শেক্সপিয়র সরণির অভিজাত পাড়ার বাড়িতে প্রিয়জনের কঙ্কালের সঙ্গে বসবাসের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে মহানগরে। তারই মধ্যে ফ্ল্যাটে জঞ্জাল জমানোকে কেন্দ্র করে রবিবার শোরগোল পড়ে গেল গল্ফ গ্রিনে।
পুলিশ জানায়, ওই এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন এক বৃদ্ধা এবং তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। সেই যুবক রাস্তার নোংরা (প্লাস্টিক, ছেঁড়া-আধপচা ব্যাগ, বস্তা, কাগজ) কুড়িয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে জড়ো করেন। এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ জানান। পুলিশ নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে যান কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত। ওই যুবক তখন বাড়িতে ছিলেন না।
এ দিন যাদবপুর থানার অতিরিক্ত ওসি দেবাশিস দত্ত কিছু কর্মী নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে যান। গৃহকর্ত্রী প্রথমে তাঁদের ঢুকতে দেননি। পরে অনুরোধ করে ভিতরে ঢোকেন তাঁরা। পুলিশ জানায়, পরিবারের কর্তা বিদেশি ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। অবসরের পরে পারিবারিক অশান্তির জন্য ওই এলাকাতেই অন্য ফ্ল্যাটে উঠে যান।
শেক্সপিয়র সরণির ঘটনার সঙ্গে গল্ফ গ্রিনের কাহিনির মিল ও অমিল প্রায় সমান-সমান।
• দু’টি ক্ষেত্রেই মানসিক ভারসাম্যহীন দুই চরিত্র মুখ্য ভূমিকায়। শেক্সপিয়র সরণির বাড়িতে দিদির কঙ্কাল পাশে নিয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন ভাই। গল্ফ গ্রিনের যুবক কঙ্কাল না-হোক, রাস্তার নোংরা জঞ্জাল সযত্নে সাজিয়ে রাখতেন নিজেদের ফ্ল্যাটে।
• কঙ্কাল-সঙ্গী ব্যক্তি এবং তাঁর বাবা পারতপক্ষে কাউকে নিজের বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না। গল্ফ গ্রিনের যুবকের মা-ও এ দিন প্রথমে পুলিশ ও পুরপ্রতিনিধিকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে দিতে চাননি।
• শেক্সপিয়র সরণির ঘটনায় অপ্রকৃতিস্থ ছেলের আচরণে বাবার বাধা দেওয়ার প্রমাণ মেলেনি। বরং তাঁর প্রশ্রয়েই কঙ্কালের সঙ্গে বসবাস চলছিল বলে মনে করা হচ্ছে। বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। গল্ফ গ্রিনের ঘটনায় বাবা অশান্তি এড়াতে অন্যত্র চলে যান। কেন তিনি ছেলের জঞ্জাল-প্রেমে বাধা দেননি। জবাবে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি ছেলের চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী বাধা দেন।
• কুড়ানিরা জঞ্জাল কুড়োন পেটের তাগিদে। পয়সা পাবেন বলে। ওই যুবক মনের কোন বিচিত্র প্রবণতায় জঞ্জাল কুড়িয়ে ঘর বোঝাই করতেন, সেটা মনোবিদেরাই বলতে পারবেন বলে পুলিশের ধারণা। ঠিক যেমন মনস্তত্ত্ববিদেরা কঙ্কাল-সঙ্গী যুবকের মনোজগতের রহস্যভেদে ব্যস্ত।
আর অমিলটা মূলত বৃত্তান্তের গুরুত্বের মাত্রায়। প্রথমটা বহির্জগতের তোয়াক্কা না-করে প্রিয়জনের কঙ্কাল পাশে নিয়ে দিনযাপন। রাস্তার জঞ্জাল কুড়িয়ে এনে ঘর সাজানোটা বৈচিত্রের গুরুত্বে অনেক পিছিয়ে, মানছেন তদন্তকারীদের অনেকেই।
সেই আপাত-গুরুত্বহীনতা থেকেই পুলিশ বলছে, ফ্ল্যাটে জঞ্জাল জমানো এমন কোনও অপরাধ নয়, যাতে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে পুরসভা যদি ফ্ল্যাট সাফ করতে চায়, তারা সাহায্য করবে। কাউন্সিলরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পুরসভা এ দিনই ওই জঞ্জাল সরিয়ে দিল না কেন? সরাসরি জবাব এড়িয়ে যান কাউন্সিলর। তবে তিনি জানান, প্রয়োজনে পুরসভা ওই ফ্ল্যাটের জঞ্জাল সাফ করে দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy