার পথে ভাবলাম, আশেপাশের কয়েকটা ঠাকুর যদি দেখা যায়। ভেবেছিলাম, ফাঁকায় ফাঁকায় দেখতে পারব। কিন্তু তা আর হল কোথায়?’’ একই ছবি দক্ষিণের একাধিক পুজোতেও। রাসবিহারী সংলগ্ন এলাকায় এ দিনও সন্ধ্যার পর থেকে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ওই এলাকার কোন কোন মণ্ডপে এখনও প্রতিমা রয়েছে, তা জানতে অনেকেই আবার পুলিশককর্মীদের শরণাপন্ন হয়েছেন। রাসবিহারী মোড়ে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘কোথায় প্রতিমা আছে, আর কোথায় বিসর্জন হয়ে গিয়েছে— এই উত্তর দিতে দিতেই নাজেহাল হয়ে যাচ্ছি। গাড়ি সামলাব, না কি এই সব করব?’’
যদিও পুজো ও উৎসবের মধ্যেও ধর্মতলা চত্বরে ছিল ভিন্ন সুর। জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে এ দিন সকাল থেকেই চোখে পড়েছে আট থেকে আশির ভিড়। ডাক্তারদের পাশে থাকতে এবং তাঁদের আন্দোলনে সমর্থন জোগাতে কেউ দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে, কেউ আবার হুগলি থেকে এসেছেন। প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে ফেরার পথে আন্দোলনকারীদের স্লোগানের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার ঘাট থেকে ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে ধর্মতলায় নেমে পড়েছেন। বিসর্জনের পালা শেষ করে ধর্মতলায় এসেছিলেন বছর ৬০-এর অম্বিকা ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘এরা তো সবাই আমার ছেলেমেয়ের বয়সি। কত দিন ধরে দাবি আদায়ের জন্য এখানে পড়ে থাকবে? উৎসবের এত আলো ওদের এখানকার এই অন্ধকার দূর করতে পারল না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy