অসম্পূর্ণ: এই অবস্থাতেই রয়েছে স্কাইওয়াক নির্মাণের কাজ। বুধবার, দক্ষিণেশ্বরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কখনও দখলদার সরানো, কখনও মাটির নীচে থাকা কেব্ল বা পাইপ নিয়ে সমস্যা, কখনও আবার প্রবল বর্ষা— বারবারই নানা কারণে বাধা পেয়েছে দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের নির্মাণ। এখন আবার প্রকল্পে ব্যবহৃত লোহার একাংশের মান নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় তা ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। যার জেরে ফের কাজ আটকে যাওয়ায় ৩১ মার্চের মধ্যে ওই প্রকল্প শেষ হবে না বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।
প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, তিন-চার বার পিছোল স্কাইওয়াকের সময়সীমা। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের যদিও দাবি, ‘‘এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে স্কাইওয়াক চালু করা সম্ভব হবে।’’
মন্ত্রী জানান, পোস্তা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর থেকেই যে কোনও সেতু তৈরির ক্ষেত্রেই বিশেষ সতর্ক থাকা হচ্ছে। নির্মাণের কোথাও যাতে সামান্য ত্রুটিও না থাকে, সে জন্য স্কাইওয়াক তৈরিতে ব্যবহৃত সমস্ত লোহা রাইটস-কে দিয়ে আগে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর তার জেরেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা।
এক কর্তা জানান, ধরা যাক, কয়েক টন লোহা কাজের জন্য অন্য রাজ্য থেকে আনা হয়েছে। রাইটস পরীক্ষা করে জানাল, তার মধ্যে কিছু লোহা ওই প্রকল্পে ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। তখন সেই লোহা ফেরত পাঠিয়ে নতুন লোহা এনে আবার তার ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করাতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘এমনও হচ্ছে, লোহা এনে ঝালাই করে কাঠামো গড়ে মজুত রাখা হল রাইটস-এর শংসাপত্র পাওয়ার জন্য। কিন্তু দেখা গেল, যতটা লোহা ব্যবহার করা হয়েছে, সবটা সেই কাঠামো তৈরির উপযুক্ত নয়। তখন ফের ভাঙতে হচ্ছে।’’
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ঢোকার মূল রাস্তা রানি রাসমণি রোডে যানজট সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই সেখানে ৩২০ মিটার লম্বা স্কাইওয়াক তৈরির কাজ শুরু হয়। বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা কাজটি করলেও বিষয়টি তদারকির দায়িত্বে রয়েছে কেএমডিএ। ২০১৬-য়
কাজ শুরু হলেও পদে পদে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে নির্মাণ সংস্থাকে। তাদের এক কর্তা জানান, কাজ শুরু করতে গিয়ে বাধা আসে রাস্তার ধারের দোকানিদের থেকে। বেশ কিছু দিন সেই টালবাহানা চলার পরে দোকানিদের পুনর্বাসন দিয়ে কাজ শুরু হলেও মাটির নীচে থাকা কেব্ল ও পাইপের জন্য থমকে যায় কাজ। অনেক চেষ্টায় সেই সমস্ত লাইন বাঁচিয়ে বা স্থানান্তরিত করে শুরু হয় পাইলিং। এর পরে চলে আসে বর্ষা।
প্রবল বৃষ্টির জেরে সমস্যা দেখা দেয়।
কিন্তু এ সবের মধ্যেও কাজের ক্ষেত্রে নির্মাণ সংস্থার গড়িমসি চোখে পড়ে কেএমডিএ কর্তাদের। তা নিয়ে সংস্থাকে সতর্কও করে দেন পুরমন্ত্রী। দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াকের কাজ দেখতে এসে তিনি বার তিন-চারেক ওই সংস্থাকে কাজের সময়সীমা বেঁধে দিলেও তা ওই সময়ের মধ্যে হয়নি।
তবে বাস্তব অবস্থা বলছে, কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে স্কাইওয়াকের, যা মার্চের মধ্যে শেষ হওয়া সম্ভব নয়। প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি স্কাইওয়াকে ওঠার জন্য চারটি লিফ্ট এবং আটটি চলমান সিঁড়ি তৈরির কাজ এখনও হয়নি। কাজের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তার কথায়, ‘‘পয়লা বৈশাখ প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম হবে দক্ষিণেশ্বরে। তার আগে হয়তো স্কাইওয়াক চালু করা যাবে। তবে তিনটি লিফ্ট চালু হলেও চলমান সিঁড়ি হবে না। মনে হচ্ছে, ওই সংস্থার এমন কাজের অভিজ্ঞতা কমই রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy