বৃহস্পতিবার লকডাউনের মাঝেই সুন্দরবন থেকে হাওড়ায় আসেন বিহারবাসী বানজারারা। পুলিশের তাড়া খেয়ে হাওড়া ব্রিজ ধরে কলকাতার পথে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা মধু বিক্রি করে আর রাস্তায় রাস্তায় খেলা দেখিয়েই সংসার চলে তাঁদের। প্রায় একশো জনের এমনই একটি যাযাবর দলকে বৃহস্পতিবার, লকডাউনের সকালে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে উচ্ছেদ করল হাওড়া সিটি পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, বৃষ্টির মধ্যে হাওড়া পুলিশের তাড়া খেয়ে ওই দলটি হাওড়া সেতু দিয়ে কলকাতার দিকে পালানোর চেষ্টা করলেও ঢুকতে পারেনি। শেষে সেতুর ফুটপাতেই কোনও রকমে ত্রিপল টাঙিয়ে কোনও ক্রমে মাথা গোঁজেন তাঁরা। পরে অবশ্য কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই দলটির জন্য শুকনো খাবার, জল এবং আস্তানার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করে রাস্তায় রাস্তায় খেলা দেখাতে দেখাতে ওই দলটি বুধবার রাতে হাওড়া স্টেশন চত্বরে এসেছিল। দলটির সকলেই বিহারের বাসিন্দা। হাওড়া থেকে বৃহস্পতিবার বিশেষ ট্রেন ধরে বিহারে ফেরার পরিকল্পনা ছিল ওই দলটির। কিন্তু লকডাউনের কারণে ট্রেন না পেয়ে হাওড়া সেতু সংলগ্ন এলাকাতেই আশ্রয় নেন তাঁরা। এ দিন সকালে সেখানেই রান্নাবান্নাও শুরু করেন ওই দলের মহিলা সদস্যেরা। তখনই স্থানীয় গোলাবাড়ি থানায় খবর গেলে সেখানে ছুটে আসে পুলিশ। দলটিকে ওই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু জায়গা ছেড়ে যেতে দলটি গড়িমসি করলে হাওড়া সিটি পুলিশ তাঁদের তাড়া করে বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে মহিলা, শিশু-সহ দলের সকলে হাওড়া সেতুতে উঠে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সে সময়ে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই ভিজতে ভিজতে সকলে মিলে কলকাতার দিকে যান। কিন্তু সেখানেও প্রথমে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। শেষে কোথায় যাবেন ভেবে না পেয়ে সেতুর ফুটপাতেই ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নেন ওই দলের কিছু সদস্য। কয়েক জন আশ্রয় নেন পুলিশের ফাঁকা কিয়স্কের ভিতরেও। অনুভাদেবী নামে ওই দলের এক মহিলা সদস্য বলেন, ‘‘পুলিশ এ দিন আমাদের রান্না করা খাবার পর্যন্ত ফেলে দিয়েছে। বাচ্চাদের মুখে কিছু দিতে পারিনি।’’ শম্ভু নামে ওই দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে সুন্দরবন থেকে আনা মধু পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এই মধু বিক্রি করেই আমাদের পেট চলে।’’
আরও পড়ুন: ফোন-ঠিকানা নেই, ডালকলে খুনির খোঁজে হন্যে তদন্তকারীরা
এই ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পরে কলকাতা পুলিশ এসে হাওড়া সেতু থেকে দলটিকে সরিয়ে উত্তর বন্দর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি ফাঁকা গুদামে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
কিন্তু লকডাউনে আটকে পড়া অসহায় মানুষগুলিকে সাহায্য না করে কেন এ ভাবে উচ্ছেদ করল হাওড়া পুলিশ? হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘দলটি হাওড়ায় এ দিক সে দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। লকডাউনে ও ভাবে ঘোরা যায় না। তাই তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও ভাবে তাড়া করা হয়নি। এর পরে দলটি হাওড়া সেতুর ফুটপাতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তারা কোথায় গিয়েছে তা জানা নেই।’’
আরও পড়ুন: গণেশ পুজোর অনুমতি দিল না পুলিশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy