শিয়ালদহ উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এবং কলকাতা পুরসভার মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। প্রায় বছর দু’য়েক আগে উল্টোডাঙা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরেই শিয়ালদহ উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং তা তদারকির ব্যাপারে মাথা চাড়া দিয়েছিল প্রশাসন।
কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই সেতুর মেরামতি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কলকাতা পুরসভাকেই এই উড়ালপুল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
অন্য দিকে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিয়ালদহ উড়ালপুল হস্তান্তরের বিষয়ে কেএমডিএ-র কোনও চিঠি এখনও পাননি। তা ছাড়াও এই উড়ালপুলের কাঠামোগত অবস্থা কী, তা পুরসভার জানা নেই। এই উড়ালপুলের পরিকল্পনাও পুরসভার নয়। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকাঠামোগত অবস্থা এবং তার মেরামতির জন্য বরাদ্দ কী হতে পারে, তা না জেনে এই উড়ালপুল নেওয়া পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে, কেএমডিএ উড়ালপুলের মেরামতি করে পুরসভাকে হস্তান্তর করতে পারে।
রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নায়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “শিয়ালদহ উড়ালপুল রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতির জন্য কলকাতা পুরসভাকেই এই উড়ালপুল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তা এখনও কার্যকর হয়নি। কলকাতা পুরসভার সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনায় বসব।”
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতা পুরসভা অনেক বারই এই সেতুর মেরামতি করেছে। কিন্তু উড়ালপুলের দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। এ বিষয়ে অনেক পরিকল্পনার প্রয়োজন। আমি এখনও কোনও চিঠি পাইনি।”
কেএমডিএ-র পক্ষে এই সেতু রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতিতে সমস্যা কোথায়?
কেএমডিএ নির্মিত এই উড়ালপুল মেরামতি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা সংশ্লিষ্ট সংস্থার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কেএমডিএ এই উড়ালপুল রক্ষাণাবেক্ষণ বা মেরামতির দায়িত্ব নিচ্ছে না কেন?
কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, আইন অনুযায়ী কেএমডিএ সংস্থা পরিষেবা সংক্রান্ত যে সম্পত্তি নির্মাণ করবে, তা সম্পন্ন হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে হস্তান্তর করার কথা। সেই কারণে মেরামতি বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেএমডিএ বাজেটে কোনও অর্থ বরাদ্দ করে না। ফলে কেএমডিএ-র পক্ষে এই উড়ালপুল রক্ষণাবেক্ষণ করা কার্যত সম্ভব নয়।
আটের দশকের প্রথম দিকে মধ্য কলকাতায় যানজট এড়াতেই এই উড়ালপুল নির্মাণ করা হয়। কেএমডিএ এই সেতু নির্মাণ করে। এই সেতুর নামকরণ হয় ‘বিদ্যাপতি সেতু’। কেএমডিএ এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করে। পুরসভার অভিযোগ, কেএমডিএ সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বহু সময়ে কলকাতা পুরসভাকেই এই কাজ করতে হয়।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, কিছু দিন আগেই মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে এই উড়ালপুলের বেশ কয়েকটি রেলিংও ভেঙে গিয়েছিল। ফলে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, পুরসভাকেই বাধ্য হয়ে এই রেলিং সারাতে হয়। এ ছাড়াও এই উড়ালপুলের কিছু কিছু জায়গায় নিকাশির পাইপ ভেঙে গিয়েছিল। ফলে বৃষ্টিতে সেতু থেকে জল নীচে পথচারিদের গায়ে পড়ত। কেএমডিএ এই কাজ না করায় পুরসভাকেই বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হয়েছিল। উড়ালপুলে আলোর সমস্যাও হয়েছিল। পুরসভা সেগুলিও ঠিক করেছে। উড়ালপুলের রাস্তা পুরসভা এমনিতেই দেখভাল করে বলেও দাবি। অন্য দিকে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, অর্থনৈতিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে উড়ালপুল হস্তান্তর না হওয়ায় কেএমডিএ-ই এই উড়ালপুলের কাঠামো এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলি রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা, কেএমডিএ এবং কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধিরা এই উড়ালপুল সরজমিন পরীক্ষা করেন এবং এই সেতুতে পরিকাঠামোজনিত কিছু ত্রুটি আছে বলেও পুরসভা কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে জানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy