শ্যামল সাহা
ভেবেছিলেন, আর চোখে দেখতে পাবেন না। কারণ দৃষ্টিশক্তি বাঁচাতে যে ওষুধটি দরকার, তা ভীষণ দামি। কেনার ক্ষমতা নেই তাঁর।
কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে বোলপুরের এক ট্যাক্সিচালক পাশে পেয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। সরকারি তালিকাভুক্ত না-হওয়া সত্ত্বেও বাহান্ন বছরের শ্যামল সাহার দৃষ্টি বাঁচাতে নিয়মের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতর ৭৯ হাজার টাকা দামের ওষুধ ‘লোকাল পারচেজ’ (অর্থাৎ স্টোর থেকে নিজেরাই কিনেছে হাসপাতাল) করে দিয়েছে। এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বার এই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল শ্যামলবাবুকে। সেটির দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হল গত শনিবার। মাস তিনেক পরে তৃতীয় তথা শেষ ডোজ পাবেন শ্যামলবাবু।
এমনিতে এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে সব ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী রোগীদের নিখরচায় দেওয়ার কথা। সেই মতো ক্যানসার, ডায়াবিটিস থেকে শুরু করে অনেক রোগের অতি দামি ওষুধ রোগীরা বিনামূল্যে পান। কিন্তু সেগুলি সবই সরকারি তালিকাভুক্ত ওষুধ। তার বাইরে কোনও ওষুধ সরকারি চিকিৎসকদের লেখার কথা নয়। বিনামূল্যে সরকারের দেওয়ারও কথা নয়। সে দিক থেকে শ্যামলবাবুর ঘটনা ব্যতিক্রমী। এন আর এসের চক্ষু বিভাগের প্রধান সমীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অতি বিরল ‘কোরয়ডাল হিম্যানজিওমা’ নামে চোখের টিউমারে আক্রান্ত ওই রোগী। বিশ্বে মোট জনসংখ্যার মাত্র .০০০৩ শতাংশের এটি হয়। রেটিনার পিছনে কোরয়েড নামক অংশের রক্তনালিকায় হয় এই অসুখ। এর চিকিৎসা হল লেজার থেরাপি। তার জন্য এই দামি ওষুধের প্রয়োজন।’’
সমীরবাবু আরও বলেন, ‘‘শ্যামলবাবুর ডান চোখে এই রোগ হয়েছিল। চিকিৎসায় প্রথমে একটি বোর্ড গঠন করা হয়। তার সদস্যেরা দেখেন, রোগটি অতি বিরল। বাজারে এর ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু রোগীর সেই আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তাঁর পক্ষে সেটি কেনা সম্ভব ছিল না। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় এক জনের দৃষ্টি চলে যাবে, এটা মানতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে ‘লোকাল পারচেজ’ করে দামি ওই ওষুধটি কেনার অনুমতি চাওয়া হয়। তিনি অনুমতি দেন।’’ জানা গিয়েছে, এই ওষুধ প্রয়োগের জন্য বিশেষ একটি যন্ত্র লাগবে, যা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নেই। মুম্বই থেকে সেই যন্ত্রও এক দিনের জন্য আনানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আগে কখনও কোনও সরকারি হাসপাতালে এক জন চোখের রোগীর জন্য সরকারি তালিকার বাইরে থাকা এত দামি ওষুধ ‘লোকাল পারচেজ’ করা হয়নি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এটা করা হয়েছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সরকার বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার জন্য খরচ করছে। সেখানে কোনও একটি দামি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে দিলে যদি এক জন গরিব মানুষ উপকৃত হন, তা হলে সেটা করাই কাম্য।’’
গত শনিবার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ওই ওষুধ শ্যামলবাবুকে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত তিন দিন তাঁকে অন্ধকার ঘরে থাকতে হবে। তা হলেই ওষুধটি কাজ করবে। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘আমার পক্ষে কিছুতেই এই ওষুধ কেনা সম্ভব ছিল না। স্বাস্থ্য দফতর যে এ ভাবে পাশে দাঁড়াবে ভাবিনি।’’ উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য দফতর অতি সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিখরচায় হেপাটাইটিস-সি রোগের ওষুধ দেওয়া শুরু করেছে। ক্রমে সব মেডিক্যাল কলেজেই তা শুরু হবে।
যদিও স্বাস্থ্য দফতরে দরপত্রের মাধ্যমে ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করে যে সব ওষুধ সংস্থা, তাদের মুখে ভিন্ন সুর। ওই সংস্থাগুলির অভিযোগ, এক দিকে দফতর এত দামি ওষুধ নতুন ভাবে দেওয়া শুরু করছে, অন্য দিকে তাদের কয়েক লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। পরের পর ‘শ্যাডো ফান্ড’-এ ওষুধের বরাত দিচ্ছে দফতর। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার বক্তব্য, ‘‘এত মানুষকে নিখরচায় ওষুধ দেওয়া অন্য কোথাও হয় না। এটা অভূতপূর্ব। এই কাজ করতে গিয়ে পেপারওয়ার্কে কিছু সময় লাগতেই পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy