Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ছুটির বিকেলে ঢল নামল পুজোর বাজারে

রবিবাসরীয় বিকেলের পড়ন্ত বেলায় নিউ মার্কেটে বান্ধবীর হাত ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরছিলেন সৌম্য। পিছন থেকে লোকজন এমন গুঁতো মারল, যে দু’জন দু’দিকে ছিটকে গেলেন। কিন্তু কেনাকাটার আনন্দে সৌম্য সেটাও হজম করে নিলেন। কারণ বান্ধবীর আবদার মেটানোর জন্য একটা ‘অলিভ’ রঙের জিন্স কিনতেই হবে। চাকরি পাওয়ার পর এটাই হবে বান্ধবীকে দেওয়া তাঁর পুজোর প্রথম উপহার।

জনজোয়ার। রবিবার, গড়িয়াহাট মার্কেটে।  নিজস্ব চিত্র

জনজোয়ার। রবিবার, গড়িয়াহাট মার্কেটে। নিজস্ব চিত্র

বিদীপ্তা বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২১
Share: Save:

রবিবাসরীয় বিকেলের পড়ন্ত বেলায় নিউ মার্কেটে বান্ধবীর হাত ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরছিলেন সৌম্য। পিছন থেকে লোকজন এমন গুঁতো মারল, যে দু’জন দু’দিকে ছিটকে গেলেন। কিন্তু কেনাকাটার আনন্দে সৌম্য সেটাও হজম করে নিলেন। কারণ বান্ধবীর আবদার মেটানোর জন্য একটা ‘অলিভ’ রঙের জিন্স কিনতেই হবে। চাকরি পাওয়ার পর এটাই হবে বান্ধবীকে দেওয়া তাঁর পুজোর প্রথম উপহার।

আবার উত্তরপাড়া থেকে স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে গড়িয়াহাট মার্কেটে ঢুকেছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী রাতুল দত্ত। বড় মেয়ের বায়না এ বছর পুজোয় পালাজো কিনে দিতেই হবে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও ঠিক মনের মতো পালাজো মিলল না। ফলে সপরিবার ট্যাক্সি ধরলেন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে যাওয়ার জন্য।

শুধু সৌম্য কিংবা রাতুল নন। আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে ছুটির দিনে ভিড় ঠেলতেও বিন্দুমাত্র বিরক্তির চিহ্ন দেখা গেল না ক্রেতাদের চোখেমুখে। পুজোর আমেজের ঢাকে কাঠি যে পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই হইহই করে আনন্দে মাতার পালা। বলতে গেলে পুজোর দু’সপ্তাহ আগের রবিবারটিতে বিকিকিনির আসর ভরিয়ে রাখলেন সাত থেকে সত্তর বয়সীরা। গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, হাতিবাগান সব ক’টি বাজারের বড় বড় দোকানের পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানগুলিতেও তিলধারণের জায়গা নেই।

তবে এ দিন সকাল থেকে বাজারগুলিতে পসরা সাজিয়ে বসলেও, দোকানদারদের একাংশ বিক্রিবাটায় খুব একটা খুশি ছিলেন না। কারণ তাঁদের অনেকেরই মতে অন্য বছরের তুলনায় লোকজন কেমন যেন কম। আর যাঁরা আসছেনও, কেনাকাটা খুব একটা করছেন না। গড়িয়াহাটের এক দোকানদার জানালেন, এমনিতেই সারা বছর ধরেই মার্কেট কখনও ফাঁকা থাকে না। তবে অন্যান্য বছরে এমন একটি ছুটির দিনে যেমন ভিড় থাকার কথা, তা নেই। হাতিবাগানের দৃশ্যটাও কিছুটা এক। রাস্তায় ভিড় চোখে পড়লেও, হাতিবাগান মার্কেটের ভিতরে বেশিরভাগ দোকানেই ক্রেতা তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। তবে ভিড়টা বাড়তে শুরু করে বিকেলের পর থেকে। বিকেল চারটের পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মার্কেটে ঢোকা দায় হয়ে পড়ে। হাতিবাগানের এক দোকানদারের আশা, বিশ্বকর্মা পুজো থেকে ভিড়টা আরও বাড়বে। তখন সকাল থেকেই ভিড়ে হাঁটা যাবে না। যদিও গড়িয়াহাট আর হাতিবাগানের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি নিউ মার্কেটের। সকাল থেকেই সেখানের দোকানগুলিতে ভিড় উপচে পড়েছে। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি। ভিড়ের ঠেলায় নিউ মার্কেট লাগোয়া বেশ কিছু রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশকে।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, কেনাকাটার ঠেলায় দুর্ঘটনা রুখতে এমনিতেই নিউ মার্কেটের সামনের রাস্তায় যানচলাচল ধীরে থাকে। তার উপর রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভিড়ও বেড়েছে। ফলে বিকেলের পর থেকে লিন্ডসে স্ট্রিট, জওহরলাল নেহরু রোড-সহ বেশ কিছু রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বাট্রাম স্ট্রিটে বন্ধ করে দিতে হয় যান চলাচল। ভিড় সামলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের। তবে গড়িয়াহাট ও হাতিবাগান সংলগ্ন কোনও রাস্তা বন্ধ করার প্রয়োজন পড়েনি বলে জানা গিয়েছে। দুর্ঘটনা রুখতে অন্যান্য মার্কেট এলাকার কাছে গাড়ির গতি আস্তে রাখা হয়। আর যানজট এড়াতে প্রায় সকলেই মেট্রোকেই বেছে নেন। তাতে কামরায় উপচে পড়া ভিড় না থাকলেও, এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনে ওঠানামার সময় সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের।

বস্তুত, পুজোর আগে শহরের চেহারা বদলে যাওয়ার সঙ্গে বদল এসেছে নাগরিক মানসিকতাতেও। সারা বছর ধরেই শহরের হকারদের ফুটপাথ দখল, ট্রেনে, বাসে ভিড়, রাস্তার উপরে লাগানো হোর্ডিং-ব্যানার নিয়ে যারা বিরক্তিতে ফুঁসতে থাকেন, এই কটা দিন তারাও শিথিল করে দিয়েছেন নিজেদের চিন্তা ভাবনা। উল্টে তাঁদের কথায়, এগুলো ছাড়া পুজো পুজো আমেজটা ঠিক আসে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE