Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
পুরভোট ২০১৫

দলবদলের অস্ত্রেই পালাবদলের ডাক

দল প্রার্থী না করায় এক জন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে। অন্য জন সিপিএম ছেড়ে গিয়েছেন তৃণমূলে। দু’জনেই ১৫-২০ বছর পরে দল বদলালেন। পুরভোটে তাই তাঁদের দু’জনের দু’টি ওয়ার্ডে নজর শহরবাসীর। এক জন বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে বাবলু করিম। রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বাবলু এত দিন তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে লড়েছেন। এ বার তাঁর মূল শত্রু সেই তৃণমূলই। ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী তিনি। এত দিন বলতেন সিপিএমকে একটাও ভোট নয়। এখন বলছেন, ‘‘সিপিএম, তৃণমূল কাউকেই ভোট দেবেন না।’’

বাবলু করিম এবং মহম্মদ জসিমুদ্দিন

বাবলু করিম এবং মহম্মদ জসিমুদ্দিন

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

দল প্রার্থী না করায় এক জন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে। অন্য জন সিপিএম ছেড়ে গিয়েছেন তৃণমূলে। দু’জনেই ১৫-২০ বছর পরে দল বদলালেন। পুরভোটে তাই তাঁদের দু’জনের দু’টি ওয়ার্ডে নজর শহরবাসীর।

এক জন বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে বাবলু করিম। রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বাবলু এত দিন তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে লড়েছেন। এ বার তাঁর মূল শত্রু সেই তৃণমূলই। ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী তিনি। এত দিন বলতেন সিপিএমকে একটাও ভোট নয়। এখন বলছেন, ‘‘সিপিএম, তৃণমূল কাউকেই ভোট দেবেন না।’’

অন্য জন মহম্মদ জসিমুদ্দিন। এই সেদিনও কলেজ স্ট্রিট মার্কেট, মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে ৩৯ ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর হিসেবে পুর-অধিবেশনে তৃণমূল বোর্ড কর্তাদের ‘তুলোধোনা’ করেছেন। এখন জোড়াফুলের প্রার্থী হয়ে বলছেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে কলকাতায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে।’’ দলের তালিকা প্রকাশের ঠিক আগেই ফুটবলারদের মতো দলবদল করেছেন।

ভোটের বাজারে তাঁদের নিয়ে জোর তরজা। সোমবার মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে সিপিএমের সভা চলছিল। ১০০ মিটার দূরে নিজেদের সভায় ছিলেন জসিমুদ্দিন। সিপিএমের সভা থেকে আওয়াজ ওঠে, ‘বেইমান, গদ্দারদের স্থান নেই এলাকায়।’ ওই কটূক্তি যে তাঁর উদ্দেশ্যেই, বুঝেছেন জসিমুদ্দিন। হজমও করতে হচ্ছে। শুধু বললেন, ‘‘সিপিএম মানুষের উন্নয়নে কিছু করতে পারবে না বুঝেই দল ছেড়েছি।’’ সিপিএমের এ বারের প্রার্থী প্রাক্তন লোকাল কমিটি সম্পাদক মহম্মদ ওমর ওরফে ল্যাডলা বলেন, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে কমিশন চলছে দলে। প্রার্থী করা হবে না আঁচ করে ক্ষমতার লোভে গদ্দারি করেছেন।’’ যদিও পুরনো সঙ্গীদের কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ জসিমুদ্দিন। বললেন, ‘‘১৯৯০ থেকে পুরভোটে এই ওয়ার্ডে বামেরা হারেনি। এ বার ঘাসফুল ফুটবে।’’

শক্ত ঘাঁটি, তবু গত লোকসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে চতুর্থ স্থানে নেমে যায় সিপিএম। জসিমুদ্দিনের দল বদল এ কারণেই বলে মত তৃণমূলের একাংশের। কিন্তু বাবলু দল ছাড়লেন কেন?

এলাকায় তৃণমূলের অন্দরেই গুঞ্জন, ‘অন্য দল থেকে এসে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। তা সহ্য করা যায় না। লাইনে বাবলুর মতো অনেকেই আছেন।’ বাবলু বলেন, ‘‘কারও দল ছাড়ার সাহস আছে, কারও নেই। ওয়াটগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জে সিপিএমের দাপট চরম। সেখানে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে দল করলেও প্রার্থী করা হল না।’’ সেই ক্ষোভেই বিজেপিতে। সমালোচনাতেও পড়তে হচ্ছে। বাবলুর জবাব, ‘‘এক সময়ে দলের নির্দেশে রাম পেয়ারি রাম ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে লড়েছি। গত পুরভোটেও রামের বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলাম। এখন ওঁরা তৃণমূলের হর্তাকর্তা। মানতে পারিনি।’’ তাঁর সাফ কথা, ‘‘তৃণমূলকে হারাতেই এগোচ্ছি।’’

১৯৮৫ থেকে পুরভোটে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড সিপিএমের দখলে। বিদায়ী কাউন্সিলর বিলকিস বেগম এ বারও প্রার্থী। লোকসভা ভোটে সিপিএমকে পিছনে ফেলে দেয় বিজেপি। তৃণমূল তৃতীয় স্থানে। বাবলুর সমর্থকদের ধারণা, অনেক বাসিন্দা পরিষেবায় গাফিলতি নিয়ে সিপিএমের উপর বিরক্ত। তাঁরা পরিবর্তন চান। তৃণমূল প্রার্থী অরবিন্দ সিংহ এক সময় বাবলুর সঙ্গেই ছিলেন। এ বার তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার এলাকা চষে বেড়িয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ। বিজেপি প্রার্থী একদা ‘ঘনিষ্ঠ’ বাবলুকে রুখতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE