আদিগঙ্গার বুকে পড়ে থাকা জঞ্জাল সাফ হবে কী ভাবে, তা নিয়ে চাপান-উতোর রয়েছে। কিন্তু গঙ্গার প্রাচীন শাখার বুকে এ ভাবে বর্জ্য ফেলা আটকানো হবে না কেন, এ বার সেই প্রশ্ন তুললেন পরিবেশকর্মীদের অনেকে। তাঁদের মতে, বর্জ্য ফেলে দূষণ ছড়ানোর জন্য প্রয়োজনে জরিমানা চালু করুক প্রশাসন।
এই প্রসঙ্গেই পরিবেশকর্মীদের একাংশ সম্প্রতি দিল্লির জাতীয় পরিবেশ আদালতের একটি নির্দেশের উল্লেখ করেছেন। তাঁরা জানান, দিল্লিতে বর্জ্য সংক্রান্ত একটি মামলায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারপার্সন, বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হোক। শহরাঞ্চলে কঠিন বর্জ্যকে দূষণের অন্যতম বড় উৎস বলেও আখ্যা দিয়েছেন বিচারপতি।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশকে সামনে রেখে কলকাতার পরিবেশকর্মীদের অনেকের দাবি, আদিগঙ্গার দূষণ ঠেকাতেও জরিমানার দাওয়াই চালু করুক পুর-প্রশাসন। বর্জ্য পড়ে আদিগঙ্গার যে বেহাল দশা হয়েছে, তা অবশ্য সাম্প্রতিক পরিদর্শনেই উঠে এসেছে। ১৮ ডিসেম্বর আদিগঙ্গায় গিয়ে দেখা গিয়েছিল, শুধু নিকাশি নালা নয়, প্লাস্টিক, থার্মোকলের প্লেট-সহ নানা কঠিন বর্জ্যে ভরে গিয়েছে দু’পাড় এবং জল। কোথাও কোথাও থিকথিকে বর্জ্যে নৌকা ঠেলে এগোনোই দায়। ভাটার সময়ে আদিগঙ্গার চেহারা এবং গন্ধে বোধহয় নিকাশি নালাও লজ্জা পাবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, আদিগঙ্গার দূষণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, সেখানে কোনও প্রাণীর টিকে থাকাটাই অসম্ভব। এই পরিস্থিতি ঠেকাতে জরিমানার দাওয়াইও প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে।
আদিগঙ্গার মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত মনে করেন, জরিমানার দাওয়াই দিয়েই আদিগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা থেকে নাগরিকদের আটকানো সম্ভব। কিন্তু এর পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, বর্জ্য সাফাইয়ের দায় কিন্তু পুরসভাও এড়াতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘পুরসভা সাফ না করায় লোকজনের মনে হয়েছে, আদিগঙ্গা নোংরা ফেলারই জায়গা।’’ এই পরিস্থিতিতে পুরসভারও জরিমানা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
অনেকে অবশ্য বলছেন, দিল্লির রায়ের সঙ্গে কলকাতা কী ভাবে মিলে যেতে পারে? রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইনি আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, কোনও রাজ্যের হাইকোর্ট বা জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে সামনে রেখে অন্য রাজ্যের প্রশাসন নিয়ম চালু করতেই পারে। যেমন কলকাতা হাইকোর্টের শব্দবাজি সংক্রান্ত নির্দেশকে সামনে রেখে অন্যান্য রাজ্যও করেছে। ‘‘এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সদিচ্ছার,’’ মন্তব্য তাঁর।
এ ব্যাপারে কী বলছে পুরসভা?
কলকাতার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদারের মতে, এমনটা করা যেতেই পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তাঁর দাবি, ‘‘জঞ্জাল ঠেকিয়ে দূষণ আটকানোর চেষ্টা সব রকম ভাবেই করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy