ছবি: শুভেন্দু দাস
ঐতিহাসিক ভবনে পুলিশ সংগ্রহশালা
সময়টা ১৮১৪। মানিকতলার অদূরে ৯৩ আপার সারকুলার রোডের উপরে ১৫ বিঘা জায়গায় তিনটি পুকুর-সহ একটি সুদৃশ্য দোতলা বাড়ি তৈরি করালেন রাজা রামমোহন রায়। নতুন বাড়িতেই দেশিবিদেশি বন্ধুদের সঙ্গেও তিনি নিয়মিত আড্ডায় মিলিত হতেন। বাড়িটিও ছিল অভিনব। সাজানো ফুলের বাগান পেরিয়ে বিশাল থামযুক্ত উঁচু দোতলা বাড়ি। দু’পাশে বড় বড় আট খানা ঘর। ঢুকে বাঁদিকে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় যাওয়ার পথ। উপরে দুটি ঘর এবং দুপাশে দুটি খোলা ছাদ। বাড়ির পেছনে আস্তাবল, গাড়ি রাখার ঘর। ১৬ বছর এই বাড়িতে থাকার পর ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে ১৮৩০-এ টুলো কোম্পানির নিলামে রামমোহন বাড়িটি বিক্রি করে দেন। নানা হাত ঘুরে ১৮৭৪-এ বাড়িটি বেঙ্গল পুলিশ নেয়। সেখানে সুকিয়া স্ট্রিট থানা ও অন্যান্য সরকারি বিভাগের কাজকর্ম হত। ১৯১৮ সালে বাংলা সরকার ১৫,৯০৯ টাকায় বাগানবাড়িটি কিনে নেয়। তখন থেকে এটি ডি সি (নর্থ) ও অন্য পুলিশ আধিকারিকদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯৯০-এ কলকাতার তিনশো বছর উপলক্ষে ময়দানে পুলিশের ধারাবাহিক ইতিহাস নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়। পরে সরকারি উদ্যোগ, ভারতীয় সংগ্রহশালা ও নানা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় রামমোহনের মূল বাড়িটির যথাযথ সংস্কার করে সেখানেই স্থায়ী পুলিশ মিউজিয়াম গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। সংগ্রহশালা নির্মাণের সময় ভারতীয় সংগ্রহশালার তৎকালীন অধিকর্তা শক্তিকালী বসু সহায়তা করেন। ১৯৯৬ সালের অগস্টে জনসাধারণের জন্যে এই সংগ্রহশালা খুলে দেওয়া হয়। তবে বাড়ি সংলগ্ন পুকুরগুলো আজ আর নেই। সহকারী কমিশনার (মিউজিয়াম) রাজীব গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, একতলায় সাতটি ও দোতলায় একটি মোট ৮টি গ্যালারি নিয়ে এই সংগ্রহশালা। ঢুকেই মিউজিয়ামের অফিস ঘরে রয়েছে রামমোহনের একটি অর্ধাবয়ব মূর্তি। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বিপ্লবীদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও নানা সামগ্রী, বইবোমা, বাজেয়াপ্ত করা বই, পোস্টার, লিফলেট-এর পাশাপাশি পুলিশের ব্যবহৃত বন্দুক, রাইফেল, পিস্তল, মাস্কেট, ওয়্যারলেস ফোন, সমস্তই বিষয়ভিত্তিক ভাবে সাজানো রয়েছে আটটি পৃথক গ্যালারিতে। ঋষি অরবিন্দের ব্যবহৃত অস্ত্র ও আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার ঘটনাক্রমও রয়েছে। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার পর বেলেঘাটায় মহাত্মা গাঁধীর কাছে অস্ত্র সমর্পণের ঐতিহাসিক ছবি সারা দেওয়াল জু়ড়ে। স্বাধীনতার আগে-পরে কলকাতা পুলিশের পূর্ণাঙ্গ ইতিবৃত্ত উঠে এসেছে ঐতিহাসিক ভবনে অবস্থিত এই সংগ্রহশালায়।
শতবর্ষ
‘আমাদের শিল্পকর্মের মধ্যে সেই মিল এমন করে যেন ঘটে যাতে আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি থেকে লাফ দিয়ে উঁচু হয়ে আকাশের ঠোঁটে ঠোঁট রাখা পর্যন্ত একই সুছন্দ ব্যাপ্তির মধ্যে প্রকাশ পায়। সেই বিস্তৃতি চাই আমাদের।’ লিখেছিলেন শম্ভু মিত্র। তাঁর শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে ২২ অগস্ট। প্রাক্তনী হওয়ার সুবাদে সে দিন বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা আয়োজন করেছেন এক বৈঠকি আড্ডার, উত্তম মঞ্চে বিকেল ৫টায়। শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজয়লক্ষ্মী বর্মন বিভাস চক্রবর্তী অশোক মুখোপাধ্যায় সৌমিত্র বসু থাকবেন সে আড্ডায়, যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন। বিজয়লক্ষ্মীর আবৃত্তির সঙ্গে থাকবে বহুরূপী-র কোলাজ ‘তোমারে স্মরণ করি রূপকার’। থাকবে আলোকচিত্রে সাজানো তাঁর জীবনপঞ্জি। ১৫ অগস্ট সন্ধে ৬টায় শুরু হয়েছে সুখচর পঞ্চম-এর শ্রদ্ধার্ঘ্য, সোদপুর জলসাঘর-এ, চলবে ২৩ পর্যন্ত। তাঁকে নিয়ে প্রদর্শনী আর স্মৃতিচারণ। ২৩ অগস্ট সন্ধে ৬টায় চলচ্চিত্র-নাট্য পরিচালক গৌতম হালদারের ‘পুরানো সেই দিনের কথা’।
কারুবাসনা
সেই ছিল তাঁর প্রথম উপন্যাস৷ কারুবাসনা। নামকরণ অবশ্য জীবনানন্দ দাশ নিজে করেননি৷ উপন্যাসের একটি বিশেষ শব্দকে পরে নাম হিসেবে দেওয়া হয়েছে। সেই নামেই, শেক্সপিয়রকে মিথ্যে প্রমাণ করে, অনেক কিছু এসেছে৷ কাব্যপ্রেমিক বেকার হেম ও তার স্ত্রী কল্যাণীর গল্প হয়ে উঠেছে সৃজনশীল মানুষের চিরন্তন গল্প। হেম শেষ চেষ্টা করতে শহরে আসে; কিন্তু নাগরিক সভ্যতায় সে ক্রমশ হাঁপিয়ে ওঠে। বিপর্যস্ত, অসহায় আধুনিক মানুষের গল্প এ বার কলকাতার মঞ্চে৷ পঞ্চম বৈদিক-এর নতুন নাটক ‘কারুবাসনা’র প্রথম অভিনয় ২২ অগস্ট সন্ধেয় অ্যাকাডেমিতে৷ নাট্যরূপকার ও নির্দেশক অর্পিতা ঘোষ জানালেন, নাটকে জয় গোস্বামী অভিনয় করছেন একটি বিশেষ ভূমিকায় (সঙ্গে মহড়ার ছবি)৷ আছেন সুজন মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, বাবু দত্তরায়, অভিজিৎ মিশ্র প্রমুখ৷ ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত এই প্রথম কোনও নাটকের আবহসঙ্গীত তৈরি করলেন৷ সিনোগ্রাফি করেছেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়৷ শনিবার বিকেল ৩টেয় শাঁওলী মিত্রের ‘কথা অমৃতসমান’ দিয়ে শুরু পঞ্চম বৈদিকের ৩২ বছরের নাট্যোৎসব৷ ২৭ পর্যন্ত দেখা যাবে দলেরই নানা নাটক৷
যৌথ উদ্যোগ
পৃথিবী জুড়েই রাষ্ট্রপ্রধানরা দুর্বলতর রাষ্ট্রকে কব্জা করতে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বের খেলা চালাতে থাকেন। রামায়ণ-এ এমনটা বহু আগেই দেখা িগয়েছে। সেখানে জমি দখল-সংক্রান্ত লড়াইয়ের রূপক সীতা। রাম লক্ষ্মণ সুগ্রীবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সীতা উদ্ধারের পরিকল্পনা করেন। রামায়ণের ‘কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড’ ও ‘সুন্দরকাণ্ড’ নিয়ে নাট্যসংস্থা কল্যাণী কলামণ্ডলম তৈরি করেছে ‘সীতার অন্বেষণে’। ফ্রান্সের ক্রেয়া নাট্যসংস্থার যৌথ উদ্যোগে তারা এই নাটকটিই করছে ফ্রান্সে। সংস্থার ছ’জন শিল্পী ক্রেয়ার চার জন ফরাসি শিল্পীর সঙ্গে ফ্রান্সের নানা জায়গায় এটি মঞ্চস্থ করছেন। পরিচালনায় কলামণ্ডলমের শান্তনু দাস এবং ক্রেয়া-র ওদ মারেশাল। এ ছাড়াও ওরা মঞ্চস্থ করছে ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে তৈরি ‘মলুয়া সুন্দরীর পালা’। সহায়তায় আলিয়ঁস ফ্রঁস্যাজ ও আই সি সি আর।
গানের ডালি
মৃত্যুর দীর্ঘ দিন পর প্রকাশিত হচ্ছে দেবব্রত বিশ্বাসের বেশ কিছু গান। হিন্দুস্তান ইন্সিওরেন্সে তাঁর সহকর্মী নবেন্দু চৌধুরী গানগুলি রেকর্ড করেছিলেন বিভিন্ন সময়। ১০১টি গানে সাজানো দুটি সিডি ‘বাদল হাওয়া পাগল হলো’ ও ‘সাজিয়ে এনেছি ডালা’ শিল্পীর ১০৪তম জন্মদিনের প্রাক্কালে ২১ অগস্ট বিকেল ৫টায় শিশির মঞ্চে প্রকাশ করবেন সুমিত্রা সেন। ‘ব্রাত্যজনের আত্মগান’ নিয়ে বলবেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। স্মৃতিচারণে প্রদীপ ঘোষ। গানে শ্রাবণী সেন শ্রীকান্ত আচার্য অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। আয়োজনে দেবব্রত বিশ্বাস স্মরণ কমিটি। এ দিকে প্রায় সাত বছর পর আবার একক গানে প্রবুদ্ধ রাহা। ১৯ অগস্ট সন্ধে ছ’টায় শিশির মঞ্চে। রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু হলেও শিল্পীর কণ্ঠে ক্রমে শোনা যাবে পঞ্চকবির গান আর পুরাতন বাংলা গান। আয়োজনে শ্রুতিবৃত্ত। অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থ বন্যাত্রাণে দান করা হবে।
স্বাধীনতার স্বরূপ
‘রবীনের যে কোনও কাজই আমার কাছে উত্তেজক বলে মনে হয়’, বলছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ‘একটা অদ্ভুত নিজস্বতা আছে ওর ছবির মধ্যে!’ রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের জন্ম ১৯২৯ সালে, হাওড়ায়। ১৯৬০-এর দশকে যে সব শিল্পী প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তিনি তাঁদের অন্যতম। সম্প্রতি দিল্লিতে তাঁর এক প্রদর্শনী উপলক্ষে দিল্লি আর্ট গ্যালারি প্রকাশ করেছে তাঁর শিল্পভাবনা বইটি। স্বাধীনতার ৬৮ বছর উপলক্ষে ক্যালকাটা পেন্টার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য এই শিল্পীর ‘কালার্স অফ ফ্রেন্ডশিপ’ শীর্ষক প্রদর্শনী এখন গোর্কি সদনে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে (সঙ্গের ছবি) ছিলেন শঙ্খ ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রমুখ। এখানে ৩৭টি ড্রয়িং পেইন্টিং-এ প্রতিভাত হয়েছে শিল্পীর চোখে স্বাধীনতার স্বরূপ। দেখানো হল শিল্পীকে নিয়ে অরুণ চক্রবর্তী পরিচালিত তথ্যচিত্র। প্রদর্শনী ২৯ পর্যন্ত।
কবিতাজীবন
‘এক জীবনের শূন্যতাকে অন্য জীবন ভরিয়ে তোলে/ একটা জীবন জবুথবু, অন্যজীবন হাওয়া দোলে...’, এমন কবিতা যিনি লিখতেন, বড় স্বল্পায়ু ছিল তাঁর জীবন। সুব্রত চক্রবর্তী (১৯৪১-১৯৮০)। বাঙালির মনে তাঁর বিবিজান ও অন্যান্য কবিতা, বালক জানে না, নীল অপেরা কাব্যগ্রন্থের চিরকেলে ঠাঁই। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন ‘কবিতা লেখালেখির এক স্রোতস্বিনী অথচ গভীর ও তাৎপর্যময় ধারাকে।’ ২২ অগস্ট সন্ধে ৬টায় জীবনানন্দ সভাঘরে প্রকাশ পাবে তাঁর কবিতাসংগ্রহ (পরম্পরা)। বইয়ের শুরুতেই তাঁকে নিয়ে লিখেছেন অরণি বসু: ‘ওই যাত্রা একা একা, ওই যাত্রা দীপ্তির আঁধারে’। কবিপত্নী মালার হাতে সে সন্ধ্যায় বইটি তুলে দেবেন বুদ্ধদেবই। তারপর আলোচনা, কবিতা পাঠ।
নতুন আলো
বন্দিজীবনের কালো দিনগুলোয় এক ঝলক নতুন আলো! এমনটাই হতে চলেছে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ২৩ জন বন্দির জীবনে, যাদের ১৬ জনই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। আর ওদের মধ্যে থেকেই অভিনেতা অভিনেত্রী খুঁজে পেয়েছেন সোহিনী সেনগুপ্ত। নান্দীকারের পরিচালনায় ওরা অভিনয় করবে ‘ভালোমানুষ’ নাটক। ভাল মানুষ কে, সেই প্রশ্নই তুলে ধরছে নাটকটি। বছর দেড়েক আগে দমদম সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এর সূচনা। দীর্ঘ ওয়ার্কশপ করান নান্দীকারের সম্রাট, সপ্তর্ষি, অর্ঘ্য। সোহিনীর কথায়, ‘‘ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাই ছিল প্রথম চ্যালেঞ্জ। নইলে ওরা সহজ হতে পারত না। ওদের অনেকেই নিরক্ষর। কিন্তু শুনে শুনে মনে রেখে স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করেছে। যতবার বলা হয়েছে রিহার্সাল করেছে।’’ এই প্রথম দমদম সংশোধনাগারের বন্দিরা নাটকে নামছে। প্রথম অভিনয় ২০ অগস্ট অ্যাকাডেমিতে।
শূলধারিণী
ফি-বছর এই সময়ে দেবীরূপ নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন এই শহরে। সেনসোরিয়াম আয়োজিত ‘শূলধারিণী’ শীর্ষক চিত্র-ভাস্কর্যের প্রদর্শনী ২১ অগস্ট সন্ধেয় উদ্বোধন করবেন নয়নিকা চট্টোপাধ্যায়। থাকবেন বাণী বসু এবং অন্যরা। আইসিসিআর-এর রামকিঙ্কর বেজ স্কাল্পচার কোর্টে দেখা যাবে ৩৪ জন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর চোখে দেবী দুর্গার রূপ। প্রদর্শনীটি চলবে ২৮ অগস্ট পর্যন্ত, ২-৭টা প্রতিদিন। সঙ্গে তারই একটি ছবি, শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘ধন্যবাদান্ত্যে’
বাংলার সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরির জন্মদিনে নরেন্দ্র মোদী বাংলায় শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। সিপিআইএম নেতাও তার উত্তর দিয়েছেন বাংলায়। তাঁর উত্তর-পত্রটি নিজের হাতে লিখে দিয়েছেন দলের আর এক সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। চমৎকার হস্তাক্ষরে লেখা চিঠিটির শেষে এসে ছোট্ট একটি হোঁচট। লেখা আছে, ‘ধন্যবাদান্ত্যে’। য-ফলাটি কোথা থেকে এল? ‘অন্ত্য’ শব্দটি বাংলায় আছে বটে, কিন্তু ধন্যবাদের পরে তার অবস্থানটি কিঞ্চিৎ রহস্যময়। ঋতব্রতবাবুর জ্ঞানভাণ্ডারে হয়তো রহস্যের সূত্রটি নিহিত আছে।
প্রয়াণ
পড়ে রইল নিজের অভয়বাণী, ‘কোনও কাজে কখনও ভয় পেয়ো না!’ কালীঘাটের ব্যবসায়ী প্রভাসচন্দ্র ও নন্দরাণীর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুনীল দাসের জন্ম ১৯৩৯-এর ৪ অগস্ট। ছেলেবেলা থেকেই উৎসাহ শিল্প চর্চায়। পাড়ার অগ্রদূত ক্লাবে সরস্বতী প্রতিমা গড়ে নজর কেড়েছিলেন। বন্ধুদের উৎসাহে সরকারি আর্ট কলেজে পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি ভর্তি দ্বিতীয় বর্ষে। ক্লাসের পরে কখনও ময়দানে নয়ত মাউন্টেড পুলিশের আস্তাবলে হাজির হতেন ঘোড়ার ছবি আঁকতে। ১৯৫৯-এ এই ঘোড়া এঁকেই জাতীয় পুরস্কার। বলতেন ‘এই ঘোড়াই আমাকে ঘোড়া দাস করে তুলল’। ১৯৬১–তে ফরাসি সরকারের বৃত্তি নিয়ে প্যারিস। স্পেনে গিয়ে ষাঁড়ের লড়াই দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ওঁর ঘোড়ার সঙ্গে যুক্ত হয় ষাঁড়। ১৯৬৪-তে দেশে ফিরে দিল্লিতে কিছুকাল শিক্ষকতার পর যোগ দেন উইভার্স সার্ভিস সেন্টারে, নির্দেশক হিসেবে অবসর ১৯৯৭-এ। আজকের তাঁতশিল্পের উন্নতিতে ওঁর ভূমিকা অনেক। দ্রুতগতির ড্রয়িংয়ে ওঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। কন্টি, তেলরঙ, সেরিগ্রাফি, ইনস্টলেশন বা ভাস্কর্যেও স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজের নামাঙ্কিত একটি ফাউন্ডেশন। নিজের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে চালু করেছিলেন পুরস্কার। পদ্মশ্রী ছাড়াও পেয়েছেন বহু সম্মান। দেশবিদেশে বহু প্রদর্শনী হয়েছে। সোসাইটি অফ কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন শিল্পী। গতকাল নজরুল তীর্থে ছিল স্মরণসভা মমার্ত, থার্ড আই এবং হ্যালো হেরিটেজ-এর উদ্যোগে।
বড় পর্দায়
ছবি তৈরি আজন্ম সংস্কারের মতো রয়েছে রাজা দাশগুপ্তের মধ্যে— পিতা ভারতীয় তথ্যচিত্রের অন্যতম প্রাণপুরুষ হরিসাধন দাশগুপ্ত। বাবার সহকারী রূপে কাজ শুরু, তাঁর ইচ্ছেতেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির স্নাতক। ১৯৭৯-তে ‘আ সঙ ফর বিরসা’, বিরসা মুন্ডাকে নিয়ে তথ্যচিত্রে তাঁর প্রতিভার প্রথম স্বাক্ষর। বিজ্ঞাপন-ছবির জগৎ ছেড়ে ১৯৮৪ নাগাদ কলকাতা দূরদর্শনে কাজ শুরু করেন, সে সময়ে দূরদর্শনে মার্জিত রুচির ধারাবাহিক বা টেলিছবি নির্মাতাদের অন্যতম তিনি। ছোটগল্পের ধারাবাহিক ‘সম্পর্ক’-এ বাণী বসুর গল্প ‘মিসেস গুপ্তরা’ নিয়ে রাজার প্রথম কাজ। অন্যগুলির মধ্যে দিব্যেন্দু পালিতের গল্প নিয়ে ‘মানুষের মুখ’ বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি নিয়ে ‘চোখ’ উল্লেখযোগ্য। পরিতোষ সেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে নিয়ে করেন ‘আ ডে ইন দ্য লাইফ অফ সেলিব্রিটি’, পরে ‘তারকার একদিন’ মহাশ্বেতা দেবী পি সি সরকার চুনী গোস্বামী জয় গোস্বামী প্রমুখকে নিয়ে। ’৯০-এ তাঁর তৈরি সমরেশ মজুমদারের ‘কালপুরুষ’ আজও উজ্জ্বল দর্শকের মনে। আবদুল জব্বারের বাংলার চালচিত্র থেকে ‘সোঁদা মাটির নোনা জল’ তাঁর নিজের সবচেয়ে পছন্দের কাজ। এ ছাড়াও উল্লেখ্য ‘একুশে পা’। ইতিহাস-পুরাতত্ত্ব নিয়ে বহু তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। সুরসিক অথচ স্বল্পভাষী আত্মসচেতন তিনি, তাই ‘মুখগুলি’, ‘অসত্যকাম’, বা ‘টিকটিকি’র মতো ছোট পর্দার ছবির সফল পরিচালককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হল— প্রথম কাহিনিচিত্র ‘চৌকাঠ’ অব্দি। সম্প্রতি সাড়াতোলা এ-ছবির ‘কাজও হঠাৎই শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই মাত্র তিন দিন আর সীমিত বাজেটে, নারীপুরুষের সম্পর্কজনিত একটি প্রিয় বিষয় নিয়ে।’ জানালেন রাজা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy