Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

পাঁচ বছরেও তারের জটমুক্ত হল না শহর

পুর আধিকারিকদের একটি অংশের অভিযোগ, স্থানীয় ‘দাদার’ নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারের জট সরিয়ে খুঁটির ভার হাল্কাও করা যায় না।

বিপজ্জনক: আমপানের দাপটে পড়ে যাওয়া গাছের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তারের জট। তার মধ্যে দিয়েই  চলছে যাতায়াত। শুক্রবার, ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বিপজ্জনক: আমপানের দাপটে পড়ে যাওয়া গাছের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তারের জট। তার মধ্যে দিয়েই চলছে যাতায়াত। শুক্রবার, ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

শহরে তারের জট সরাতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকেই আরও এক বার প্রমাণ করে দিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। যার জেরে বুধবার শহরে আমপান আছড়ে পড়তেই দেখা গেল, বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।

দৃশ্যদূষণ এবং তড়িদাহতের ঘটনা আটকাতে শহর থেকে তারের জট সরানোয় উদ্যোগী হয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ২০১৫ সালে এ নিয়ে শহরের কেব্‌ল অপারেটর এবং মাল্টি সিস্টেম অপারেটরদের (এমএসও) সঙ্গে পুরসভায় বিস্তর আলোচনা হয় তাঁর। অপারেটরদের অনেকের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে আলোচনার পর্যায়েই বিষয়টি রয়ে গিয়েছে। দাবি, সেই সময়ের ঘোষণা মতো অপটিক্যাল ফাইবার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ কোথাও শুরুই হয়নি। এর মধ্যেই বুধবার ঝড়ের পরে মাটিতে ছিঁড়ে পড়া তারের কোনটি কেব্‌ল সংযোগের আর কোনটি বিদ্যুতের বুঝতে না পেরে সে সব ছুঁয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন অনেকে। কোথাও আবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে দু’জনেরই।

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (আলো) তথা বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য মনজর ইকবাল বলেন, “মাটির তলা দিয়ে শহরের সব তার নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পাকা হয়ে গিয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার আশপাশের রাস্তায় কাজ শুরুর কথাই ছিল, কিন্তু লকডাউনের জন্য শুরু করা যায়নি।”

লকডাউন তো চলছে দু’মাস! ২০১৫ সালের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে এত দেরি কেন? পুর আধিকারিকদের একটি অংশের অভিযোগ, স্থানীয় ‘দাদার’ নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারের জট সরিয়ে খুঁটির ভার হাল্কাও করা যায় না। সিইএসসি-র এক আধিকারিক বলেন, “বহু পাড়ায় তারের জট হাল্কা করতে গিয়ে সেই ‘দাদাদের’ ঘেরাওয়ের মুখে পড়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে অনেক কর্মীকে।” আরও অভিযোগ, স্থানীয় এই ‘দাদাদের’ জন্যই মাটির নীচ দিয়ে কেব্‌ল নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় না।

পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহরে পুরসভার তিন লক্ষের বেশি খুঁটি রয়েছে। এ ছাড়াও কেএমডিএ এবং সিইএসসি-র খুঁটিও আছে। কিন্তু সে সবের ধারণ-ক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি কেব্‌ল টিভি, ইন্টারনেট এবং বিদ্যুতের তার চাপানো রয়েছে এক একটিতে। তার জেরে প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় বহন-ক্ষমতা হারিয়েছে খুঁটিগুলি। আলো বিভাগের এক পুর আধিকারিক বলেন, “২০-৩০ কিলোমিটার বেগের ঝোড়ো হাওয়া সহ্য করার ক্ষমতাই খুঁটির নেই। সবচেয়ে সমস্যা কেব্‌ল সংযোগ নিয়ে। কেব্‌ল সংস্থাগুলি একটি সংযোগ খারাপ হলে তা না খুলেই নতুন সংযোগ দেন। ফলে খুঁটির উপরে ভার চাপতে থাকে।

সারাদিন পাহারা দেওয়ার লোক কোথায়! দিনে বারণ করলে রাতে লুকিয়ে কাজ সারে।” মনজর বলেন, “পুরসভার খুঁটি ব্যবহার করলে ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু কোনও কেব্‌ল সংস্থাই ঠিক মতো ভাড়া দেয় না। কত কোটি টাকার ভাড়া বাকি, সেই হিসেবই নেই!”

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, “আজই কেব্‌ল সংস্থাগুলিকে তার সরাতে নির্দেশ দিয়েছি। দ্রুত না সরালে গাছ কাটার সময়ে তার কেটে দেওয়া হবে বলেছি। ওঁরা বলেছেন, দ্রুত সরাবেন। এ বার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাটির নীচ দিয়ে তার নেওয়ার কাজও শুরু হবে।” এক কেব্‌ল সংস্থার ডিরেক্টর সুরেশ শেঠিয়া বলেন, “ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল লাইন খরচ সাপেক্ষ। তবে শহর নিরাপদ থাকবে এমন পদক্ষেপ সকলকেই করতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy