Advertisement
E-Paper

গানে সঙ্কীর্ণ দেশপ্রেম মানতেন না সুভাষচন্দ্র

বৃহস্পতিবার দুপুরে নেতাজি ভবনে নেতাজি জয়ন্তীর বক্তৃতায় সুভাষের এই সংস্কৃতি-ভাবনার কথা বলছিলেন ইতিহাসবিদ, অধ্যাপক সুগত বসু। তাঁর মতে, সুভাষের সঙ্গীত-ভাবনা দেশকালের সীমানা মানত না। তখন বাংলার গম্ভীরা লোকনাচের তালছন্দে মগ্ন হয়েছিলেন।

সুভাষচন্দ্র বসু।

সুভাষচন্দ্র বসু। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৩
Share
Save

বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে গানের তোড়ে গোটা দেশকে ভাসাতে মান্দালয় জেল থেকে চিঠি লিখে উদ্বুদ্ধ করছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি মনে করতেন, সঙ্গীতের আনন্দ ছাড়া দেশের মুক্তি অসম্ভব। বৃহস্পতিবার দুপুরে নেতাজি ভবনে নেতাজি জয়ন্তীর বক্তৃতায় সুভাষের এই সংস্কৃতি-ভাবনার কথা বলছিলেন ইতিহাসবিদ, অধ্যাপক সুগত বসু। তাঁর মতে, সুভাষের সঙ্গীত-ভাবনা দেশকালের সীমানা মানত না। তখন বাংলার গম্ভীরা লোকনাচের তালছন্দে মগ্ন হয়েছিলেন। আবার পরে কার্শিয়াং থেকে হবু স্ত্রী এমিলি শেঙ্কেলকে লেখা চিঠিতে কিছু পছন্দের ইউরোপীয় সঙ্গীতের খোঁজ করছেন সুভাষ। সুগতের কথায়, “দেশকালের সীমান্ত মোছা সাংস্কৃতিক বোধের সঙ্গে দেশপ্রেমের বিরোধ নেই। আজকের সঙ্কীর্ণ দেশপ্রেমের দিনকালে এটা মনে রাখা উচিত।”

‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শিল্পকলা ও সঙ্গীত’ শীর্ষক বক্তৃতায় নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর চেয়ারপার্সন সুগত এ দিন প্রধানত খোলা মনের আন্তর্জাতিকতা বোধে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার কথাই বলেছেন। অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা’য় জাপানি ওয়াশের ছাপ থেকে ডিএল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’য় ইউরোপীয় মেলোডির প্রভাবের কথা তুলে ধরেন তিনি। সুগত স্মরণ করান, দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতে পাশ্চাত্য প্রভাব নিয়ে রক্ষণশীলদের সমালোচনায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। পরে দ্বিজেন্দ্রলালপুত্র এবং সুভাষের বন্ধু দিলীপের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আলোচনাও সঙ্গীতের বিস্তারের পক্ষেই সওয়াল করে। রবীন্দ্রনাথ-দিলীপের আলোচনার সাক্ষী অতুলপ্রসাদ সেনও তাঁর ‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’তে ভেনিসের গন্ডোলায় শোনা সুর মিলিয়েছিলেন।

শিল্পসঙ্গীতের ভুবনের এই ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’ প্রকট হয়ে ওঠে আজ়াদ হিন্দ ফৌজের গানবাজনাতেও। সুগত বলেন, “রাম সিংহের অর্কেস্ট্রা বিচিত্র সুর আহরণ করেছে।” এ দেশের শিল্পসঙ্গীত চর্চায় আন্তর্জাতিক প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলার মন্বন্তরের সময়ে নন্দলাল বসুর ‘অন্নপূর্ণা’ ছবিতেও জাপানি টেম্পেরার প্রভাব। শিশিরকুমার বসুর লেখা সাক্ষী— উডবার্ন পার্কে শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে ১৯৩৭ সালে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর প্রার্থনাসভাও রামধুনে আটকে থাকত না। দিলীপ রায় তাঁকে ইংরেজিতেও গান শোনাতেন। কখনও সরাইকেলার ছৌ নাচের ছন্দে বাড়ি যেন কেঁপে উঠত। সুগত বলেন, নোয়াখালিতে গান্ধীর প্রিয় ভজন ‘বৈষ্ণব জনতো’ গাওয়ার সময়ে তিনি কখনও গানের বাণী পাল্টে সবাইকে ‘মুসলিম জনতো’ গাইতে বলতেন।

আজকের বিশ্ব রাজনীতির পটভূমিতে সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসুও বলেন, “আমরা এখন আমেরিকার মদতে ইজ়রায়েলের হাতে গণহত্যা দেখছি। ১৯৪০-এ প্রেসিডেন্সি জেলবাসের সময়ে সুভাষচন্দ্র লিখে গিয়েছেন, অন্যায়ের সঙ্গে আপসের মতো অপরাধ নেই।” জাপানি কূটনীতিক নোরিয়াকি আবে, ইটালির জেনোয়ার বিশ্বদূত এনরিকো দে বারবিয়েরি, তাইল্যান্ড-ভারত কালচারাল লজের প্রতিনিধিরা, প্রেম ও লক্ষ্মী সহগলের কন্যা অনীশা পুরীও অনুষ্ঠানে ছিলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Netaji Subhas Chandra Bose Netaji Birth Anniversary Netaji Bhavan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}