নবমীর বিকেল থেকেই মানুষের ঢল নামে মহম্মদ আলি পার্কের পুজোয়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শেষ রাতে মারলেন ওস্তাদেরা!
নবমীর রাতে শেষ লগ্নের ভি়ড় উপচে পড়েছিল মহানগরে। শহর তো বটেই, শহরতলি থেকেও গাড়ি ঢুকেছিল কলকাতায়। কিন্তু পুজোর ময়দান বলছে, বৃহস্পতিবার
শহরের বেশির ভাগ রাস্তাতেই গাড়ির চাকা জটে আটকায়নি! ভি়ড় হলেও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। লাগাতার পরিশ্রম করেও সব কিছু দু’হাতে সামাল দিয়েছেন সাদা উর্দিধারীরা।
তবে সব ক্ষেত্রে যে একেবারে রাস্তাঘাট মসৃণ ছিল, তা নয়। গড়িয়া মিতালি সঙ্ঘের ভিড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোকের সমস্যা হয়েছে।
নবমীর দুপুরে ভিড়টা একটু হাল্কা ছিল। বিকেলের পরেই বদলে যেতে থাকে ছবিটা। সন্ধ্যা গড়াতেই ট্রেনে, বাসে, গাড়িতে চেপে কলকাতায় পৌঁছে গেল ভিড়! ট্রেনে চেপে আসা ভিড় শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে সোজা হাঁটা দিয়েছে কলেজ স্কোয়ার, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দিকে। অনেকে বিধাননগর রোড স্টেশনে নেমে সংগ্রামী, পল্লিশ্রী, তেলেঙ্গাবাগান দেখে হাঁটা দিয়েছেন হাতিবাগান চত্বরে। নলিন সরকার, নবীনপল্লি, শিকদারবাগান, হাতিবাগান সর্বজনীন, কাশী বোস লেন ঘুরে ভি়ড় চলে গিয়েছে আহিরীটোলার দিকে। রীতি মেনে এ দিনও ভি়ড় টেনেছে বাগবাজার সর্বজনীন।
অনেকে আবার বাসে চেপে পৌঁছে গিয়েছেন সোজা বালিগঞ্জ। একডালিয়া এভারগ্রিন, সিংহি পার্ক ঘুরে ভিড় চলে গিয়েছে হিন্দুস্থান পার্ক, বালিগঞ্জ কালচারাল, সমাজসেবীর দিকে। সন্ধ্যা পেরোতেই আড্ডা জমেছে ম্যাডক্স স্কোয়ারে। দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা ঘুরে ভিড় হাঁটা লাগিয়েছে শিবমন্দির, মুদিয়ালি, চেতলা অগ্রণীর দিকে। ভিড়ের কারণে রাসবিহারী মো়ড়ে চাপ হলেও রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সন্ধ্যায় মহম্মদ আলি পার্কের ভিড়ে গিরিশ পার্কের কাছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বেশ কিছু ক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
শেষ বেলাতেও ভি়ড় টেনেছে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। সল্টলেকের এফ ডি ক্লাবের ডাইনোসরের মডেল দেখতে ভিড় জমিয়েছে খুদে, বড় সবাই। লেক টাউন, দমদম পার্ক ছাড়িয়ে ভিড়ের একাংশের গন্তব্য এ বার অর্জুনপুরের আমরা সবাই ক্লাব।
এ বার পুজোয় অন্যতম ‘ক্রাউড পুলার’ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। নবমীর সন্ধ্যায় মেসো ও মাসতুতো ভাইকে নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছিলেন উত্তরপাড়ার শ্রেয়সী রায়। ভিড়
ঠেলে দুগ্গাদর্শন সেরে উৎফুল্ল তিনি। কলেজ স্ট্রিট থেকে হাতিবাগানের দিকে হাঁটা দিয়েছেন শ্রেয়সীরা। কলেজ স্কোয়ারের অক্ষরধাম মন্দিরেও থিকথিকে ভিড়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্ত্রীর জোরাজুরিতে বাঘা যতীনের বাড়ি থেকে বেরোতে হয়েছে সুশান্ত সরকারকে। রাতে রাসবিহারী ঘুরে চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপে ঢুকতে দেখা গেল তাঁকে। বলছিলেন, ‘‘গত তিন রাত ধরে কলকাতার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে চষে বেড়াতে হয়েছে।’’ রাতে দমদমের বাড়ি থেকে স্কুটিতে চেপে স্ত্রীকে নিয়ে হরিদেবপুর-বেহালা চত্বরে পুজো দেখতে গিয়েছেন সৌমেন দাঁ। রাতে বেহালার রাস্তায় নরম পানীয়ে গলা ভিজোতে ভিজোতে বলছিলেন, ‘‘দমদম, সল্টলেক, উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতার সব পুজো দেখে নিয়েছি। শেষ দিনে তাই বেহালায় ঢুকলাম।’’ দক্ষিণে অবসর, সঙ্ঘশ্রীস কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ শেষ বেলাতেও দর্শক টেনেছে। সন্তোষপুরের পুজোগুলিও ভিড় ভালই ছিল।
এই প্রবল জনস্রোতে মাঝেমধ্যেই থমকে গিয়েছে যানবাহন। পুলিশ বলছে, ভিড় রাস্তা পেরোনোর ফলেই যানবাহন আটকানো হয়েছে। খোঁচার মতো রয়ে গিয়েছে অষ্টমীর রাতে একাধিক মোটরবাইক দুর্ঘটনা। কিন্তু শেষ বেলায় যে ভাবে গা়ড়ির চাকা সচল রাখা হয়েছে, তা নিয়ে অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন আমজনতা।
ঢাকের বাদ্যিতে নবমীর নিশি না পেরোনোর আর্জি। আনন্দের আবহে যেন বিষাদের সুর মিশে যাচ্ছে। ফাইনাল ম্যাচে শেষের বাঁশি বাজালেন অলক্ষ্যে রাখা রেফারি।
সব দিক সামলে আনন্দের ‘উৎসব কাপ’ জিতে নিল পুলিশ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy