শুক্রবার সল্টলেকে কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের দফতরে বিক্ষোভের সময়—নিজস্ব চিত্র।
বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের চতুর্থ ব্যাটালিয়নের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর-সহ পাঁচ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ফৌজদারি মামলাও শুরু করা হল পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থার পাশাপাশি, বিক্ষোভকারীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাটালিয়ন থেকে সরানো হল এক অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিককেও। সূত্রের খবর, বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি কমিশনারকে। সব মিলিয়ে নরমে-গরমে বিক্ষোভের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হল বলে ইঙ্গিত কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের। তবে, পর পর তিনটি বিক্ষোভ ভাঙচুরের ঘটনার পর এই প্রথম বিক্ষোভকারী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিল কর্তৃপক্ষ।
করোনা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে শুক্রবার উত্তাল হয়ে ওঠে সল্টলেকের এএফ ব্লকে কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের চতুর্থ ব্যাটালিয়য়নের দফতর। বিক্ষোভের সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক এবং কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে ব্যাটালিয়ন দফতরের মূল দরজা বন্ধ করে, আলো নিভিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে। ক’দিন আগে নিজেদের থানাতেই এই করোনা ইস্যুতেই ভাঙচুর করেছিলেন গরফা থানার কিছু পুলিশকর্মী। তার আগে কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে কমব্যাট ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করেন ডেপুটি কমিশনার এন এস পলকে। এমনটাই অভিযোগ। শুক্রবার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার দুই আধিকারিক এবং কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর যুগ্ম কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদী ঘটনাস্থলে যান পরিস্থিতি সামাল দিতে। অভিযোগ, বিক্ষোভকারী পুলিশকর্মীরা বন্ধ গেটের ভিতর থেকে রীতিমতো ইটবৃষ্টি করেন অখিলেশকে লক্ষ্য করে।
লালবাজার সূত্রে খবর, এর আগের দু’টি বিক্ষোভের পরেই কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের একটি বড় অংশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওয়াল করেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, পুলিশের মতো একটি শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনীতে বিক্ষোভ এবং ঊর্ধ্বতন আধিকরিকদের নিগ্রহ করা বেনজির ঘটনা এবং চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার ইঙ্গিত, করোনা এবং আমপান পরবর্তী সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সায় ছিল না নবান্নের। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, ‘‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংক্রামক হয়ে ওঠে বিক্ষোভের প্রবণতা।” তাঁর ইঙ্গিত, বাইরে থেকে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে এই বিক্ষোভে।
আরও পড়ুন: কনটেনমেন্ট জোন ছাড়া ধাপে ধাপে সব খোলার ছাড়পত্র কেন্দ্রের
শুক্রবারের ঘটনার পর, পরিস্থিতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয় নবান্নের কাছে এবং সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই ৫ পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— লালবাজার সূত্রে খবর এমনটাই খবর। বিধাননগর উত্তর থানাতে ভাঙচুরকারী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারী পুলিশকর্মীরা যে সহকারি কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তাঁকেও সরানো হয়েছে প্রতিবাদীদের বার্তা দিতে।
ডেপুটি কমিশনার হিসাবে এই চতুর্থ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে ছিলেন পঙ্কজকুমার দ্বিবেদী। মূলত তাঁর পোস্টিং ডিসি পঞ্চম ব্যাটালিয়নে। তাঁকে চতুর্থ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। লালবাজার সূত্রে খবর, গোটা ঘটনার অন্তর্তদন্তে তদন্তকারী আধিকারিকদের তরফে গাফিলতিও উঠে এসেছে। তাই এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি কমিশনার বিশ্বজিৎ ঘোষকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চতুর্থ ব্যাটলিয়নের।
আরও পড়ুন: চলে গিয়েও বারে বারে ফিরে আসে ‘ঋতু’রাজ
অন্য দিকে, কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের অষ্টম ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে থাকা সুদীপ্ত নাথের অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল দ্বিতীয় ব্যাটালিয়ন দেখভালের। সেই দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে ডিসি স্পেশাল (গোয়েন্দা বিভাগ) সুদীপ সরকারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নের। লালবাজার সূত্রে খবর, কমব্যাট ব্যাটালিয়নের বিক্ষোভের সময় থেকেই একটি অভিযোগ উঠে আসছিল যে, কিছু পুলিশকর্তা নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। অন্য দিকে, যে দুই পুলিশকর্তাকে এ দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হল সশস্ত্র পুলিশের দু’টি ব্যাটালিয়নের, তাঁদের দু’জনেরই বাহিনীতে জনপ্রিয়তা রয়েছে। এক পুলিশ কর্তার ইঙ্গিত, ফের যাতে বিক্ষোভ না হয় সেই দিক ভেবেই ‘নরমে-গরমে’ দাওয়াই দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার এই চেষ্টা।
Leader of opposition Abdul Mannan also expressed his serious concerns over the recent incidents @KolkataPolice Training School, Garfa police station & last night unfortunate event at 4th battalion of armed police Bidhanagar.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) May 30, 2020
রাজ্যপালের টুইট।
এ দিকে চতুর্থ সশস্ত্র ব্যাটেলিয়নে বিক্ষোভের পরে তা নিয়ে টুইট করে বাহিনীর ওই সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। শনিবার তিনি টুইটে বলেন, ‘‘আমি খুবই চিন্তিত। প্রথমে কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুল, তার পরে গরফা থানা এবং সর্বশেষ বিধাননগরে কলকাতা পুলিশের চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের ঘটনা আমায় স্তম্ভিত করেছে। উর্দিধারীদের এই ধরনের আচরণ খুবই চিন্তাজনক। সার্বিক ভাবে ওঁদের ক্ষোভ প্রশমন করার জন্য এখনই যথাযোগ্য ন্যায্য পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy