Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Child Death

‘হাসিখুশি শিশুটির দেহ নিতে মর্গে দাঁড়িয়ে আছি, ভাবতেই পারছি না’

আলিপুর থানা এলাকার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহের গা-ঘেঁষা সূর্য সেন বাস্তুহারা কলোনিতে টালির চালের বাড়িতে স্ত্রী জুহি সিংহ ও বছর দেড়েকের শ্লোককে নিয়েই ছিল সঞ্জয় জায়সওয়ালের সংসার।

হাহাকার: সন্তানহারা মা জুহি সিংহ। বৃহস্পতিবার, নিজেদের বাড়িতে।

হাহাকার: সন্তানহারা মা জুহি সিংহ। বৃহস্পতিবার, নিজেদের বাড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৫
Share: Save:

দেড় বছরের ছোট্ট শ্লোককে আদর করে নডি বলে ডাকতেন প্রতিবেশীরা। সে ছিল পাড়ার সকলের বড্ড আদরের। সকলের কোলে-পিঠে চেপেই বড় হচ্ছিল সে। বুধবার রাতে সেই নডিই ট্রেলারের তলায় পিষ্ট হয়েছে, এ যেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না পাড়ার অনেকে। শুধু শ্লোকের মা-বাবাই নন, তাঁদের বাড়ির সামনে ভিড় করে আসা এলাকার মানুষেরাও শ্লোকের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলছেন।

আলিপুর থানা এলাকার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহের গা-ঘেঁষা সূর্য সেন বাস্তুহারা কলোনিতে
টালির চালের বাড়িতে স্ত্রী জুহি সিংহ ও বছর দেড়েকের শ্লোককে নিয়েই ছিল সঞ্জয় জায়সওয়ালের সংসার। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। এই পাড়ায় অনেক বছর ধরেই আছেন তিনি। বিয়ে হয়েছে ২০১৮ সালে। ওই রাতে মোটরবাইকে করে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সঞ্জয়। বৃহস্পতিবার তিনি বললেন, ‘‘বাড়ি তো প্রায় পৌঁছেই
গিয়েছিলাম। ঠাকরে রোডে এত জোরে ট্রেলার না চললে এই ঘটনা ঘটত না।’’

একমাত্র ছেলেকে চোখের সামনে ট্রেলারের চাকার তলায় পিষ্ট হতে দেখেছেন জুহি ও সঞ্জয়। এ দিন সকালে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না জুহি। প্রতিবেশীরাও ভিড় করে ছিলেন তাঁদের বাড়ির সামনে। সবাই জুহিকে ঘিরে বসে থাকলেও তাঁকে সান্ত্বনা জানানোর মতো ভাষা ছিল না তাঁদের কারও।

এ দিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে শিশুটির খেলনা। পড়শি
মহিলারাই শুধু নন, শ্লোকের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে আসছে এলাকার ছেলেদেরও। এক প্রতিবেশী বাবলু দাস মোবাইলে শ্লোকের ছবি আর ভিডিয়ো বার করে বার বার দেখছিলেন। তেমনই একটি ভিডিয়ো দেখতে দেখতে বাবলু বললেন, ‘‘এই তো নডি আমাদের বাড়িতে গিয়ে খাটে বসে খেলে এল। এই দেখুন সেই ভিডিয়ো। পাড়ায় খুব
জনপ্রিয় ছিল ও। সকলের কোলে যেত। একটু একটু কথা বলতেও শিখে ফেলেছিল।’’

বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন শ্লোকের দাদু গোপাল সিংহ। বললেন, ‘‘সব কিছুই যেন থেমে গিয়েছে। মনে হচ্ছে, যা হয়েছে, পুরোটাই মিথ্যে। কাল রাত থেকে ও ঘরে নেই। ঘরে ওর গলার আওয়াজ পাচ্ছি না। ঘরের ভিতরে ঢুকতে পারছি না। সব যেন খালি খালি লাগছে।’’ তাঁর আফসোস, ‘‘কী এমন তাড়া ছিল ওই গাড়িটার? রাতে ওই রাস্তায় গাড়িগুলো এত জোরে যায়, দেখার কি কেউ নেই?’’

একরত্তি শিশুটির দেহ আনতে গিয়ে এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিবেশীরা। তাঁদেরই এক জন শিবেন কর বলেন, ‘‘বুধবার সকালেই ওকে দেখলাম এক প্রতিবেশীর বাড়িতে। খেলছিল তখন। সেই হাসিখুশি, একরত্তি শিশুটির দেহ নিতে মর্গে দাঁড়িয়ে আছি, এ যেন ভাবতেই পারছি না কোনও ভাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

alipore police station Alipore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy