নিয়ম মেনে পুজো করলে হাজারো ঝক্কি পোহাতে হয়। কিন্তু পুলিশ ও দমকলের কর্তারাই বলছেন, নিয়ম না মানলেও শহরে পুজো করা যায়! যার উদাহরণ উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার দমকলমন্ত্রীর জাভেদ খানের মন্তব্যে। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জাভেদ বলেছেন, ‘‘কলকাতার অধিকাংশ পুজোই দমকলের ছাড়পত্র পেয়েছে। কিন্তু, বেশ কয়েকটি পুজোকে ছাড়পত্র দেওয়া যায়নি।’’ যদিও সেই পুজোগুলি প্রশাসন আটকাতে পারবে না বলেই জানিয়েছেন মন্ত্রী।
পুলিশ ও দমকলের একাংশই বলছেন, শহরের বিভিন্ন পুজোকমিটির সামনে দমকল ও পুলিশ কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। চোখের সামনে নিয়ম ভেঙে পুজো করলেও তাঁরা কিছুই করতে পারেন না। বছর দুয়েক আগে খোদ কলকাতা হাইকোর্ট এ ব্যাপারে সরব হলেও বাস্তব চিত্রটা বদলায়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ম না মেনেও যদি পুজো করা যায়, তা হলে খাতায়-কলমে নিয়ম রাখার প্রয়োজন কী?
শহরের পুজো ময়দান বলছে, এ বারও শহরের বহু পুজোই পুলিশ ও দমকলের অনুমতি না নিয়েই হচ্ছে। বড় বড় মণ্ডপ-প্রতিমা পুলিশের সামনে থাকলেও সে দিকে বিশেষ আমল দেয়নি পুলিশ। কোথাও অগ্নিবিধি না মানলেও দমকল আপত্তি করেনি। এ দিন দমকলমন্ত্রী অবশ্য তাঁর দফতরের কাজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি পুজো আমরা আটকাতে পারি না। তবে অগ্নিবিধি মানার বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারি।’’ পুলিশের কর্তারা বলছেন, বেআইনি পুজো বন্ধ করতে পারেন না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুজোর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ অভিযোগ (জেনারেল ডায়েরি) নথিভুক্ত করে রাখা হয়। তার ফলে পুজোর মধ্যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আদালতে মামলা হলেও জেনারেল ডায়েরিটি পুলিশের সক্রিয়তার উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হবে। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অবশ্য জানিয়েছেন, কোনও অভিযোগ পেলেই ওই সব পুজো কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহরের অনেক পুজো কমিটির কর্তারা বলছেন, পুলিশের এই কাজ কার্যত নিজের পিঠ বাঁচানোর উপায়। বেআইনি পুজো মণ্ডপে যদি কোনও বড় ধরনের বিপদ ঘটে তা হলে বহু মানুষের ক্ষতি হতে পারে। নিয়ম মেনে পুজো করা একটি ক্লাবের কর্তার প্রশ্ন, ‘‘সেই বিপদ হওয়ার পরে ব্যবস্থা নিলে মানুষগুলির ক্ষতি মেটানো যাবে কি?’’ এ বার যে সব পুজোগুলির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে, সেখানেও কিন্তু বিপদের আশঙ্কা থাকছে। যেমন ইএম বাইপাস সংলগ্ন দক্ষিণ শহরতলির একটি পুজোয় একতলা সমান সিঁড়ি তোলা হয়েছে। সেই সিঁড়ি বেয়ে ভিড় ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোর মণ্ডপের উচ্চতা আইনে নির্দিষ্ট উচ্চতার থেকে বেশি। উল্টোডাঙার একটি পুজোর বিরুদ্ধেও বিপজ্জনক মণ্ডপের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, বিপজ্জনক মণ্ডপ দেখলে সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী পুজোর ক্ষেত্রেই এমন উদাহরণ রয়েছে বলে লালবাজার জানিয়েছে।
এ সব বিতর্কের বাইরে লালবাজার ও পুলিশ, দু’পক্ষই জানিয়েছে, পুজোর সময় নিরাপত্তা জোরদার করতে পঞ্চমী থেকেই পথে নামছে তারা। পুলিশ জানিয়েছে, দর্শনার্থীদের সহায়তার জন্য বিশেষ দল ঘুরবে শহরের বিভিন্ন রাস্তায়। রাস্তায় থাকবেন শীর্ষ কর্তারাও। লালবাজারের কন্ট্রোল (১০০, ২২১৪৩২৩০) নম্বর ছাড়াও প্রতি ডিভিশনে কন্ট্রোল রুম সক্রিয় থাকবে। বড় বড় কিছু পুজো কমিটি ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে শহর জুড়ে লাগানো কয়েকশো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে নজরদারি চালানো হবে। ভিড়ের জমায়েত হয়েছে এমন ৭৫টি জায়গাতেও সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রায় পঞ্চাশটি ওয়াচ টাওয়ার বসানো তৈরি করা হচ্ছে। যা চতুর্থী থেকেই কাজ শুরু করে দেবে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, বড়-মাঝারি-ছোট পুজো মণ্ডপকে ১৩টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনের দায়িত্বে থাকছেন এক জন করে ডেপুটি কমিশনার। এ ছাড়াও বিভাগীয় ডিসিরাও নিজেদের এলাকার তদারকি করবেন। রাস্তায় থাকবে অতিরিক্ত রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড এবং হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের মতো পুলিশের বিশেষ বাহিনী। মণ্ডপের জরুরি সমস্যা সামাল দিতে থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।
দমকল জানিয়েছে, পুজোয় মোট ১৪টি দমকল কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। ৩৬টি ফায়ার-ফাইটিং মোটরবাইক তৈরি রাখা হচ্ছে। পুরনো ৪০০টি গাড়ি ছাড়াও ৫০-৬০টি নতুন ছোট গাড়িও তৈরি রাখা হচ্ছে। যাতে গলিঘুঁজিতে সমস্যা হলেও গাড়ি পৌঁছতে পারে। প্রত্যেক গাড়ির সঙ্গে জিপিএসের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হবে। জেলার দমকল কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy