প্রতীকী ছবি।
রান্নার যে সাদা তেল বাজারে পাওয়া যায়, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যানোলা নামে এক ধরনের ভোজ্য তেল। যা তৈরি হয় কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিতে।
কানাডা থেকে সেই তেল বাংলাদেশ ঘুরে ভারতে আসছিল। তবে এই আমদানির কথা ফেব্রুয়ারির আগে জানতে পারেনি ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)। আচমকাই অফিসারেরা খবর পান, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের কাছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা ঘোজাডাঙা দিয়ে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে ১৫ হাজার মেট্রিক টন সর্ষের তেল আমদানি করা হয়েছে। সাধারণত ভারতে সর্ষের তেল তৈরি হয়। বিদেশ থেকে তা আমদানির তেমন প্রয়োজন পড়ে না। তথ্য ঘেঁটে গোয়েন্দারা দেখেন, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯— এই তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মেরেকেটে বছরে ৫০০ থেকে দেড় হাজার মেট্রিক টন সর্ষের তেল আমদানি হয়েছে। তা হলে গত দু’মাসে হঠাৎ এত সর্ষের তেল আমদানির দরকার হল কেন?
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা দেখেন, বড় ট্যাঙ্কারে ক্যানোলা তেল থাকলেও খাতায়কলমে তা সর্ষের তেল বলে দেখানো হয়েছে। এবং বলা হয়েছে, সেই তেল বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে। ডিআরআই জানাচ্ছে, এই সব তথ্য দেওয়ার পিছনে আসল উদ্দেশ্য ছিল কর ফাঁকি দেওয়া। এ ভাবে প্রায় ৯ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সল্টলেকের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী প্রদীপ্ত মজুমদারকে। শনিবার আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
কী ভাবে ফাঁকি দেওয়া হত কর?
ডিআরআই সূত্রের খবর, বাংলাদেশ-সহ প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের একটি চুক্তি রয়েছে। তার নাম ‘সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ (সাফটা)। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভোজ্য তেল-সহ বেশ কিছু দ্রব্য আমদানি করলে কর দিতে হয় না। তবে সেই দ্রব্য সেই দেশে তৈরি হতে হবে। ক্যানোলা তেল কোনও ভাবেই বাংলাদেশে তৈরি হয় না।
তখনই সন্দেহ বাড়ে গোয়েন্দাদের। বাজেয়াপ্ত হওয়া তেলের নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে জানা যায়, সেটি সর্ষের তেল নয়। যে সংস্থা ওই তেল আমদানি করছিল, তার দুই ডিরেক্টরকে ধরে ডিআরআই। তদন্তে উঠে আসে, সুরেশ হালদার এবং পবন সাউ নামে ওই দু’জন পেশায় গাড়িচালক। তাঁরা পড়াশোনা করেছেন সপ্তম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ডিআরআই জানিয়েছে, এই দু’জনকে সামনে রেখে আসল ব্যবসা চালাচ্ছিলেন প্রদীপ্ত। তাঁর নিজের সংস্থার অফিস থেকে ক্যানোলা তেল আমদানি সংক্রান্ত কাগজপত্রও পাওয়া গিয়েছে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই প্রথম নয়। বছরখানেক আগে একই কায়দায় সর্ষের তেল বলে বাংলাদেশ থেকে পাম তেল আমদানি করে ১৮৭ কোটি টাকারও বেশি কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ্তর বিরুদ্ধে। সে বার তাঁর সঙ্গে তাঁর ছেলেকেও গ্রেফতার করেছিল ডিআরআই। গোয়েন্দা-কর্তাদের অনুমান, বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল আমদানি করার সময়ে অভিনব এমন উপায়ে কর ফাঁকি দেওয়ার পিছনে আরও বড় মাথা রয়েছে। তাঁদের কেউ দিল্লি, কেউ উত্তরপ্রদেশে থাকেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy