এ ভাবেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তারের উপর ভেঙে পড়েছে গাছ। —নিজস্ব চিত্র
বিদ্যুতের জন্য রাস্তায় নামতে হবে, জীবনে কখনও ভাবিনি। কিন্তু কী করব? বাড়িতে অসুস্থ স্বামী, পুত্র। এই প্রবল গরমে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। জলও নেই। নাস্তানাবুদ আমরা। আমাদের বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে, পাশের পাড়ায় শুক্রবার বিদ্যুৎ পৌঁছলেও শনিবার রাত পর্যন্ত আমাদের পাড়ায় বিদ্যুৎ এল না। কলোনির বাসিন্দা বলেই কি আমরা অচ্ছুৎ?
বুধবার রাতে ঝড়ের পরে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার টালিগঞ্জের শান্তিগড় কলোনি থেকে ১০০ মিটার দূরে চালিয়া মোড়ে সিইএসসি-র কর্মীরা এসে বিদ্যুৎ সংযোগ করে গিয়েছেন। শুক্রবার চালিয়া মোড়ে আমরা সিইএসসি-র কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। ওঁরা বলেছিলেন, এলাকায় ভেঙে পড়া গাছ, আবর্জনা পরিষ্কার করে দিলে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজটা করতে তাঁদের সুবিধা হবে। সেই মতো আমাদের পাড়ার ছেলেরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে একজোট হয়ে ভেঙে পড়া গাছ কেটে সাফ করেছে।
শুক্রবার বিকেলে এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস নিজে চালিয়া মোড়ে এসে আমাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন, শনিবার সকাল থেকেই সিইএসসি-র কর্মীরা কাজ শুরু করবেন। কিন্তু শনিবার সকালেই খবর পাই, আজাদগড়ে সিইএসসি-র লোকেরা কাজ করছেন। মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও সিইএসসি-র কর্মীরা আমাদের শান্তিগড় কলোনিতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করতে আসেননি।
এ ভাবে বঞ্চিত হয়ে আর ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। প্রতিবাদে পাড়ার মেয়েরা একজোট হয়ে শনিবার সকাল থেকেই নেতাজি সুভাষ বোস রোড অবরোধে শামিল হই। অনেক কষ্ট করে পাড়ার টিউবওয়েল থেকে জল তুলে বাড়ির চৌবাচ্চা ভরছি। কোনও রকমে স্নানটা সারছি। বাথরুমের জলেও টান পড়ছে। এ রকম কঠিন অবস্থার মুখোমুখি আগে কখনও পড়তে হয়নি।
ছেলে দক্ষিণ কলকাতায় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের চার্জ নেই। ফলে ছেলে অনলাইনের ক্লাসেও যোগ দিতে পারছে না। সব থেকে বড় কষ্ট, করোনা থেকে বাঁচতে বারবার হাত ধুতে বলা হয়েছে। কিন্তু জল না-থাকায় হাত ধোব কী ভাবে?
তিন দিন ধরে আমরা অন্ধকারে থাকলেও এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর মিতালি বন্দোপাধ্যায় একটি বারের জন্যও আমাদের কাছে আসেননি। ভোটের সময় নেতারা বাড়ি বাড়ি এসে ভোট চাইতে আসেন। কিন্তু বিপদের সময়ে আমাদের পাশে না দাঁড়ালে আর কবে আসবেন?
শান্তিগড় কলোনিতে ছোট ছোট ঘুপচি বাড়িতে অনেক কষ্ট করে হাজার চারেক লোকের বসবাস। অনেক বাড়িতে বয়স্ক রোগী রয়েছেন। জানি না, আর কত দিন এমন কষ্ট সইতে হবে!
(লেখিকা পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy