শিয়ালদহ আদালতের পথে ধৃতরা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র
চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত আরও এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে রেল ইয়ার্ড-চত্বরেই তাকে ধরা হয়। এর আগে আরও তিন জনকে পুলিশ ধরেছিল। ধৃতেরা সকলেই রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। অভিযোগকারিণী এই ৪ জনের নামই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছিলেন।
রবিবার শিয়ালদহে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হলে এই চার জনকেই পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ধর্ষণের ঘটনাটির তদন্তে ধৃতদের কয়েক বার চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে জেরা করার দরকার আছে। এটা মাথায় রেখেই আদালতে তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন করা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, সুনসান রেল ইয়ার্ডে ট্রেনের ফাঁকা কামরায় বা অন্যত্র দিনের পর দিন, ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন অভিযোগকারিণী। পুলিশ অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনাটির পুনগর্ঠনও করাবে। পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধুমাত্র এই একটি অভিযোগই নয়, এর আগেও ইয়ার্ড-চত্বরে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। চিৎপুর ইয়ার্ডে সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাটি ছাড়া আগের কোনও কুকাজে কারা কারা জড়িত তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
ধর্ষণের অভিযোগে তদন্তের পাশাপাশি, চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত অফিসার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বা দমদম জিআরপি-র ওসি অপূর্ব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। গত বুধবার ওই মহিলা তাঁর স্বামীর সঙ্গে প্রথম বার এই ধর্ষণের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ ফাঁড়ি বা জিআরপি থানা, কোথাওই তাঁর অভিযোগ নেওয়া হয়নি। উল্টে, চিৎপুর ফাঁড়ির এক অফিসার আঙুল তোলেন মহিলার দিকেই। তাঁর স্বামীকে ‘মন্দ চরিত্রের বৌ’কে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শও দেন ওই অফিসার।
ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে আসা তরুণী ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে পুলিশের এই আচরণ অনেকটাই রিজওয়ানুর রহমানের ঘটনার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। আবার দু’বছর আগে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের পরেও প্রকারান্তরে অভিযোগকারিণী মহিলার চরিত্র নিয়েই কটাক্ষ করেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতা-নেত্রী। রিজ-কাণ্ডে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পরে অভিযুক্ত পুলিশকর্তাদের সরিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে অভিযোগকারিণী সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য নিয়ে কেউ ক্ষমাও চাননি। চিৎপুর রেল ইয়ার্ডের ঘটনাটিতে অবশ্য নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের ‘ক্লোজ’ করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
রেল পুলিশের শিয়ালদহ ডিভিশনের সুপার উৎপল নস্কর এ দিন বলেন, “ধর্ষণের অভিযোগে তদন্তের মতো পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তও দ্রুত সারা হবে।” চিৎপুর রেল ইয়ার্ডের পুলিশ ফাঁড়ি ও দমদম জিআরপি থানার দায়িত্বে থাকা দু’জন পুলিশ অফিসারকে ‘ক্লোজ’ করার পরে এখনও অবশ্য তাঁদের জায়গায় নতুন কাউকে বসানো হয়নি। দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy