দখল: মুচিবাজারের ফুটপাত জুড়ে রয়েছে এমনই লোহার স্টল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
স্রেফ আশ্বাসই ভরসা! প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তি, মেয়র-ডেপুটি মেয়রের স্তরে নানা আলাপ-আলোচনার পরেও কলকাতার ফুটপাত চিত্র বদলায় না! একাধিক অগ্নিকাণ্ডের পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘‘ফুটপাত আটকে হকারদের স্টল বরদাস্ত করা হবে না।’’ অথচ তিনি মেয়র থাকাকালীনই উল্টোডাঙায় হকারদের জন্য পাকাপাকি ভাবে লোহার স্টল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
উত্তর কলকাতার মুচিবাজারে আবার লোহার হকার-স্টলের উপরে তৃণমূল নেত্রীর পাশাপাশি স্থানীয় বিধায়ক, কাউন্সিলর এবং বরো চেয়ারম্যানের ছবি লাগানো! প্রশ্ন করা হলে এক হকার বলেন, ‘‘তৃণমূল থেকে আমাদের স্টল দিয়েছে। দিদি, দাদাদের ছবি তো থাকবেই।’’ হাতিবাগানের অবস্থাও একই। ফুটপাত আটকে হকার বসা বন্ধ নিয়ে লাগাতার চর্চা চললেও সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আগে স্টলের উপরে প্লাস্টিক লাগানো থাকত। এখন তার বদলে কাপড় লাগানো হয়েছে। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্লাস্টিকের থেকে কাপড় কি কম দাহ্য? বিপদ আর কাটল কই? ফুটপাতই বা মানুষের হল কই?’’
গত ১৯ জানুয়ারি আগুন লাগে গড়িয়াহাট রোডের একটি বহুতলে। বেশ কয়েকটি হকার স্টল পুড়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নতুন করে শহরের ফুটপাতে হকারদের দাপট নিয়ে শোরগোল পড়ে। তার পরে প্রায় ১৫ দিন কেটে গেলেও গড়িয়াহাট ছাড়া শহরের হকার-চিত্র সে ভাবে বদলায়নি। এর মধ্যেই নয়া হকার নীতি প্রণয়ন নিয়ে জোর চর্চা চলছে পুর মহলে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেই বলেছেন, তিনি নয়া হকার নীতি প্রণয়নের পক্ষে। সেই নীতির খসড়ায় স্পষ্ট বলা আছে, ফুটপাতের দুই তৃতীয়াংশ পথচারীদের জন্য ছেড়ে রাখতে হবে। ফুটপাতে কোনও রকম ভাবে পাকাপাকি নির্মাণ না করারও কড়া নির্দেশ রয়েছে খসড়ায়।
যদিও এই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই উল্টোডাঙার ফুটপাত জুড়ে লোহার হকার স্টল বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ। স্টলগুলির নীচে চাকা লাগানো না থাকায় সেগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাই নেই। পরপর বসানো স্টলের দৌরাত্ম্যে ফুটপাতে জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ, পুলিশি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই ফুটপাত ধরেই সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি নগরী থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার লোক যাতায়াত করেন। শ্যামল কর্মকার নামে এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বলেন, ‘‘হকারদের দোষ দিই কী করে? যাঁরা স্টলগুলো এ ভাবে তৈরি করতে দিয়েছেন তাঁরাই দায়ী।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন থেকে স্টল করে দেওয়ার জন্য বলছিলাম। কাউন্সিলর দাদা বানিয়ে দিয়েছেন।’’ মেয়রের উল্টোপথে হেঁটে এ ভাবে স্টল? এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বলেন, ‘‘রাস্তা যথেষ্ট ফাঁকা আছে। লোহার ভাল স্টল করে না দিলে দু’দিনে ভেঙে যাবে!’’
মুচিবাজারে ব্যবসায়ীদের জন্য ফুটপাতের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই স্টল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নীল-সাদা রঙের স্টলগুলিতে তৃণমূল নেত্রী-সহ স্থানীয় বিধায়ক, কাউন্সিলর এবং পুরসভার বরো চেয়ারম্যানের ছবি লাগানো। স্থানীয় ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউত এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘স্টলগুলি কয়েক দিন আগে করা হয়েছে। নতুন হকার নীতির জন্য কি সেগুলি ভাঙা যায়? তবে মেয়র যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই করা হবে।’’
ফুটপাতে হকার-স্টল বরদাস্ত না করার কথা জানালেও ইতিমধ্যেই যে স্টলগুলি ফুটপাত আটকে রয়েছে, সেগুলি কবে ভাঙা হবে? মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে এর স্পষ্ট জবাব নেই। তিনি বলেন, ‘‘ও ভাবে টিনের শেড রাখা হবে না। দ্রুত ভেঙে ফেলা হবে।’’ কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারলেন না। অতীনবাবুর কথায়, ‘‘চাকা লাগানো হকার স্টল দেওয়া হয়ে গেলেই পুরনোগুলি ভাঙা হবে।’’
তত দিন ফুটপাতে হাঁটার যন্ত্রণা কি একই থাকবে? এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর নেই কারও কাছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy