বেহাল: ক্লাসঘরের ছাদের এমনই দশা। শরৎ বসু রোডের একটি ইংরেজি মাধ্যম পুর স্কুলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
‘‘শুধু পেনসিল, বই, সোয়েটার, বর্ষাতি, জলের বোতল বা চুল বাঁধার ফিতে দিলেই কি হয়ে যায়? পুরসভার স্কুলে বাচ্চাদের কেন পাঠাব বলুন তো? স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক বা ক্লাসঘর, কিছুই তো নেই। পড়াশোনাটা হবে কী করে?’’ প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন গড়পার এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা। তাঁদের মতে, সরকারি স্কুলগুলিতে তবু পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন। ক্লাসও হয় নিয়মিত। তাই পাড়ায় পুর স্কুল থাকা সত্ত্বেও সেখানে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেননি তাঁরা।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্কুল) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শহর জুড়ে পুরসভা পরিচালিত ২৩৫টি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা যাতে বাড়ানো যায়, তার জন্য বেশ কয়েকটি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালু করা হয়েছে। ধাপে ধাপে আরও কিছু স্কুল ইংরেজি মাধ্যম করা হবে। মেয়র পারিষদ (স্কুল) জানিয়েছেন, শহরে এখন পুরসভার ৪৫টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। প্রতিটি স্কুলে গড়ে তিন জন করে শিক্ষক রয়েছেন।
দক্ষিণ কলকাতার এ রকমই একটি ইংরেজি মাধ্যম পুর স্কুল চলছে ১২৪/১ শরৎ বসু রোডে। শিশু থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে শিক্ষিকার মোট সংখ্যা দুই। ইংরেজি মাধ্যম হওয়ার পরেও স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা তেমন বাড়েনি বলেই দাবি শিক্ষিকাদের।
এক শিক্ষিকা বললেন, ‘‘শুধু ইংরেজি মাধ্যম করলেই হবে? স্কুলের পরিকাঠামো কোথায়? এই ভাঙা বাড়িতে কোন অভিভাবক তাঁর সন্তানকে পাঠাবে, বলুন? যে কোনও সময়ে মাথার উপরে সিমেন্টের চাঁই ভেঙে পড়তে পারে। স্কুলে তো পর্যাপ্ত ক্লাসঘরও নেই।’’
স্কুলটি ঘুরে দেখা গেল, ক্লাসঘরের ছাদের এমনই হাল, যে কোনও দিন তা ভেঙে পড়তে পারে। স্কুলের বারান্দাতেও দেখা গিয়েছে বড়সড় ফাটল। ওই শিক্ষিকা জানালেন, তাঁদের স্কুলটি আগে অন্য ঠিকানায় ছিল। সেই বাড়িটিও ছিল বিপজ্জনক অবস্থায়। ওই শিক্ষিকার কথায়, ‘‘এক বিপজ্জনক বাড়ি থেকে আর এক বিপজ্জনক বাড়িতে এলাম।’’
শহর জুড়ে পুর স্কুলের এই বেহাল চিত্রের মধ্যে ব্যতিক্রম উত্তর কলকাতার মানিকতলার কাছে বিপিন দাস স্ট্রিটের একটি হিন্দি মাধ্যম পুর স্কুল। সেখানে যেতেই শোনা গেল পড়ুয়াদের কোলাহল। তাদের কয়েক জন স্কুল শেষে ক্যারম খেলছে। মিলি পাল নামে এক শিক্ষিকা জানালেন, স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা তিন। পড়ুয়া আছে ৫০ জনের মতো। মিলি বললেন, ‘‘খালপাড় ও বস্তির ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসি স্কুলে। ওরা বেশির ভাগই হিন্দিভাষী। হিন্দি মাধ্যম ভাল স্কুল পাড়ায় নেই। ওদের স্কুলে আসাটা নিয়মিত করতে নানা রকম খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
মিলি জানান, নিজের বাড়ি থেকেই ক্যারম বোর্ড ও নানা রকম খেলনা স্কুলে নিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা বাড়লে পড়ুয়ার সংখ্যাও বাড়বে। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেও আসবে পড়ুয়ারা।’’
দক্ষিণ কলকাতার নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটের পুর স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাত অন্যান্য পুর স্কুলের থেকে কিছুটা বেশি। তবে তা-ও যে যথেষ্ট নয়, তা বলছেন শিক্ষকেরাই। ওই স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলে।
শহর জুড়ে পুর স্কুলগুলির এমন হাল কেন?
মেয়র পারিষদ (স্কুল) অভিজিৎবাবুর অবশ্য দাবি, এই বেহাল দশা আর থাকবে না। তাঁর কথায়, ‘‘মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে স্কুলগুলিতে আরও শিক্ষক নিয়োগ করা হবে খুব দ্রুত।’’ অভিজিৎবাবুর দাবি, পুরসভার নিজস্ব ভবনে যে সব স্কুল চলছে, সেগুলির অবস্থা ঠিকই আছে। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে চলা স্কুলগুলির অবস্থা খারাপ। সে সব ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলগুলির সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
মেয়র পারিষদ জানান, স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর নানা ভাবে চেষ্টা করা হয়। এ বারও করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘সারা দিন যাতে পড়ুয়ারা স্কুলে থাকতে পারে, তার জন্য কয়েকটি স্কুলে ডে-বোর্ডিং চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy