Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Leukemia

রক্তের সঙ্কটে বিপর্যস্ত লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুরা

চিকিৎসকদের বক্তব্য, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের ক্ষেত্রে এক বার রক্ত দেওয়ার পরে আবার কবে লাগবে, তা আগাম বলা সম্ভব। কিন্তু লিউকেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে তা কোনও ভাবেই বলা যায় না।

অসহায়: পার্ক সার্কাসের একটি হাসপাতালে লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুরা। রক্ত না পেয়ে সমস্যায় পড়ছে তারা। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: পার্ক সার্কাসের একটি হাসপাতালে লিউকেমিয়া আক্রান্ত শিশুরা। রক্ত না পেয়ে সমস্যায় পড়ছে তারা। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৭
Share: Save:

হাসপাতালে ভর্তি পাঁচ বছরের মেয়ে। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুটির জন্য অবিলম্বে রক্ত ও প্লেটলেট লাগবে। এ দিকে পর্যাপ্ত রক্ত নেই হাসপাতালে। অগত্যা হন্যে হয়ে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘুরে তা জোগাড় করেছিলেন শিশুর বাবা। সেই দিনের কথা মনে করতে, আজও কেঁপে ওঠেন বাইপাসের পঞ্চান্নগ্রামের সাগর সরকার।

‘‘মেয়ের হিমোগ্লোবিন ও প্লেটলেটের মাত্রা অনেক নেমে গিয়েছিল। কিন্তু কোথাও ওই গ্রুপের রক্ত পাচ্ছিলাম না। মনে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে শুধুই ছুটে বেড়িয়েছি।’’ থামলেন সাগর। আরও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তাঁর স্ত্রী বুলার। তাঁর কথায়, ‘‘পাশের শয্যার বাচ্চার আচমকাই রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতালে সেই গ্রুপের রক্ত নেই। অগত্যা আমাদের উপরে বাচ্চার ভার দিয়ে রাত দেড়টায় ওই বাচ্চার মা বেরিয়ে পড়েন রক্তের খোঁজে অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে।’’

করোনা পরিস্থিতির কারণে রক্ত-সঙ্কটে ভুগতে হচ্ছে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত বহু শিশুকেই। চিকিৎসকেরাও বলছেন, “পরিস্থিতি সত্যিই ভয়ঙ্কর।” কোভিড পরিস্থিতির কারণে সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে রক্তের টান চলছেই। ফলে বেসরকারি জায়গা থেকে টাকা দিয়ে রক্ত কিনতে গিয়ে পকেটেও টান পড়ছে বলে জানাচ্ছেন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের পরিজনেরা।

আরও পড়ুন: মোদীর ৬ বছরের পুরনো টুইট দিয়েই শাহি-ভোজনকে খোঁচা তৃণমূলের

চিকিৎসকদের বক্তব্য, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের ক্ষেত্রে এক বার রক্ত দেওয়ার পরে আবার কবে লাগবে, তা আগাম বলা সম্ভব। কিন্তু লিউকেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে তা কোনও ভাবেই বলা যায় না। কেউ যদি অ্যাকিউট মায়লয়েড লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়, তার ক্ষেত্রে তো অনবরত প্লেটলেট এবং রক্ত দিতে হয়। ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের শিশু-ক্যানসার চিকিৎসক দীপশিখা মাইতির কথায়, ‘‘লিউকেমিয়া রোগীর যখন-তখন রক্ত ও প্লেটলেট লাগতে পারে। করোনায় রক্তের সঙ্কট কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় ওদের সমস্যা বাড়ছে। যে শিশুকে এক ঘণ্টার মধ্যে প্লেটলেট দিতে হবে, সেটা হয়তো পৌঁছচ্ছে ২৪ ঘণ্টা পরে। ওই সময়টা খুব ঝুঁকির।’’

আরও পড়ুন: রবিবার অমিত বিশ্বভারতীতে, রোড শো করবেন বোলপুরে

অন্য চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির ভাঁড়ার প্রায় ফাঁকা থাকায় অনেক সময়ই নির্দিষ্ট গ্রুপের প্লেটলেট না পেয়ে অন্য গ্রুপের প্লেটলেট দিতে হচ্ছে। তবে একই গ্রুপের প্লেটলেট যতটা কার্যকরী, অন্য গ্রুপের ততটা নয়, জানাচ্ছেন দীপশিখাদেবী। চিকিৎসকেরা এও জানাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার ঠিক রাখতে বহু ক্ষেত্রেই শিশুর পরিজনকে রক্তদাতা আনতে বলা হচ্ছে।

লকডাউন পর্বে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত বহু শিশুই রক্ত নিতে না পারায় আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো জানাই ছিল যে লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে রক্তের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু রক্ত যদি সে ভাবে দান না করা হয়, তা হলে তো চাহিদা ও জোগানের ব্যবধান বাড়বেই। সকলকে বুঝতে হবে ওই শিশুরা রক্ত ছাড়া বাঁচে না।’’

করোনায় রক্তদান শিবির যে জোর ধাক্কা খেয়েছে, মানছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। গত ২৮ নভেম্বর এক নির্দেশিকা জারি করে সব জেলাকে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে দফতর। সংশ্লিষ্ট জেলাকে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট কত ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে হবে তা-ও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।

রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত সমাজকর্মী পার্থ সরকার বলেন, ‘‘এমনিতেই রক্তদান সম্পর্কে এখনও সকলে সচেতন নন। করোনায় সেই আতঙ্ক বেড়েছে। এক ইউনিট রক্ত তিনটি শিশুর জীবন বাঁচাতে পারে। বছরে তিন-চার বার এক জন পূর্ণ বয়স্ক রক্তদান করলে শরীর ভাল থাকে, শহর এবং গ্রামে সেই প্রচারে জোর দেওয়া উচিত।’’ পার্থবাবুরা শনিবারই পার্ক সার্কাসের এক শিশু হাসপাতালে শিবিরের আয়োজন করেন। সেখানে ৭৬ জনের মধ্যে কলকাতা পুলিশের রিজ়ার্ভ ফোর্সের ৪৯ জন কর্মীও ছিলেন।

যদিও চাহিদার তুলনায় এই প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র। কিন্তু রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক এবং কর্মীদের মতে, এ ভাবেই ছোট ছোট প্রয়াস ছড়িয়ে পড়লে রক্ত-সঙ্কট কাটতে পারে। না হলে একের পর এক শৈশব বিপন্ন হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Leukemia Blood Cancer Blood sample crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE