Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ফুটপাত থেকে শপিং মল, তাণ্ডবের আশঙ্কায় বন্ধ ব্যবসা

গড়িয়াহাটের সুনসান ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ‘শোলে’ ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপটাই আওড়াচ্ছিলেন এক যুবক। যা শুনে সঙ্গী যুবক বন্ধুকে জানালেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আসছে। সেই কারণেই চারপাশ এত ফাঁকা আর নিস্তব্ধ।

ঝড়ের আশঙ্কায় বন্ধ দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মল। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ঝড়ের আশঙ্কায় বন্ধ দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মল। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

‘‘ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই?’’

চারপাশ এত নিস্তব্ধ কেন?

গড়িয়াহাটের সুনসান ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ‘শোলে’ ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপটাই আওড়াচ্ছিলেন এক যুবক। যা শুনে সঙ্গী যুবক বন্ধুকে জানালেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আসছে। সেই কারণেই চারপাশ এত ফাঁকা আর নিস্তব্ধ।

দক্ষিণের গড়িয়াহাট থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার অফিসপাড়া অথবা উত্তরের শ্যামবাজার, হাতিবাগান— ফণী-আতঙ্কে শুক্রবারের শহর ছিল সত্যিই সুনসান। সকালের দিকে ফুটপাতের যে ক’টি দোকান খোলা ছিল, সেই দোকানিরাও জানিয়ে দেন, বিকেল হলেই ঝাঁপ ফেলে দেবেন তাঁরা। অধিকাংশ দোকানিই জানান, খদ্দের নেই বললেই চলে। কারও কারও দাবি, এ দিন বউনিও হয়নি তাঁদের। পথচলতি মানুষ থেকে দোকানি— স্মার্ট ফোনে সকলেই চোখ রাখছিলেন ফণীর দিকে। অনেকের মনেই ফিরে এসেছে ২০০৯ সালে আয়লার তাণ্ডবের সেই ভয়াবহ স্মৃতি।

গড়িয়াহাটের ফুটপাতে প্রসাধনীর দোকান বাপ্পা সাহার। দোকানের মাথায় টাঙানো প্লাস্টিক খুলতে খুলতে আয়লার তাণ্ডবের স্মৃতিচারণ করছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘দোকানের সব জিনিস সরিয়ে ফেলেছি। এই ফণী আয়লার মতো বিধ্বংসী হবে না তো? তা হলে আগামী কয়েক দিনও দোকান খুলতে পারব না।’’ গড়িয়াহাট মোড়ের ফুটপাতে ব্যাগ বিক্রেতা ভজন সরকার বললেন, ‘‘কিছু দিন আগে শাড়ির দোকানের ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমার দোকান। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারিনি এখনও। এ বার আবার সাইক্লোনের আতঙ্ক!’’ গড়িয়াহাট বাজারের দায়িত্বে থাকা পুরসভার অফিসার সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘বাজার জুড়ে চারটে মাইক লাগিয়ে বারবার সর্তক করা হচ্ছে।’’

শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাতের ছবিটাও ছিল অনেকটা একই রকম। ভাতের পাইস হোটেলগুলি কার্যত ফাঁকা বসে ছিল। একটি পাইস হোটেলের মালিক কার্তিক দে বলেন, ‘‘রোজ যত রান্না করি, তার অর্ধেকও আজ করিনি। কিন্তু তারও খদ্দের নেই। ডিমের ঝোল আর মাংসের ঝোল তো পড়েই রইল। মাছ তো রান্নাই হয়নি আজ।’’ হাতিবাগান ও শ্যামবাজার এলাকার ফুটপাতও ছিল কার্যত সুনসান। শ্যামবাজারের ফুটপাতে দেখা গেল, বন্ধ ডালার উপরে শুয়ে আছে কুকুর।

এই ধরনের বাজারের পাশাপাশি শহরের অধিকাংশ শপিং মলও এ দিন বেলা বাড়তে বন্ধ হয়ে যায়। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলের গেটের সামনেই দেখা যায় নোটিসে লেখা, ফণীর জন্য শপিং মল বন্ধ। ওই শপিং মলের জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেল ৩টে থেকে শপিং মল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শপিং মলের মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখানোও বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ ওই শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন জানালেন, ওই মাল্টিপ্লেক্সে বিকেলের শো-এ তাঁদের সিনেমার টিকিট কাটা আছে। তবে ফণীর আতঙ্কে সিনেমা দেখার প্রশ্ন উঠছে না। কিন্তু টাকা ফেরত পাবেন কি? শপিং মল কর্তৃপক্ষ তাঁদের আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন, অনলাইনে কাটা ওই টিকিটের পুরো টাকাই তাঁদের অ্যাকাউন্টে ফিরে আসবে।

বেলা যত গড়িয়েছে, ঝড় নিয়ে আতঙ্কও তত বেড়েছে। দেখা যায়, শহরের রাস্তা থেকে হাই মাস্ট আলো নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। সন্ধ্যা নামার একটু আগে বিবেকানন্দ রোড এলাকায় টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে হাওয়ার তীব্রতা বাড়ে। শহরে কি তবে কড়া নাড়তে শুরু করল ফণী? আকাশে চোখ রেখে বাড়ি ফেরার তাড়া বাড়ে

পথচলতি মানুষের।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Fani ফণী Stall Shopping Malls
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE