Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রশাসনের তথ্যভাণ্ডারে ঢুকবে ঝুপড়িও

এক নাবালিকাকে তাঁরই এক আত্মীয় ডেকে নিয়ে যায়। পরে একটি ঝুপড়িতে গিয়ে তার উপরে চলে যৌন নির্যাতন। ঘটনায় সেই আত্মীয় যেমন ধরা পড়েছে, তেমনই সন্দেশখালি থেকে একই ঘটনায় ধরা পড়েছে আর এক দুষ্কৃতী।

কাজল গুপ্ত
বিধাননগর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:২১
Share: Save:

ঘটনা ১) এক নাবালিকাকে তাঁরই এক আত্মীয় ডেকে নিয়ে যায়। পরে একটি ঝুপড়িতে গিয়ে তার উপরে চলে যৌন নির্যাতন। ঘটনায় সেই আত্মীয় যেমন ধরা পড়েছে, তেমনই সন্দেশখালি থেকে একই ঘটনায় ধরা পড়েছে আর এক দুষ্কৃতী।

ঘটনা ২) এক ছিনতাইবাজকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল পুলিশ প্রশাসনের। সেই দুষ্কৃতী একটি ঝুপড়ি এলাকায় ঘর ভাড়া করে থাকছিল, যা প্রশাসনের নজরদারির বাইরে ছিল।

ঘটনা ৩) বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিচারক-পরিচারিকা, কেয়ারটেকারদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। বাসিন্দারা পরিচারিকাদের কাছে সেই তথ্য চাইলেই তাঁরা কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন, কেননা তাঁদের অনেকেরই বৈধ কোনও নথি নেই।

ঘটনা ৪) জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই জল ধরে রাখাই দস্তুর ঝুপড়িগুলিতে। গত বছর তেমন বহু জায়গাতেই ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর খুঁজে পেয়েছিল পুর প্রশাসন।

এই খণ্ডচিত্রগুলি উদাহরণ মাত্র। সমস্যা ক্রমশই জটিল আকার নিচ্ছে পরিকল্পিত উপনগরী বিধাননগরে।

গোটা শহরে যত্রতত্র কয়েক হাজার ঝুপড়ি গড়ে উঠেছে। এঁদের অনেকেরই কাছে কোনও বৈধ অনুমতি নেই। বিধাননগরের ফাঁকা জায়গা পেলেই গজিয়ে উঠছে ঘুপচি ঘুপচি ঘর। বাদ যাচ্ছে না খালপাড় থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত আর্বান হাট প্রকল্প এলাকাও।

অথচ এই সব ঝুপড়ি এলাকায় রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গত বছর এমন বহু জায়গায় ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর খুঁজে পেয়েছিল স্থানীয় পুর প্রশাসন, আবার অন্য দিকে এই সব এলাকায় অসামাজিক কার্যকলাপেরও বহু নজির রয়েছে। অথচ প্রশাসনের কাছে এই সব এলাকার বাসিন্দাদের সম্পর্কে না আছে সম্পূর্ণ তথ্য, না আছে নজরদারি।

বাম আমল থেকে বিধাননগর জুড়ে গজিয়ে উঠেছে ঝুপড়ি। সেখানকার বাসিন্দাদের কথায়, পরিচারক-পরিচারিকার কাজ, ফুটপাথে অস্থায়ী খাবারের ব্যবসা থেকে শুরু করে রিকশা-অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এই ঝুপড়িবাসীরা। তাঁদের জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামোও নেই। সল্টলেকে কত ঝুপড়ি আছে বা কত জন সেখানে থাকেন, তাঁদের পরিচিতি কী, তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে পুরো তথ্য নেই।

বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, ঝুপড়িবাসীদের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে নতুন করে সমীক্ষা হয়নি। অথচ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নিজেই দেখছে, ঝুপড়িতে রীতিমতো ঘর ভাড়া করে বসবাস করছেন বহু বহিরাগত।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক দশকে ঝুপড়ি বেড়েই চলেছে। তাঁদের জন্য প্রশাসন কিছু করছেও না, নজরদারিও নেই। উল্টো দিকে তাঁদের সরিয়েও দেওয়া হচ্ছে না।

যদিও শাসক দলের একটি অংশের বক্তব্য, নতুন করে কাউকে ঝুপড়ি গড়তে দেওয়া হবে না। তবে যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করছেন, তাঁদের পুনর্বাসন না দিয়ে সরানো হবে না, এমন ভাবনা তাঁদের।

বিধাননগর পুলিশ প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, এলাকায় যেমন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, তেমন ভাবেই ঝুপড়িতেও কারা কারা থাকছেন, সেই তথ্যভাণ্ডারও তৈরি করা হবে। সেটা শুধুমাত্র নিরাপত্তাজনিত কারণেই নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা, উন্নয়নমূলক কাজে ঝুপড়িবাসীদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতেও প্রয়োজন বলে জানান বিধাননগরের এক শীর্ষকর্তা।

বিধাননগরের পুর-কমিশনার অলোকেশ প্রসাদ রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। ঝুপড়ির বিষয়টি আলোচনা স্তরে রয়েছে। তবে ঝুপড়িবাসীদের সম্পর্কে তথ্য আপডেট করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Government Slums Database
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE