Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

হেলে পড়ল ভিক্টোরিয়ার চাতালের দেওয়াল! 

ভিক্টোরিয়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল বিল্ডিংস কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনবিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড) বিষয়টি চোখে পড়া মাত্রই তা ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।

সরেজমিন: চলছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের চাতাল পরীক্ষা।

সরেজমিন: চলছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের চাতাল পরীক্ষা।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০১:০৬
Share: Save:

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে ঘিরে যে বৃত্তাকার চাতাল রয়েছে, হেলে পড়েছে তার এক দিকের দেওয়াল। ১৯৩৫ সালে তৈরি ওই চাতালের দেওয়ালের অবস্থানে প্রাথমিক পরীক্ষায় দু’ইঞ্চির বিচ্যুতি ধরা পড়েছে বলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সূত্রের খবর।

ভিক্টোরিয়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল বিল্ডিংস কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনবিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড) বিষয়টি চোখে পড়া মাত্রই তা ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। জানানো হয়েছে ভিক্টোরিয়ার টেকনিক্যাল কমিটিকেও। সময় নষ্ট না করে যোগাযোগ করা হয় হেরিটেজ স্থপতিদের সঙ্গেও। দু’ইঞ্চির অবস্থানগত বিচ্যুতি কী ভাবে দ্রুত মেরামতি করা যায়, তা নিয়েই আপাতত ভিক্টোরিয়ার অভ্যন্তরে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

কিন্তু কী ভাবে হেলে পড়ল চাতালের দেওয়াল?

প্রাথমিক পরীক্ষার পরে বিশেষজ্ঞদের একাংশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথাই বলছেন। প্রায় ৮৫ বছরের পুরনো দশ ফুট উঁচু ওই চাতালের উপরে যে মার্বেল রয়েছে, তার ফাঁক দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল পড়েছে ভিতরে। সেই চুঁইয়ে পড়া জল শোষণ করে দেওয়ালের নীচের মাটি ফুলে উঠেছে। সেই ফুলে ওঠা মাটিই চাপ দিয়েছে দেওয়ালে। ক্রমাগত সেই চাপেই সংশ্লিষ্ট দেওয়ালে দু’ইঞ্চির অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এনবিসিসি (ইন্ডিয়া)-র এক কর্তার কথায়, ‘‘আগেও ওই চাতালের পশ্চিম দিকের দেওয়াল পড়ে গিয়েছিল। তখন সেটি কেন্দ্রীয় পূর্ত মন্ত্রক ঠিক করেছিল। এ বার সমস্যা দেখা গিয়েছে পূর্বের দেওয়ালটি নিয়ে।’’

হেলে পড়েছে চাতালের এই দেওয়ালই (চিহ্নিত)।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে দেওয়ালের কথা বলা হচ্ছে, সেটি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মূল ভিতের বাইরের দেওয়াল। যে ভিতের উপরে সেটি দাঁড়িয়ে রয়েছে, অর্থাৎ যে ভিতটি স্মৃতিসৌধের মূল ওজন ধরে রেখেছে, সেটি কংক্রিটের। তার বাইরের দিকে এই দেওয়ালটি নির্মিত। মূলত নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্যই ওই দেওয়াল তৈরি হয়েছিল। ভিক্টোরিয়ার মূল নকশার মধ্যেও চাতালটির উল্লেখ রয়েছে বলে সূত্রের খবর।

দেওয়ালের ‘ত্রুটি’ পরীক্ষার জন্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের তরফে হেরিটেজ স্থপতি হিমাদ্রি গুহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হিমাদ্রিবাবু ইতিমধ্যেই দেওয়ালটি পরীক্ষা করেছেন। অবস্থানগত বিচ্যুতি বোঝার জন্য ‘লেজ়ার ট্রেসিং’ করা হয়েছে। সার্বিক পরীক্ষার জন্য দেওয়ালটির আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে হবে। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় যা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন ওই স্থপতি। কারণ, মার্বেল বৃষ্টির জল শুষে নেয়। তাতে শব্দের গতি বা শব্দতরঙ্গ পাল্টে যাবে। ফলে প্রকৃত কারণটা বোঝা সম্ভব হবে না। তাই শীতকালে শুকনো আবহাওয়াতেই ওই পরীক্ষা করতে হবে বলে জানাচ্ছেন হিমাদ্রিবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘দেওয়াল হেলে পড়ার সম্ভাব্য একটি কারণ হল মার্বেলের ফাঁক থেকে জল চুঁইয়ে ঢোকা। তবে এমনটাও হতে পারে যে নির্মাণের সময়েই সেটি একটু হেলানো ছিল। বা মাটি বসে গিয়ে সেটা এক দিকে হেলে পড়েছে। ঠিক কোন কারণে দেওয়ালটি হেলেছে, তা জানতে সার্বিক পরীক্ষা করা দরকার।’’

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই দেওয়ালের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার ভিত বা ভারসাম্যের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু আমরা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। দ্রুত সারানোর প্রক্রিয়াও শুরু হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy