অসচেতন: পুজোর পরে ফের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে। তবু কোলে মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা, কারও মুখেই মাস্কের বালাই নেই। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের টানা ঊর্ধ্বমুখী দামে এমনিতেই হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের। সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানির আকাশছোঁয়া দাম। এ দিকে, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনার দাপট চলতে থাকায় রোজগার কমেছে বেশ খানিকটা। এই অবস্থায় ধনদেবী লক্ষ্মীর উপাসনায় জাঁকজমক নয়, বরং নমো নমো করেই পুজো সারতে চাইছে বাঙালি।
দুর্গাপুজোর দিন কয়েক পরেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো হওয়ায় এমনিতেই মধ্যবিত্ত বাঙালির পকেটে টান থাকে। অনেকেই আগে থেকে পরিকল্পনা করে পৃথক সঞ্চয় করে রাখেন। অতিমারির ধাক্কায় তছনছ হয়ে গিয়েছে সেই চিন্তা-ভাবনা। তলানিতে ঠেকেছে মধ্যবিত্তের একাংশের আয়। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। ফলে সঞ্চয় তো দূর, সংসার চালানোই মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমজনতার বড় অংশের কাছে। পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ করেছে জিনিসের দামবৃদ্ধি। ফলে, লক্ষ্মীলাভের আশায় কোনও মতে উপাসনা সারতে কার্যত বাধ্য হচ্ছেন শহরবাসীর বড় অংশ। অনেকেই প্রতিমার বদলে ঘটপুজোর দিকে হাঁটবেন বলে মনস্থির করেছেন।
বাড়িতে আড়ম্বর সহকারে লক্ষ্মীপুজো করত উল্টোডাঙার ভট্টাচার্য পরিবার। কিন্তু এ বার তাঁরা কোনও মতে পুজো করবেন। ওই পরিবারের সদস্য সুজাতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বছর দুয়েক ধরে তো ব্যবসায় মন্দা। জাঁকজমক করে লক্ষ্মীপুজো করব কী ভাবে? তার উপরে জিনিসের যা দাম, হাতই দেওয়া যাচ্ছে না। কোনও মতে ছোট একটা ঠাকুর দিয়েই পুজো করব।’’ প্রতিমা নয়, ঘটপুজোর মাধ্যমেই লক্ষ্মীর আরাধনা করবেন গড়িয়াহাটের দেবলীনা চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামী বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। করোনার ধাক্কায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে ওঁর বেতন। আয়ই যদি না থাকে, লক্ষ্মীর আরাধনায় জাঁকজমক করব কী করে?’’
অতিমারি আবহে লক্ষ্মীপুজোর প্রভাব পড়েছে কুমোরটুলিতেও। মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, এ বছর ছোট প্রতিমার চাহিদা সব চেয়ে বেশি। সেগুলি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা দরে। বড় প্রতিমার দাম হাজার ছাড়িয়ে। কাঠামোর প্রতিমার মূল্য আরও বেশি। প্রতিমাশিল্পী বিশ্বনাথ পাল বললেন, ‘‘ছোট ছাঁচের প্রতিমার চাহিদাই সব চেয়ে বেশি। লোকজন কম খরচে পুজো সেরে ফেলতে চাইছেন। তবে গত বছরের তুলনায় অল্প হলেও চাহিদা আছে। কিন্তু আমাদের চিন্তা বাড়াচ্ছে বৃষ্টি। যা-ও বা ক্রেতারা আসছিলেন, বৃষ্টি দেখে তাঁরা কম আসছেন।’’
শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের মানিকতলা বাজার, যদুবাবুর বাজার, লেক মার্কেটেও দেখা গেল, লক্ষ্মীপুজোর কেনাকাটা করতে আসা লোকজনের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। মানিকতলা বাজারের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘করোনার আগে লক্ষ্মীপুজোর সময়ে যত কেনাবেচা হত, গত দু’বছর ধরে তা হচ্ছে না।’’
সব মিলিয়ে এ বার তাই জৌলুস-আড়ম্বর কমিয়েই লক্ষ্মীর বর লাভে তৈরি হচ্ছেন শহরবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy