Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mob Lynching

গণপিটুনির ঘটনা বাড়ার জন্য কি দায়ী সরকারি উদাসীনতাও

সম্প্রতি শুধু উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই একের পর এক গণপিটুনির অভিযোগ সামনে এসেছে। যার রেশ এ বার পৌঁছেছে শহরেও। খাস কলকাতার এক সরকারি ছাত্রাবাসে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে এক যুবককে।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ ০৬:০৫
Share: Save:

কোথাও চোর সন্দেহে হাসপাতালের লোহার শয্যার সঙ্গে বেঁধে এমন ভাবে মারা হয়েছে যে, যুবকের পরনের ট্রাউজার্স কোমরের নীচে নেমে গিয়েছে। কোথাও মারতে মারতে শরীরের হাড় টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছে। এর পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আক্রান্তকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকেরা। মাঝরাতে রাস্তার বাতিস্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে পেটাতে গিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা এবং তার পরে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো অটোয় সেই মৃতদেহ বসিয়ে দিয়ে আসার উদাহরণও রয়েছে। অতীতে শহরের বুকে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তবে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার শেষে কিছু ক্ষেত্রে শাস্তি হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কড়া শাস্তির তেমন নজির নেই বলেই মত মনোরোগ চিকিৎসক থেকে আইনজীবীদের বড় অংশের। আর তাই প্রশ্ন উঠছে, আইন হাতে তুলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ ‘সমাধান’ পাওয়ার তাড়নাতেই কি দিন দিন এমন ঘটনা বাড়ছে?

এই পরিপ্রেক্ষিতেই উঠে আসছে সরকারি উদাসীনতার প্রসঙ্গ। সম্প্রতি শুধু উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই একের পর এক গণপিটুনির অভিযোগ সামনে এসেছে। যার রেশ এ বার পৌঁছেছে শহরেও। খাস কলকাতার এক সরকারি ছাত্রাবাসে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে এক যুবককে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এ নিয়ে এক সময়ে তৎপর হয়ে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল (প্রিভেনশন অব লিঞ্চিং) বিল, ২০১৯’ বিধানসভায় পাশ হলেও এখনও তা আইনে পরিণত হয়নি। এর মধ্যে কেটেছে প্রায় পাঁচ বছর। আইনজীবীদের বড় অংশের বক্তব্য, এ দেশে সরাসরি গণপিটুনির জন্য নির্দিষ্ট ধারা নেই। ৩০২ (খুন) এবং ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ধারায় মামলা করা যায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে এমনই একাধিক গণপিটুনির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল (প্রিভেনশন অব লিঞ্চিং) বিল, ২০১৯’ পাশ করে। কিন্তু তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, না কি যাবজ্জীবন— তা নিয়ে জটিলতার মধ্যেই একটি ভুল মুদ্রণকে কেন্দ্র করে বিলটিতে সই করেননি তৎকালীন রাজ্যপাল। আইনজীবী অরূপ সাহার মন্তব্য, ‘‘এই সামান্য জটিলতায় আইন পাশই হয়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেছে।’’

বর্তমান এই পরিস্থিতির নেপথ্যে কারণ কী? মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এমন গুরুত্বপূর্ণ বহু বিষয়ে উদাসীনতার কারণেই এই পরিস্থিতি। অনেকেই ভাবছেন, অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই, জানিয়েও লাভ নেই। তাই নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন। কখনও কিছু চুরি যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা মনে করে, কখনও অন্য রাগ থেকে দলে পড়ে বড় কিছু ঘটিয়ে ফেলা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, নির্দোষ কাউকে পিটিয়ে মারার ঘটনাকে তুলে ধরে এ বিষয়ে সচেতনতার প্রচারের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষকে এমন একটি মাধ্যম দেওয়া জরুরি, যেখানে অন্তত তাঁদের অভিযোগ কেউ শুনবেন এবং যাতে মনে হয়, কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সার্বিক অশান্ত পরিবেশের মধ্যে রয়েছি। এক জন পড়ুয়া যে পরিবেশে বড় হচ্ছেন, তাতে ক্ষমতা প্রদর্শনই একমাত্র পথ বলে মনে হচ্ছে তাঁর।’’ রিমার দাবি, ২০১৯ সালের ভোটের পরেও অশান্ত পরিবেশের কারণে এমন ঘটনা বেড়েছিল।

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলছেন, ‘‘যে কোনও সমাজের হিংসার রূপ থাকে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই হিংসা বেশি প্রকাশ পেলে এমন ঘটনা বেশি ঘটে। সদ্য অতীত লোকসভা ভোটের সময়ে ও তার পরে এই হিংসারই কদর্য রূপ দেখেছি।’’ তা হলে উপায়? অভিজিতের মতে, কড়া আইনের পাশাপাশি, মানুষ যাঁদের দেখে প্রভাবিত হন, তাঁদেরও নিজের মন্তব্য শুধরে নেওয়ার ও শারীরিক ভাষা বদলানোর দায়িত্ব নিতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mob Lynching negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy