ফাইল চিত্র।
আগুন নেভাতে গত আট বছরে প্রায় এক হাজার নতুন গাড়ি কিনেছে রাজ্য। যে সব জায়গায় রাস্তা সরু এবং ঘিঞ্জি, সেখানে দ্রুত পৌঁছতে কেনা হয়েছে প্রায় ৪০০টি মোটরবাইক। অথচ আগুন নেভাতে যাঁরা জীবন বিপন্ন করে সবার আগে ছুটে যান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাওয়ার দিক থেকে সেই দমকলকর্মীরাই কার্যত ব্রাত্য হয়ে রয়েছেন।
রাজ্যের ১৪১টি দমকলকেন্দ্রে কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। দমকল সূত্রের খবর, প্রতি বছর কর্মীপিছু চার সেট করে পোশাক বরাদ্দ করা হয়। পাশাপাশি, প্রতি বছর তাঁদের একটি করে জুতো এবং দু’টি করে গামবুট পাওয়ার কথা। এ ছাড়া, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বরাদ্দ করা হয় একটি করে হেলমেট। কিন্তু অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে দমকলের কর্মীরা সেই সরঞ্জামের কিছুই পাচ্ছেন না। তাপ্পি দেওয়া গামবুট পরে আগুন নেভাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। দমকলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত দু’বছরে প্রায় দু’হাজার অস্থায়ী কর্মী (অক্সিলিয়ারি ফায়ার পার্সন বা এএফপি) নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু পোশাক, জুতো, গামবুট না থাকায় সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন তাঁরাই।’’ এমনকি আগুনের প্রবল তাপে কাজ করার সময়ে যে পোশাক (ফায়ার প্রক্সিমিটি সুট) পরেন দমকলকর্মীরা, তা-ও প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেই বলে অভিযোগ।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দমকলের সদর দফতরের এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘দমকলের মতো জরুরি পরিষেবায় শৃঙ্খলা একটা বড় বিষয়। কিন্তু গত তিন বছর ধরে পোশাক, গামবুট, হেলমেট না থাকায় চরম ভোগান্তি হচ্ছে। বাহিনীতে শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকছে না।’’ মাসখানেক আগে এই পরিষেবায় যোগ দিয়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বেতন এমনিতেই কম। নতুন চাকরি পেয়ে নিজের বেতনের টাকা দিয়ে পোশাক তৈরি করে অফিসে আসছি।’’
দমকল সূত্রের খবর, নতুন পোশাক না পেয়ে পুরনো পোশাকেই তাপ্পি মেরে কাজ চালাচ্ছেন কর্মীরা। এক কর্মী বলেন, ‘‘আগুন নেভাতে যাওয়ার সময়ে প্রথম দরকার হেলমেট ও গামবুট। সেই দু’টির ঘাটতি থাকায় অনেক সময়েই দমকলকেন্দ্রের ব্যারাকে পড়ে থাকা হেলমেট, গামবুট পরে যেতে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলির মাপজোক ঠিক না থাকায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’
সরঞ্জামের অপ্রতুলতা তো রয়েছেই। এর সঙ্গে দ্বিতীয় বড় সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে কর্মীর অভাব। এই মুহূর্তে দমকলে প্রায় তিন হাজার পদ খালি। নিয়ম অনুযায়ী আগুন নেভাতে যাওয়ার সময়ে প্রতি গাড়িতে আধিকারিক-সহ সাত জন কর্মীর থাকার কথা। কিন্তু লোকবলের অভাবে মাত্র চার জন কর্মী নিয়েই ছুটছে দমকলের ইঞ্জিন। এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘শুধু গাড়ি কিনলেই তো হবে না। আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি তাঁদের সরঞ্জামও ঠিক মতো দিতে হবে। নচেৎ দমকলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’’
পোশাক, জুতো, গামবুট, হেলমেট পর্যাপ্ত না থাকা প্রসঙ্গে দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘খুবই সমস্যা হচ্ছে, সে কথা ঠিক। ওই সব জিনিস কিনতে অর্থ দফতরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সরকার থেকে এখনও টাকা বরাদ্দ করা হয়নি।’’ রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘আমি সবে এক বছর হল দায়িত্ব নিয়েছি। পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাতে (নন প্ল্যান) টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা নবান্নে আবেদন করেছি। আশা করছি, কর্মীরা শীঘ্রই তাঁদের সরঞ্জাম পেয়ে যাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy