—প্রতীকী ছবি।
কেটে গিয়েছে তিন বছর। তবে স্বজন হারানোর ক্ষতে সময়ের প্রলেপ পড়েনি। প্রতি বছর প্রায় একই সময়ে এসে পড়ছে কোনও না কোনও ঘূর্ণিঝড়। পূর্বাভাসের কথা শোনা মাত্রই ফের টাটকা হচ্ছে স্মৃতি। নতুন করে ভোগ করতে হচ্ছে যন্ত্রণা। এই বছরও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যত স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছে, ততই আতঙ্কে ভুগছেন বজ্রাঘাতে পরিবারের কাউকে হারানো মানুষগুলি। শহরবাসীর কাছে দুর্যোগে ঘরে থাকার অনুরোধ করছেন তাঁরা।
২০১৮ সালের ১০ জুন। হুগলির শ্রীরামপুরের বাড়ি থেকে কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে এসেছিল দেবব্রত পাল। বছর একুশের দেবব্রতর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। বজ্রাঘাতে খেলার মাঠেই মৃত্যু হয়েছিল তার। দেবব্রতর বাবা দীপক পাল বলেন, ‘‘ছেলেকে এ ভাবে হারানোর বেদনা তিন বছর পরেও একই রকম। এখন ঝড়, বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনলে যেন যন্ত্রণা আরও বেড়ে ওঠে।’’ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী দীপকবাবু আরও বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পরে স্বাভাবিক রুটিনে ফিরতে আমাদের বেশ কয়েক মাস কেটে গিয়েছিল। ছেলেকে হারিয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েকে আঁকড়ে ধরেই আবার খানিকটা স্বাভাবিক হয়েছি।’’
শুধু ক্রিকেট নয়, তবলাও শিখতেন দেবব্রত। ছেলেক মৃত্যুর দিন চল্লিশ পরে বাবার হাতে এসে পৌঁছেছিল একটি শংসাপত্র। তবলা শেখার স্কুলে পঞ্চম বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন দেবব্রত। দীপকবাবু বলেন, ‘‘ছেলে দুটোই খুব মন দিয়ে শিখত। প্রকৃতির কাছে আমরা খুব অসহায়। ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত এগুলোকে আমরা আটকাতে পারব না। তবে ওই সময়ে বাড়িতে থাকতে পারি। তা হলে কারও স্বজন এ ভাবে চলে যাবেন না।’’
ওই বছরই ছেলে অজয়কে হারান কড়েয়া থানা এলাকার লোহাপুলের বাসিন্দা বিনোদ মল্লিক। অজয় বান্ধবীকে নিয়ে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন। তার পরে দু’জনে ময়দানে ঘুরতে যান। হঠাৎ ঝড়বৃষ্টিতে একটি স্মারকের পাশে আশ্রয় নিয়েছিলেন দু’জনে। বজ্র আঘাত হানে সেখানেই। রাস্তার পাশে দু’জনকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অজয়কে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। গুরুতর জখম হন তাঁর বান্ধবীও।
অজয়ের মামাতো ভাই অরবিন্দ মল্লিক বলেন, ‘‘ওদের বিয়ের ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তারই কেনাকাটা করতে গিয়ে অজয় আর ফিরল না। ওর ছোট ভাই অজিতকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন ওর বাবা-মা।’’ মঙ্গলবার বিনোদ বলেন, ‘‘এখন ঝড়-বৃষ্টি হলে বাড়ি থেকে বেরোই না। আজ কাজে যাইনি। কালও যাব না। বাড়ির সকলেই দু’দিন বাড়িতে থাকব।’’
প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে অজয়ের বান্ধবীর। তিন বছর পরেও তিনি শয্যাশায়ী। বজ্রাঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিরদাঁড়া সোজা হয় না এখনও। ছিন্ন হয়ে গিয়েছে অজয়ের পরিবারের সঙ্গে সব রকম সম্পর্কও।
শহরে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, গত দেড় বছরেই শহরে আহতের সংখ্যা ১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। বাড়ি ভেঙে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো দুর্যোগের সময়ে বজ্রাঘাতও মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
বুধবার ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাতেরও আশঙ্কা রয়েছে। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া শহরবাসীকে ঘরে থাকারই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের তরফেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy