প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। — আনন্দবাজার আর্কাইভ।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কাটতে চলল প্রায় ২৪ ঘণ্টা। পূর্ণাঙ্গ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। রবিবার সকালে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালের তরফ থেকে প্রেস বিবৃতি জারি করে বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বুদ্ধদেবের চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য কৌশিক চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে বুদ্ধদেবের অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই ওষুধে কেমন কাজ হচ্ছে জানতে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করা হবে। তবে রবিবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সিটি স্ক্যান করানোর পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।
রবিবার বুদ্ধদেবকে দেখে গিয়েছেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল। ইকো কার্ডিয়োগ্রাম করিয়েছেন চিকিৎসক ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার রিপোর্ট ভাল বলে জানিয়ে চিকিৎসক কৌশিক বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবুর ‘কার্ডিয়াক ফাংশন’ (হৃদ্যন্ত্রের কাজ) বেশ ভাল। তাই ফুসফুসের অবস্থা খারাপ থাকলেও উনি লড়ে যাচ্ছেন। শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে। রাইলস টিউবের মাধ্যমে তাঁকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। কোনও সমস্যা ছাড়াই তাঁর খাদ্যনালী দিয়ে খাবার শরীরে ঢুকছে। এটা ভাল লক্ষণ।’’
চিকিৎসক জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা বদলানো হয়েছে। তাই সোমবারের আগে আর নতুন কোনও পরীক্ষা করা হচ্ছে না। পাশাপাশি হাসপাতালের প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, রবিবারই বুদ্ধদেবের বুকে সিটি স্ক্যান করানো হবে। কিন্তু মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য কৌশিক জানিয়েছেন, আপাতত সিটি স্ক্যান করানো হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময় দিতে চাই যাতে তিনি স্থিতিশীল হতে পারেন। তার পর প্রয়োজন বুঝে সিটি স্ক্যান করব। বুদ্ধদেববাবুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কেমন হয়, কৃত্রিম ভাবে যে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে তার প্রয়োজন কমে কি না, তা দেখে সোম, মঙ্গলবারের মধ্যে আগামী কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। পরিস্থিতি যেমন আশা করছি, তেমন থাকলে তাঁকে আগামিদিনে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট ক্রমশ কমিয়ে সেখান থেকে বার করার চেষ্টা করা হবে।’’
এ তো গেল চিকিৎসা পরিভাষার কথা। বুদ্ধদেবের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা কৌশিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেমন আছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সিডেশন (আচ্ছন্ন করে রাখার প্রক্রিয়া) কমিয়ে দেওয়ার ফলে উনি কানে শুনতে পাচ্ছেন। বুঝতে পারছেন, আশপাশটা অনুভব করতে পারছেন। আমরা ডাকলে উনি তাকাচ্ছেন, মাথা নাড়ছেন। কখনও কখনও ইশারায় ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বোঝানোরও চেষ্টা করছেন।’’ বুদ্ধদেবের ব্লাডগ্যাসের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে মাপা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি জানিয়েছেন, ব্লাডগ্যাসের মাত্রা ৫০-এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তিনি এখনই বিপন্মুক্ত নন। বরং সঙ্কটজনকই রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা।
রবিবার সকালে হাসপাতালে বাবাকে দেখতে হাজির হন ভট্টাচার্য দম্পতির একমাত্র সন্তান সুচেতন। প্রাক্তন সতীর্থের খোঁজ নিতে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে দেখা যায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘কাল রাত (শনিবার) থেকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সেন্স এসেছে। ডাকলে সাড়া দিচ্ছেন। সংক্রমণের যা উপসর্গ ছিল, তা কমেছে।’’ গত কালের তুলনায় কি তাহলে অবস্থার উন্নতি বলা যায়? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘স্পষ্ট পার্থক্য নজরে পড়েছে।’’ হাসপাতালে এসে বুদ্ধদেবের খোঁজ নিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি, সিপিএম নেতা রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের কৃষ্ণা দেবনাথ, শুভঙ্কর সরকার প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy