—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
লালবাজারের নির্দেশ মানতে গিয়ে কি আলগা হচ্ছে নিরাপত্তার বাঁধন? দিনের বেলায় পথের সুরক্ষা কি কমে যাচ্ছে রাতের পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে? লালবাজারের তরফে অভিযোগ স্বীকার করা না হলেও পুলিশের নিচুতলায় কান পাতলেই এমন কথা শোনা যাচ্ছে। কর্মী-সঙ্কটে ভোগা বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড রাতের শিফটের পরে সকালে কর্মীদের দিয়ে স্কুলের সামনে বাড়তি দু’ঘণ্টা ডিউটি করিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে। কোথাও আবার দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে ব্যারাকে থেকে ডিউটি করা দূরের জেলার পুলিশকর্মীদের। এ ভাবে কাজের অতিরিক্ত চাপ সামলানো যাবে আর কত দিন? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে।
সপ্তাহখানেক আগে বেহালা চৌরাস্তায় লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে এক শিশু পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। সেই দুর্ঘটনার পরে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের দফতর ভাঙচুরের পাশাপাশি পুলিশের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ ওঠে, ব্যারাকে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকার কারণেই বাহিনী সময় মতো ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সেই ঘটনার পরে একাধিক নির্দেশিকা জারি করে লালবাজার। সেই লিখিত নির্দেশিকায় প্রতিটি থানা, ট্র্যাফিক গার্ড এবং ইউনিটের ব্যারাকে অন্তত ২৫ শতাংশ পুলিশকর্মীকে সব সময়ে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতা পুলিশে কর্মীর মোট সংখ্যা কমবেশি ১৪ হাজার। ২০১৪ সালের পরে বাহিনীতে নতুন করে নিয়োগ না হওয়ায় কর্মী-সঙ্কট এখন তীব্র। বাহিনীতে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েক হাজার কর্মী কম থাকার কারণে প্রতিটি থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের কাজে তার প্রভাব পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে লালবাজারের নির্দেশ মতো রাতে বাহিনীর ২৫ শতাংশ কর্মীকে ডিউটিতে রেখে থানার কাজ পরিচালনা করা গেলেও একাধিক ট্র্যাফিক গার্ড সমস্যায় পড়েছে বলে অভিযোগ। কারণ, রাতে কর্মী-সংখ্যা বাড়ায় বহু গার্ডেই দিনের কর্মী-সংখ্যা বাধ্য হয়ে কমাতে হয়েছে।
একাধিক ট্র্যাফিক গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, আগে রাতে তুলনামূলক ভাবে কম সংখ্যক কর্মী রেখে দিনের বেলাতেই পথ-নিরাপত্তায় বেশি জোর দেওয়া হত। কিন্তু লালবাজারের নির্দেশ মানতে গিয়ে দিনের সেই কর্মী-সংখ্যা কিছুটা হলেও কমাতে হয়েছে। বহু ট্র্যাফিক গার্ডে আবার রাতের ডিউটিতে আসা কর্মীদের সকাল সাড়ে সাতটার পরিবর্তে সাড়ে ন’টা পর্যন্ত রেখে পরিস্থিতি সামলানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি, ট্র্যাফিক গার্ডের যে সমস্ত কর্মী ব্যারাকে থাকেন, তাঁদের একটি বড় অংশকে রাতের পাশাপাশি পরের দিন সকালের বেশ কিছুটা সময় রেখে দিয়ে ব্যারাকে পাঠানো হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে।
উত্তর কলকাতার একটি ট্র্যাফিক গার্ডের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘টানা ডিউটি তো দিনের পর দিন করানো যায় না! আপাতত রাতের ডিউটিতে যাঁরা থাকছেন, তাঁরাই পরদিন সকালে স্কুলের সামনে কয়েক ঘণ্টা বাড়তি ডিউটি করছেন। দিনের কর্মী-সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে মাঝেমধ্যেই রাতে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অসুবিধা হলেও কিছু উপায় তো থাকছে না।’’
কিন্তু কর্মী-সংখ্যা না বাড়ালে ডিউটির এই চাপ এ ভাবে কত দিন নেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশ। বাইপাসে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টের কথায়, ‘‘আমাদের সবই সহ্য করে নিতে হচ্ছে। সমস্যা হলেও কিছুই করার থাকছে না।’’
লালবাজারের পুলিশকর্তারা বাহিনীতে কর্মী-সঙ্কটের বিষয়টি মেনে নিলেও নিরাপত্তায় ফাঁক থাকার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, বাহিনীর একটি বড় অংশ তো ব্যারাকে থেকেই ডিউটি করেন। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্দেশিকার জেরে কোথাও সমস্যার বিষয় নজরে আসেনি। দিনের বেলাতেও আগের মতোই শহরের রাস্তায় পর্যাপ্ত কর্মী থাকছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy