সপ্তমীতে গাদোয়াল, অষ্টমীতে লালপেড়ে তাঁত, নবমীতে পিওর সিল্ক। পুজোয় শাড়ির সঙ্গে বোধহয় জামিতির স্বতঃসিদ্ধর মতোই জুড়ে দেওয়া যায় বাঙালি কন্যেকে। সে আঠেরো হোক বা আটত্রিশ, বছরভরের জিন্স-টপ, কুর্তা, স্কার্ট এ ক’টা দিন স্রেফ আলমারির তাকে। পাড়ার প্যান্ডেল থেকে ম্যাডক্সের আড্ডা, শহরময় টইটই থেকে জমিয়ে পেটপুজো সবেতেই ফার্স্ট চয়েস শাড়ি-গয়নায় ঝলমলে ‘লুক’।
কলকাতার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দোকান চষে ফেলা তো আছেই, অন্য সবার থেকে আলাদা সেরা শাড়ির খোঁজে বুটিকে-এগ্জিবিশনে ঢুঁ মারা ভিড়টাও কম নয়। শাড়ির টানে পাগলপারা নারীদের কথা মাথায় রেখে এ বছরও পুজোর মাসখানেক আগেই শহরের এখানে-ওখানে চলছে পরপর এগ্জিবিশন, নতুন কালেকশন নিয়ে তৈরি বুটিকগুলোও।
হো চি মিন সরণিতে ক্রাফ্টস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার বিপণি ‘কমলা’য় পুজো-সংগ্রহে এ বারের ‘হিট’ পিওর সিল্কের গঙ্গা-যমুনা পাড়ওয়ালা সুতির শাড়ি বা বাঙালির চিরকালীন লালপেড়ে সাদা শাড়ি। এ ছাড়াও বরাবরের মতোই রয়েছে বাংলার শান্তিপুরী, বেগমপুরী, ধনেখালি, টাঙ্গাইল, অন্ধ্রের তেলিয়া, ইক্কত, মঙ্গলগিরি, জয়পুরের হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টেড শাড়ি, ঝাড়খণ্ডের তসর ও মটকা, জয়পুর-গুজরাতের রংবেরঙের ছাপা শাড়ি, চেন্নাইয়ের চেট্টিনাড এবং মাহেশ্বরী, কলমকারি ও চান্দেরি শাড়ি। সিল্কের হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টেড শাড়ির সম্ভার নিয়ে হাজির বালিগঞ্জের ‘উইভার্স স্টুডিও’-ও। তাদের পুজো এগ্জিবশনে এ ছাড়াও থাকছে নানা এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের চান্দেরি, বেনারসী, জামদানি ও মাহেশ্বরী শাড়িও। পুজোর সাজ থেকে অফিস কনফারেন্স কিংবা পার্টি সব মেজাজের শাড়ি নিয়ে হাজির ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের বুটিক ‘বহ্নিশিখা’। তাঁদের ভাঁড়ারে রয়েছে পিস সিল্ক শাড়ি, যা তৈরি হয় রেশমগুটি নষ্ট না করে, সিল্ক-সুতির মিশ্রণে সিকো শাড়ি, হাতে বোনা তিনরঙা শাড়ি এবং নানা রঙের মাহেশ্বরীও। বেহালার ‘ফিওনা’ বুটিকে এ বারের হিট নানা রঙের, নানা কাজের হ্যান্ডলুমের শাড়ি। মটকা, জুট, বেঙ্গালুরু সিল্কের হাল্কা এই শাড়িগুলোর সঙ্গেই রয়েছে নানা ধরনের ডিজাইনার শাড়িও।
মধ্যপ্রদেশের বাঘ প্রিন্টের শাড়ি রয়েছে ‘উইভস অফ ইন্ডিয়া’র পুজো-সংগ্রহে। রংবেরঙের এই শাড়িগুলো ইউনেস্কোর হেরিটেজ প্রোডাক্টও বটে। এ ছাড়াও তাদের ভাঁড়ারে রয়েছে আধুনিক ডিজাইনের সিল্ক ও সুতির কাঁথা শাড়ি, বাংলাদেশের কটন সিল্ক রাজশাহী শাড়ি, খাদির নীলাম্বরী জামদানি, সহজপাঠ আর জাতকের গল্পে সাজানো বাটিক এবং টাই অ্যান্ড ডাই শাড়িও। এ ছাড়া, ‘অ্যাভয়ার’-এর সম্ভারে আছে নানা রঙের হ্যান্ডলুম, জর্জেট এবং শিফন।
তবে শুধু শাড়ি কিনলেই কি আর হয়! পুজোর ভিড়ে নজরকাড়া হতে সাজের দিকে আপনার নজরটাও যে বড্ড জরুরি। কোন শাড়িটা ফ্যাশনে, সেটা খেয়াল রাখার পাশাপাশি মাথায় রাখুন কোনটায় আপনাকে মানাবে। না হলে কিন্তু পুরোটাই মাটি।
ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল বলছেন, “ট্র্যাডিশনাল গাদোয়াল, বোমকাই, ঢাকাই শাড়ির সঙ্গেই ফ্যাশনে ফিরেছে সুতির শাড়ির ইন্টেলেকচুয়াল লুক। নানা উজ্জ্বল রঙে একেবারে প্লেন বোনা শাড়ির সঙ্গে পিঠখোলা বা ডিপ নেক সাহসী ব্লাউজে থাক লটকন বা ফিতের বাঁধন। সঙ্গে ছোট হাতায় খানিকটা এমব্রয়ডারি। শাড়িতে পাড়ে-আঁচলে বা ব্লাউজে নানা চেক্স-ও চলছে। আর চলছে হাফ ডাই করা শাড়ি। তবে শাড়ি সামলাতে অসুবিধায় পড়লে পালাজো বা স্কার্টের সঙ্গে দোপাট্টা দিয়ে ড্রেপ শাড়ি তৈরি করে নিতে পারেন। সঙ্গে পুজোর ভিড়ে সোনা-রুপো না পরে একটু জাঙ্ক জুয়েলারি পরলেন, আর থাকল কম হিলের স্যান্ডেল বা জুতো। সোনার গয়না থাক অষ্টমীর অঞ্জলির জন্য।”
আর এক ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা অবশ্য শুধু ফ্যাশন মানার বদলে নিজের চেহারার কথা মাথায় রাখারও পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “রোগা চেহারায় নেট বা শিফন ভাল দেখায়। একটু ভারী চেহারা হলে এড়িয়ে চলুন ঢাকাই বা ওই ধরনের ফোলা শাড়ি। পুজোর দিনগুলোয় সকালে পরুন হাল্কা রঙের হ্যান্ডলুম শাড়ি। জমকালো সিল্ক তোলা থাক রাতের জন্য। ব্লাউজ এমন একটা জিনিস, যেটা যে কোনও চেহারাতেই পিঠখোলা হলেও ভাল দেখায়। তাই নিদ্বির্ধায় স্ট্র্যাপ, ফিতে, লটকন, হল্টার নেক, যা খুশি পরুন। নেট, জর্জেটের হলে ফুলহাতা ব্লাউজ পরতেই পারতেন। কনুই পর্যন্ত হাতাও যে কোনও চেহারাতেই ভাল দেখায়। নীল, ম্যাজেন্টার মতো রঙের সলিড কালার শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট রঙের হাল্কা কাজ করা ডিজাইনার ব্লাউজ পরা যায়। কমলা থেকে বাদামি বা কালো থেকে নীল হওয়া শেডেড শিফন, জর্জেট, ক্রেপ শাড়িগুলোর সঙ্গে পরুন একরঙা ব্লাউজ। আর গয়নায় এ বার পুজোয় বরং জাঙ্ক গোল্ড, রুপো বা স্টোনের হার, হাতভরা চুড়ি-বালা আর পায়ে অ্যাঙ্কলেট পরলেন। কানে থাক একেবারে হাল্কা, ছোট্ট কোনও দুল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy