Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Polba Accident

শহরে নিয়ম ভাঙাই যেন ‘নিয়ম’ স্কুলগাড়ির

পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের কর্তারা মেনে নিচ্ছেন, শহর ও শহরতলিতে প্রতিদিন যে সমস্ত পুলকার স্কুলগাড়ি হিসেবে চলে, সেগুলির অধিকাংশই বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।

অঘটন: পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। শুক্রবার। ছবি: তাপস ঘোষ

অঘটন: পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। শুক্রবার। ছবি: তাপস ঘোষ

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৩
Share: Save:

রাস্তার অবস্থা যথেষ্ট ভাল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শুক্রবার হুগলির পোলবায় নয়ানজুলিতে উল্টে পড়েছে পড়ুয়া-বোঝাই স্কুলগাড়ি। এই ঘটনায় গাড়িটির বেপরোয়া গতিকেই দায়ী করছে পুলিশ। এ ছাড়াও জানা গিয়েছে, দু’বছর আগেই গাড়িটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই দুর্ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই কলকাতার স্কুলগাড়ি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের নির্দিষ্ট করে
দেওয়া নিয়ম কি আদৌ মেনে চলে ওই সমস্ত গাড়ি?

পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের কর্তারা মেনে নিচ্ছেন, শহর ও শহরতলিতে প্রতিদিন যে সমস্ত পুলকার স্কুলগাড়ি হিসেবে চলে, সেগুলির অধিকাংশই বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। গত নভেম্বরে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়, চালক ও খালাসির নাম, ড্রাইভিং লাইসেন্স-সহ স্কুলগাড়ি সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য স্কুলগুলিকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ওই সমস্ত তথ্য স্থানীয় থানার মাধ্যমেও যাচাই করিয়ে নিতে পারবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি স্কুলগাড়ির রং হতে হবে হলুদ।

স্কুলশিক্ষা দফতরের এই সমস্ত নির্দেশ কি মেনে চলছে স্কুলগুলি? পার্ক সার্কাসের ডন বস্কো স্কুলের প্রিন্সিপাল বিকাশ মণ্ডল বললেন, ‘‘যে সমস্ত পুলকারের উপরে আমাদের স্কুলের পড়ুয়ারা নির্ভরশীল, সেগুলির সব কাগজপত্র, বিশেষ করে ফিটনেস সার্টিফিকেট, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রতিলিপি আমাদের কাছে রেখে দিই।’’ ক্যালকাটা গার্লস স্কুলের প্রিন্সিপাল বাসন্তী বিশ্বাসের কথায়, ‘‘স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশ মেনেই সমস্ত পুলকারের নথি জমা রাখা হয়। কিন্তু রাস্তায় তারা কী করছে, তা দেখা আমাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’’

স্কুলগাড়ি হিসেবে চলা বহু পুলকারই যে সরকারি নিয়ম মানছে না, তা স্বীকার করছেন ‘পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুদীপ দত্ত। আবার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ব্যক্তিগত বহু গাড়িকে পুলকার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার পারমিটবিহীন এবং ১৫ বছরের পুরনো বাস বা গাড়িও পুলকার হিসেবে দিব্যি রাস্তায় নামছে। সম্প্রতি বিষয়টি পরিবহণমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে ওই সংগঠনের তরফে।

স্কুলগাড়ি নিয়ে পরিবহণ দফতরের নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। যেমন, আসন সংখ্যার বেশি পড়ুয়া তোলা যাবে না। গাড়িতে যতগুলি দরজা থাকবে, বাচ্চাদের তোলা-নামানোর জন্য তত জন হেল্পার রাখতে হবে। গাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। মেয়ে পড়ুয়া থাকলে অবশ্যই মহিলা কর্মী রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলবে না গাড়ি। চালককে অভিজ্ঞ এবং বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে।

পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কাগজপত্রের পাশাপাশি প্রতিটি স্কুলগাড়ির যন্ত্রাংশও নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা করানো উচিত।’’ অভিযোগ, বহু লজ্‌ঝড়ে গাড়ি স্কুলের পুলকার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই সমস্ত গাড়িতে রিসোল করা টায়ার লাগানো থাকে, যা সব সময়েই খুব বিপজ্জনক। গাড়ির মালিকদের অনেকেই আবার পুরনো যন্ত্রাংশ রেখে দিয়ে উপরের কাঠামো বদলে নেন, যাতে গাড়িটি বেশি পুরনো বলে মনে না হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, সাধারণত স্কুলে যাওয়ার সময়ে কোনও পুলকারকেই আটকানো হয় না। তবে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে সেগুলির কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘পুলকারের কাগজও পরীক্ষা করা হয়। আইন ভাঙলে মামলাও করা হয়। পুলকার চালকদের সচেতনতা বাড়াতে অনেক শিবিরও করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Polba Accident Pool Car Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy