ভয়াবহ: বিধাননগরে উপচে পড়া ভিড়, এই চিত্রই সব স্টেশনে দেখা যাচ্ছে রোজ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
তিন জনের আসন। দূরত্ব-বিধি মানতে মাঝের আসনের গায়ে বড় বড় হরফে লেখা, ‘দয়া করে এখানে বসবেন না’। যদিও তা মানার কোনও উপায় নেই। ঠেসাঠেসি করে বসে রয়েছেন চার জন। সামনের সঙ্কীর্ণ পরিসরে দাঁড়িয়ে ছ’জন। কোনও কোনও আসনের সামনে সেই সংখ্যাটা আরও বেশি। গোটা কামরা জুড়ে প্রায় একই অবস্থা। কার্যত মাছি গলার জো নেই। একটি করে স্টেশন আসছে, আর ট্রেনও যেন আরও বেশি করে ভরে উঠছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বিরাটি থেকে বনগাঁ-শিয়ালদহ লোকালের সেই কামরায় কোনও মতে পা গলিয়ে জনৈক যাত্রী বলে উঠলেন, ‘‘কোথায় ৫০ শতাংশ যাত্রী! এ তো দেখছি, তিল ধারণেরও জায়গা নেই!’’
দীর্ঘ ছ’মাস পরে, গত ৩১ অক্টোবর থেকে রাজ্যে ফের সাধারণের জন্য চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানোর কথা বলা হলেও প্রথম দিন থেকেই বিধি ভাঙার একাধিক চিত্র সামনে আসছিল। ১২ দিন পরেও অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টায়নি। বরং প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। রেল থেকে পাওয়া তথ্যই বলছে, শিয়ালদহ স্টেশনের গোটা দিনের জনসমাগম করোনা-পূর্ববর্তী স্বাভাবিক সময়ের জনসমাগমকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। বর্তমানে কাজের দিনে শিয়ালদহ স্টেশন দিয়ে ১৪ থেকে ১৬ লক্ষ যাত্রী আসা-যাওয়া করছেন। করোনার আগে সেই সংখ্যাটি ছিল ১৮ লক্ষের আশপাশে। হাওড়া স্টেশনে এই সংখ্যা দশ লক্ষের কাছাকাছি। লোকাল ট্রেনে যাত্রী-সংখ্যা যে প্রায় আগের জায়গায় ফিরছে, তা স্পষ্ট এই তথ্যেই।
শিয়ালদহ এবং হাওড়া শাখার একাধিক স্টেশনে ঘুরে ভিড়ের যে ছবি দেখা গেল, তা রীতিমতো আতঙ্কের। দূরত্ব-বিধির বালাই তো ছিলই না, যাত্রীদের অধিকাংশের মুখেই ছিল না মাস্ক। শিয়ালদহ, দমদম-সহ একাধিক স্টেশনে কর্তব্যরত আরপিএফ রক্ষীদের সামনে দিয়েই মাস্কহীন যাত্রীদের বিনা বাধায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল। যদিও রেলকর্তাদের দাবি, প্রতিদিনই বিনা মাস্কের যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের জরিমানা করার পাশাপাশি বিধিনিষেধ পালনে সচেতনতার প্রচারেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
রেলের তরফে সচেতনতার প্রচারের কথা বলা হলেও দিনের ব্যস্ত সময়ে শিয়ালদহ ডিভিশনের বনগাঁ, হাসনাবাদ, রানাঘাট, শান্তিপুর, সোনারপুর, বারুইপুর বা ডায়মন্ড হারবার লোকালে ছিল তার উল্টো ছবি। দুপুরের দিকে ভিড় খানিকটা কম থাকলেও সকাল ও সন্ধ্যার দিকে কার্যত তিল ধারণের জায়গা ছিল না। হাওড়া ডিভিশনেও ছিল একই ছবি। সকাল দশটা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনে নামা জয়িতা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘সকাল থেকে সোদপুর স্টেশনে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে। ট্রেনে যা ভিড়, প্রাণ হাতে নিয়ে ওঠার মতো ব্যাপার। শেষে দু’-তিনটে ট্রেন ছেড়ে কোনও মতে এলাম।’’ একই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন বারুইপুরের বাসিন্দা শুভজিৎ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘গেট পেরিয়ে কোনও রকমে ভিতরে ঢুকতে পেরেছি। অন্য দিন তো অফিস টাইমে বারুইপুর থেকে উঠেও ট্রেনের ভিতরে ঢুকতে পারি না। গেটে ঝুলেই আসতে হয়।’’ সুতরাং, ভিড়ের চাপে ৫০ শতাংশ যাত্রীর বিধি যে শিকেয়, তা বলাই বাহুল্য। তাই আশঙ্কা, লোকালের এই ভিড় ফের করোনা পরিস্থিতিকে বদলে দেবে না তো?
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী অবশ্য বললেন, ‘‘যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারেই দেখা হচ্ছে। মাস্কহীন যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন লোকাল ট্রেনের কামরা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা হয়েছে। যাত্রীদের সরকারি বিধিনিষেধ পালনে সচেতন করতে প্রচারও করা হচ্ছে।’’
তবু তাঁরা সচেতন হচ্ছেন কি? কামরার দৃশ্য কিন্তু তেমন কোনও আশার বার্তা দিচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy