একেই বোধহয় বলে ‘ঠেলার নাম বাবাজি’।
প্রথম রাউন্ডে লাক্সারি ট্যাক্সির কাছে হার মেনে এ বার তাদের দেখানো পথেই প্রতিযোগিতায় ফিরতে চাইছে শহরের সাধারণ ট্যাক্সি। আর ট্যাক্সি-উদ্ধারের সেই লড়াইয়ে ময়দানে নামছে খোদ রাজ্য সরকার।
ওলা, উবেরের মতো ‘ক্যাব’-এর দাপট কমাতে ও পরিষেবা আরও স্মার্ট করে তুলতে ‘অ্যাপ’ এবং ফোন কলের মাধ্যমে ট্যাক্সি জোগান দেওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সরকার। অন্য দিকে, ট্যাক্সি পাওয়ার নির্দিষ্ট ঠিকানা দিতে শহর জুড়ে একগুচ্ছ ট্যাক্সি-পার্কিংয়ের জায়গা তৈরির সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। তার সূচনা হতে চলেছে আগামী ১ সেপ্টেম্বর, পার্ক স্ট্রিটে। সেখানে প্রাইভেট গাড়ির পাশাপাশি ট্যাক্সিও নিখরচায় দাঁড় করানোর ব্যবস্থা থাকছে। এই দু’টি ব্যবস্থা চালু হলে প্রত্যাখ্যানও কমবে এবং প্রতিযোগিতায় ট্যাক্সি সেয়ানে-সেয়ানে লড়াইও দিতে পারবে বলে মনে করছে পরিবহণ দফতর।
কোথাও যেতে চাইলে সটান না বলে দেওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা, অভব্য আচরণ— হলুদ বা নীল-সাদা ট্যাক্সিচালকদের এমন দাদাগিরিতে অতিষ্ঠ হয়ে আম-শহরবাসী ভাল পরিষেবা পেতে ঝুঁকছেন ওলা, উবেরের মতো ক্যাবের দিকে। দ্রুত কমছে ট্যাক্সির রমরমা। পরিবহণ কর্তাদের এবং ট্যাক্সিমালিক ও চালক সংগঠনের দাবি, এর পিছনে ফাঁকা ট্যাক্সি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোই প্রধান কারণ। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ক্যাবের চালকদের যাত্রী খুঁজতে হয় না। যাত্রীরা তাঁদের খুঁজে নেন। ট্যাক্সির ক্ষেত্রে নিয়ম একেবারে উল্টো। তাঁদের যাত্রী খুঁজে নিতে হয়। সে জন্য বেশির ভাগ ট্যাক্সিচালককেই ফাঁকা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। আর তাই তাঁরা সব জায়গায় যেতে চান না। গেলেও বেশি ভাড়া চান। তা ছাড়া, শহরের বুকে তাদের দাঁড়িয়ে থাকার নির্দিষ্ট জায়গাও নেই। এ বার এই দুইয়েরই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
কী হবে সেই ব্যবস্থা?
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, দিল্লিতে ওলা, উবের-এর রমরমার পরে দিল্লি সরকার বেসরকারি সহায়তায় গড়ে তুলেছে ‘পুচা’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। যার মাধ্যমে অটো এবং ট্যাক্সি— দুই-ই বুকিং করতে পারেন আম-দিল্লিবাসী। এই ব্যবস্থা দেখভাল করে দিল্লি ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রানজিট সিস্টেম লিমিটেড (ডিআইএমটিএস) নামে পিপিপি মডেলের একটি সংস্থা। ওই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে দেখা করেছেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (২) সোমেন মিত্র। প্রাথমিক আলোচনার পরে ঠিক হয়েছে, ওই সংস্থাকে দিয়ে ট্যাক্সির স্মার্ট বুকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। তবে শুধু মোবাইল অ্যাপ নয়, ফোন কলের মাধ্যমেও ট্যাক্সি বুকিংয়ের সুযোগ থাকবে ওই ব্যবস্থায়। ওই পরিবহণ-কর্তার কথায়, ‘‘এ শহরে বেশিরভাগ মানুষই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন না। তাঁদের জন্যই ফোন কলের মাধ্যমে ট্যাক্সি বুকিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।’’
শহরের ১৪৩টি জায়গায় যে বিশেষ ধরনের পার্কিং প্লেস চালু হচ্ছে, সেখানে নিখরচায় প্রায় ১২০০ ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা হচ্ছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক মাস আগে বিষয়টি নজরে এনেছিলেন। এর পরেই প্রাইভেট গাড়ি পার্কিংয়ের ওই জায়গা আমরা তৈরি করেছি। গাড়ি পার্কিং করে মেশিন থেকে স্লিপ নিয়ে নিতে হবে। তার মাধ্যমেই সময় হিসেব করে ভাড়া দিতে হবে। কোনও রকম হয়রানি হলে অভিযোগ জানানোর সুযোগও থাকছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে পার্ক স্ট্রিটে ওই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।’’
মেয়র বলেন, ‘‘ট্যাক্সির দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা নেই বলেই ১৪৩টি পার্কিং লটে ১২০০ ট্যাক্সি দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি হচ্ছে। তবে কোনও ইউনিয়নের দাদাগিরি চলবে না। যে কেউ ট্যাক্সি এনে এখানে দাঁড় করতে পারবেন। কোনও ভাড়া দিতে হবে না।’’ দিল্লিতে ‘পুচা’র মাধ্যমে আম-শহরবাসী দেখতে পান, কোথায় কত পার্কিংয়ের জায়গা ফাঁকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সে রকম ব্যবস্থা হবে কি না, জানতে চাইলে মেয়রের উত্তর, ‘‘ঘোড়া হলে ছড়ির ব্যবস্থাও ঠিক হয়ে যাবে।’’
তবে এই দুই ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া ট্যাক্সি বাঁচবে কি? সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy