বাম আমলে কলকাতার নন্দরাম মার্কেটের আগুন নেভাতে কয়েক দিন সময় লেগেছিল। সেই ঘটনা দেখে তৎকালীন বিধাননগর পুরসভা সল্টলেকের বাজারগুলিতে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল। সেই পরিকল্পনা তৃণমূলের শাসনের এক দশকেও বাস্তবায়িত করা গেল না।
আগুন লাগলে এখন কী করণীয়?
সল্টলেকের বাজারগুলির ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ‘‘দমকল তো ডাকতেই হবে। বাজারের অনেকগুলি প্রবেশদ্বার রয়েছে। সেগুলি দিয়ে প্রাণ হাতে পালাতে হবে। তবে শুরুতেই আগুনের সঙ্গে প্রাথমিক মোকাবিলা করার তেমন ব্যবস্থা কোনও বাজারে নেই।’’ অথচ, প্রতিদিন ওই সব বাজারে ক্রেতাদের ভিড় হয়। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে ভূগর্ভস্থ জলাধার রয়েছে। বাজারের লোকজনের স্নান কিংবা শৌচকর্মের জন্য সেই জল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা সল্টলেকের বাজারগুলিতে নেই বলেই জানিয়েছেন ‘বিধাননগর কেন্দ্রীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক শ্যামল রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেক দিন ধরেই বাজারের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য পুরসভার কাছে দাবি করে আসছি।’’
অথচ, প্রতিটি বাজারই অগ্নি-নিরাপত্তার প্রশ্নে বিপদসঙ্কুল হয়ে রয়েছে। যেমন, বৃহস্পতিবার এফডি ব্লকে পুরসভার বাজার লাগোয়া ঝুপড়ির আগুনের তাপে গলে গিয়েছে বাজারের নিকাশির পাইপ।
পুরসভার বাজারের পাশে তো বটেই, এমনকি, বাজারের গা ঘেঁষেও বাঁশ ও ত্রিপলের তৈরি ঝুপড়ি বা অস্থায়ী দোকান সল্টলেকের প্রায় সর্বত্র ছেয়ে রয়েছে। এই, সিকে, সিএ, বিডি, বিজি, জিডি, আইএ-সহ একাধিক বাজারের এমনই অবস্থা। সেই সব দোকানে যেমন মুদিখানার জিনিস মেলে, তেমনই চা-টোস্টও মেলে। অর্থাৎ, আগুন জ্বেলে রান্না হয়। অথচ, কোথায় অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা!
কেন্দ্রীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যেরা জানাচ্ছেন, পুরসভার বাজারের বাইরের ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ পুর প্রশাসনের স্বীকৃতি পেলেও সিংহভাগই বেআইনি। তবে যাঁদের থেকে পুরসভা ভাড়া পায়, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদেরও কোনও মাথাব্যথা নেই। এক সদস্য তো বলেই দিলেন, ‘‘কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে সাময়িক ভাবে এ সব নিয়ে নাড়াচাড়া হয়। তার পরে সবই ঠান্ডা হয়ে যায়।’’
যদিও বৃহস্পতিবার এফডি ব্লকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে বাজারগুলিতে অগ্নি-নিরীক্ষা (ফায়ার অডিট) করানোর কথা ঘোষণা করেছেন বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) রাজেশ চিরিমার। পুরসভার নিজস্ব বাজার বা বাজারের বাইরে আগুন জ্বালাতে দেওয়া হবে না বলেও দাবি করেছেন রাজেশ। পাশাপাশি, বাজারের বাইরে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে গজিয়ে ওঠা ঝুপড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে দাবি করেছেন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তবে এই সব কত দিনে বাস্তবায়িত হয়, সেটাই প্রশ্ন।