সামান্য অপমান বা ছোটখাটো পরাজয়ও মেনে নিতে পারছে না এখনকার কিশোর-কিশোরীরা। অনেক সময়েই যা ডেকে আনছে তীব্র অবসাদ এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো চরম পরিণতিও। পর্ণশ্রীর ‘আত্মঘাতী’ ছাত্রী যে স্কুলে পড়ত, সেখানকার প্রধান শিক্ষিকার কথা থেকেও মিলেছে এমনই ইঙ্গিত।
মঙ্গলবার স্কুলের প্রিয় ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন ওই প্রধান শিক্ষিকা। মৃত ছাত্রীর পরিবারকে তিনি জানান, সোমবার গোলমালের পরে স্কুল থেকে বেরোনোর সময়ে ওই ছাত্রী এক সহপাঠীকে বলে এসেছিল, ‘‘তুই আমার সঙ্গে এ রকম করলি তো! আমি সুইসাইড করব।’’
এ কথা ওই ক্লাসের অন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে শোনার পরেই তাঁর মনে আশঙ্কার মেঘ দানা বেঁধেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্কুলে ইদানীং দেখছি, অনেক ছাত্রীই ‘নেগেটিভ’ বিষয় মেনে নিতে পারছে না। তাদের মুখে সুইসাইডের কথা উঠে আসছে।’’
একই অভিযোগ ক্লাস-টিচারদের কাছ থেকে শোনার পরে পড়ুয়াদের, বিশেষ করে যাদের এ ধরনের মানসিক প্রবণতা রয়েছে, তাদের কাউন্সেলিং করানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। কিন্তু ওই ছাত্রীর মৃত্যু তাঁর মনে এমনই ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, তিনি বিষয়টি স্কুল শিক্ষা দফতরকেও জানান বলে দাবি। ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার স্কুলে এ ধরনের অবসাদে ভোগা ছাত্রীর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, নিজেই ভয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’
একই বক্তব্য স্কুলের অন্য শিক্ষিকাদেরও। তাঁরা জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রী যে সহপাঠীর কথা খাতায় লিখেছে, সে-ও সহপাঠীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ও ঘটনার আকস্মিকতায় অসংলগ্ন কথাবার্তা করেছে। তাকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও চোখে চোখে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্কুল থেকে। ওই দিন টিফিনের সময়ে আরও যে কয়েক জন সহপাঠী ছিল, তাদের অভিভাবকদেরও মেয়েদের দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে, যাতে তারা নিজেদের দোষী না ভাবে। তবে মৃত ছাত্রীর সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে অন্য একটা তথ্যও উঠে এসেছে। ওই ছাত্রীটি কোনও কাজ করব মনে করলে সেটা করেই ছাড়ত। তবে আত্মহত্যা করার কথা বলেও যে সেটা সে ঘটিয়ে ছাড়বে, ভাবতে পারছেন না কেউ।
মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম ঘটনাটিকে বিরল বলে মনে করলেও তাঁর অনুমান, এই আত্মহত্যা কোনও একটি ঘটনার পরিণতি নয়। তাঁর কথায়, ‘‘একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত কেউ নেয় না। ছাত্রীটির মনের মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা হয়তো কেউ বোঝেননি। ফলে কেন ওইটুকু মেয়ে আত্মহত্যা করল, তা পরিস্থিতি দেখে বিবেচনা করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy