Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ডানলপে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই কারখানা, প্রশ্নের মুখে দমকল

দু’দিকে পেট্রোল পাম্প। পাশেই বস্তি ও স্কুল। ঠিক তার মাঝেই দাউ দাউ করে জ্বলছে প্লাইউডের কারখানা। আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে দু’কিলোমিটার দূরের বালি ব্রিজ থেকে। আগুনের জেরে পাশে থাকা উড়ালপুলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল।

লেলিহান শিখায় ঢেকেছে আকাশ।

লেলিহান শিখায় ঢেকেছে আকাশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৬
Share: Save:

দু’দিকে পেট্রোল পাম্প। পাশেই বস্তি ও স্কুল। ঠিক তার মাঝেই দাউ দাউ করে জ্বলছে প্লাইউডের কারখানা। আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে দু’কিলোমিটার দূরের বালি ব্রিজ থেকে। আগুনের জেরে পাশে থাকা উড়ালপুলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে ডানলপ মোড়ে ১৩৫ বি টি রোড এলাকার ‘হিন্দুস্থান ফাইবার গ্লাস ওয়ার্কে’র গুদামে বিধ্বংসী আগুন লাগে। মুহূর্তে ভস্মীভূত হয়ে যায় পাঁচ কাঠার ওই কারখানা ও গুদাম। মাঝরাতেও সেই আগুন পুরোপুরি নেভানোর কাজ চালিয়ে যায় দমকল।

এই ঘটনায় ফের বেআব্রু হয়ে গিয়েছে দমকলের তৎপরতা। অভিযোগ, এ দিন বার বার দমকলের জল ফুরিয়ে যাওয়ায় পুলিশকে জলকামান ব্যবহার করতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, যখন কালো ধোঁয়া দেখে আতঙ্কে চিৎকার শুরু করে দিয়েছেন পাশের বস্তিবাসীরা, তখন দমকলের ইঞ্জিনগুলিকে পাশের ঝিল থেকে জল ভরতে যেতে হচ্ছিল। এর জেরে রাত পর্যন্ত বি টি রোডের যান চলাচল ব্যাহত হয়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, কারখানাটি রেলের এক ঠিকাদারের। সেখানে ট্রেনের কামরার প্লাইউড তৈরি ও রং করা হয়। কারখানার ম্যানেজার মুনমুন ঘোষ জানান, প্রতি দিনের মতো এ দিনও প্রায় ২০-২৫ জন কর্মচারী কাজ করছিলেন। কারখানায় মোট তিনটি বিভাগ রয়েছে। হঠাৎ দেখা যায় রঙের বিভাগ থেকে আগুন বেরোচ্ছে। কিছু বোঝার আগেই পাশের সবক’টি বিভাগে আগুন লেগে যায়। গুদামে প্রচুর কেমিক্যাল ও প্লাইউড থাকায় মুহূর্তে আগুন ছড়ায়। পাশে দু’টি পেট্রোল পাম্প থাকায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার চত্বরে থাকা ছো়ট-বড় দোকানগুলি বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই খবর যায় দমকল ও পুলিশে। কারখানার পাশে রয়েছে প্রায় ২০-২৫টি ঘরের একটি বস্তি। আতঙ্কে সকলেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা শিবু নট্ট জানান, ‘‘আগুন দ্রুত ছড়ানোয় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোল পাম্পগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাগ্যিস পাশের স্কুলটি আগুন লাগার আগেই ছুটি হয়ে গিয়েছিল।’’


চলছে আগুন নেভানোর কাজ। মঙ্গলবার।

দমকলের ৪টি ইঞ্জিন পৌঁছে যখন আগুন নেভানো শুরু করে ততক্ষণে অবশ্য ডানলপ মোড় কার্যত অবরুদ্ধ। উড়ালপুলে বন্ধ হয়েছে যান চলাচল। কলকাতা ও বরাহনগরের দিকের সব রাস্তায় যানজট তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। কেন এত দেরি হল দমকলের? দফতরের কর্তাদের সাফাই, রঙের কেমিক্যালে আগুন ফোম দিয়ে নেভাতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দমকলের ওই বাহিনীর কাছে তা ছিল না। কলকাতার সদর দফতর থেকে ফোম আনা হয়। কিন্তু প্রবল যানজটে সেই গাড়িও আটকে যায়। যে চারটি ইঞ্জিন এসেছিল সেগুলি বার বার জল ভরতে যাওয়ায় কাজে দেরি হচ্ছিল।

ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয় কাউন্সিলর সাগরিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। যান বরাহনগর পুরসভার অঞ্জন পাল, দীপনারায়ণ বসু প্রমুখ কাউন্সিলরেরাও। স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের তাপস রায়, পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ, বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকও সেখানে যান। অঞ্জনবাবু দমকলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আরও ইঞ্জিন পাঠাতে অনুরোধ করেন। পরে অবশ্য মোট ২০-২৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বিধায়ক তাপসবাবু বলেন, ‘‘আমি অন্য কাজে এসেছিলাম। খবর পেয়েই এখানে চলে আসি। পুলিশ কমিশনার, দমকলের ডিজি ও দমকলমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সকলে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করায় প্রাণহানি ঘটেনি।’’

স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানাটিতে এত দাহ্য বস্তু থাকলেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ম্যানেজার মুনমুন ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘কারখানার সামনের একটি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শর্ট সার্কিট হয়। এলাকাবাসীর দাবি, বরাহনগরে একটিও দমকল কেন্দ্র না থাকায় আগুন নেভাতে এত দেরি হয়। এ দিন উত্তেজিত জনতাকে থামাতে কমব্যাট ফোর্সও নামাতে হয়। বিধায়ক অবশ্য বলেন, ‘‘বরাহনগরে দমকল কেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। পুজোর আগেই কাজ শেষ হবে।’’ পুর-চেয়ারপার্সন অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘কারখানার ফায়ার লাইসেন্স এবং বাকি প্রয়োজনীয় নথি রয়েছে কি না খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

— নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE