স্বামীর সঙ্গে নিজের বাড়িতে তপতী। রবিবার, বাগুইআটিতে। নিজস্ব চিত্র
ছ’মাস আগে পথ দুর্ঘটনায় নিজের ডান পা হারিয়েও লড়াইয়ে জিতেছেন পুলিশ সার্জেন্ট। কৃত্রিম পা দিয়েই হাঁটছেন, সিঁড়ি ভাঙছেন, মোটরবাইক চালাচ্ছেন তিনি। এ দিকে, চার মাস আগে নিজের ডান হাত হারিয়ে এখন অনেকটাই ব্রাত্য বাগুইআটির গৃহবধূ। তবে হাল ছাড়েননি তিনিও। এখনও স্বপ্ন দেখছেন, কৃত্রিম হাতকে সম্বল করে কবে বাড়ির হেঁসেল সামলাবেন তিনি। কিন্তু মনের জোর থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অত্যাধুনিক মানের কৃত্রিম হাত জুড়তে মোটা টাকা দরকার। সেই অর্থের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে রায় পরিবার।
গত ৬ আগস্ট ভোরের কথা বলতে বলতেই চোখ ছলছল করে উঠল বাগুইআটির গৃহবধূ তপতী রায়ের। এক আত্মীয়কে দাহ করে আত্মীয়দের সঙ্গে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন তপতীদেবী। বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় শোভাবাজারের কাছে তাঁর হাত থেঁতলে যায়। ঘটনাস্থলেই রাস্তায় ছিটকে প়ড়ে তাঁর ডান হাত। পরে পুলিশ ডান হাতের কাটা অংশ-সহ তপতীদেবীকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অনেক চেষ্টা করেও চিকিৎসকেরা তাঁর ডান হাতটি জুড়তে পারেননি। প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। বর্তমানে তিনি বাগুইআটির জ্যাংড়ার সুকান্তপল্লির বাড়িতে থাকলেও কোনও কাজ করতে পারেন না। বাঁ হাতকে সম্বল করেই নিজের কাজকর্ম কোনও রকমে সারেন। বাড়িতে অচেনা-অজানা কেউ এলে লজ্জা-সঙ্কোচে নিজের ডান হাতটা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখেন তপতীদেবী।
অথচ ১৯৯৭ সালে সঞ্জিত রায়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরে বাগুইআটির জ্যাংড়ার সুকান্তপল্লির রায় পরিবারের ভোল বদলে ফেলেছিলেন এই বাড়ির বড় বৌ। তপতীর বৃদ্ধা শাশুড়ি জ্যোৎস্না রায় বলছিলেন, ‘‘বৌমার দুর্ঘটনার পরে আমরা ভেঙে পড়েছি। ওর বিয়ে হওয়ার পর থেকে খুব কমই আমাকে রান্নাঘরে যেতে হয়েছে। হেঁসেলের দায়িত্ব একার হাতে সামলাত ও।’’ স্বামী সঞ্জিত পেশায় রাজমিস্ত্রী। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন তাঁরা। মেয়ে সুপর্ণা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী, ছেলে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। তপতীর কথায়, ‘‘আমার খুব ইচ্ছা, ফের হেঁসেলের সব দায়িত্ব সামলাব। এখন ছোট জা, শাশুড়ি মিলে সব কাজ করছেন। আমি ওঁদের সঙ্গ দিতে চাই। কিন্তু ডান হাতের কথা মনে পড়লেই কষ্ট হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম হাত দিয়ে অনেকটা কাজ সামলানো যাবে। যা বিদেশ থেকে আনতে হবে। কিন্তু অত টাকা আমাদের কোথায়?’’ তপতীদেবীর স্বামী সঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার তথা স্থানীয় প্রশাসন আমার স্ত্রীর পাশে দাঁড়ালে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’’
মনের জোরের সঙ্গে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির কৃত্রিম হাতের সাহায্যে তপতীদেবী স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন বলে আশাবাদী অর্থোপেডিক সার্জেন চন্দ্রশেখর ধর। তাঁর কথায়, ‘‘বিদেশ থেকে আনা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কৃত্রিম হাত বেশ ব্যয়বহুল। কৃত্রিম অঙ্গের সাহায্যে অনেকেই অসাধ্য সাধন করেছেন। তপতীদেবীও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।’’ তপতীদেবীর কৃত্রিম হাত মিলতে সরকারি তরফে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তাঁর কথায়, ‘‘আমি পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ওই মহিলা যাতে কৃত্রিম হাত পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, তার জন্য যাবতীয় সাহায্য আমরা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy