শুনশান: পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। মঙ্গলবার, চম্পাহাটি বাজিবাজারে। নিজস্ব চিত্র
‘‘জাহান্নামে যাক রাজস্থান!’’ মঙ্গলবার বেলা ১১টা। করোনার কথা মাথায় রেখে রাজস্থান যে এ বছর আতশবাজি পোড়ানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রসঙ্গ তুলতেই এ ভাবে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গির এক বাজি ব্যবসায়ী। স্থানীয় বাজি বাজারে নিজের দোকানের সামনে বসে ছিলেন তিনি।
পাশাপাশি একই রকম পসরা সাজিয়ে বসেছে আরও কয়েকটি দোকান। কিন্তু সকাল থেকে খদ্দেরের দেখা নেই। অন্যান্য বছর লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে এই বাজারে পা ফেলার জায়গা মেলে না। এ বারের পরিস্থিতি একেবারে উল্টো। বিক্রেতারা কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন।
মহেশতলার নন্দরামপুর, বলরামপুর ও পুটখালি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই তৈরি হয় আতশবাজি। বাড়ির মহিলারাও হাত লাগান সেই কাজে। এমনই একটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, দুপুরে মহিলারা তৈরি করছেন ফুলঝুরি ও চরকি। তবে নুঙ্গির বাজি বাজারের অধিকাংশ দোকানই ভর্তি শিবকাশির আতশবাজিতে। দোকানিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তাঁদের আশঙ্কা, করোনা-সঙ্কটে বাজি বিক্রি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: সিরিয়ালে কাজ দেওয়ার নামে ফের প্রতারণা, ধৃত এক
আরও পড়ুন: হাসপাতাল জানে ‘নিখোঁজ’, সন্ধান ওয়ার্ডেই
বাজি ব্যবসায়ীরা জানালেন, করোনার বিষয়টি তাঁদেরও মাথায় রয়েছে। কিন্তু বলরামপুর, নন্দরামপুর, পুটখালি-সহ আশপাশের গ্রামের হাজার পনেরো পরিবার বাজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বাজি ব্যবসায়ী সমিতির তরফে শুকদেব নস্কর বললেন, ‘‘এলাকায় তো বাজি তৈরি হয়েছেই, শিবকাশি থেকেও প্রচুর বাজি কিনে আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।’’
একই চিত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার আর এক বাজি তালুক চম্পাহাটির। দুর্গাপুজোর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই চম্পাহাটির হারাল, সোলগোলিয়া, কমলপুর, নাড়িদানা, বেগমপুরের মতো বিভিন্ন গ্রামে আতশবাজি তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এলাকার বাজি ব্যবসায়ীরা জানালেন, দুর্গাপুজোর পর থেকে বাজি বিক্রিও অল্পস্বল্প শুরু হয়ে গিয়েছিল। বাজি ব্যবসায়ীদের অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে বাজি তৈরির বরাত দিয়েছিলেন। কিন্তু বাজির উপরে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় তাঁরা এখন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। লক্ষ্মীপুজোর পরে চম্পাহাটি বাজারে থিকথিকে ভিড় ছিল। এখন সব শুনশান।
রাস্তার দু’পাশে পরপর দোকান। এখানেও স্থানীয়দের তৈরি আতশবাজির পাশাপাশি শিবকাশি থেকে প্রচুর বাজি এনে মজুত করা হয়েছে। কিন্তু বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। এক বিক্রেতা বললেন, ‘‘গত রবিবার অল্প কয়েক জন ক্রেতা এসেছিলেন। একটু-আধটু বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু সোমবার থেকে কারও দেখা নেই।’’
চম্পাহাটি আবার শব্দবাজির আঁতুড়ঘর বলেও পরিচিত। আতশবাজির আড়ালেই বিক্রি হয় চকলেট বোমা। এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘এ বার শুরু থেকেই পুলিশের কঠোর নজরদারি। চকলেট তৈরি করা এখন খুব ঝুঁকির।’’ সম্প্রতি কয়েক লক্ষ চকলেট বোমা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় হারালের তিন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’
তবে বাজি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, চকলেটের ক্রেতারা এ বাজারেও আসবেন। এলাকা থেকে অনেক দূরের কোনও গ্রামে হয়তো চকলেট বোমা তৈরি করতে হবে। সেখান থেকে নানা জায়গায় ছড়িয়ে যাবে সেগুলি। বিধি-নিষেধ যদি আরোপ হয়, তা হলে আতশবাজি বিক্রি কমলেও চকলেটের বিক্রি আটকানো যাবে না। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘কড়াকড়ি যতই হোক, চকলেট লোকে ফাটাবেই।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy