জখম রাজকুমার সাহা। নিজস্ব চিত্র
ট্রেনের অপেক্ষায় রাত সাড়ে ১১টায় দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে বসে ছিলেন দুই যুবক। গেঞ্জি ও খাকি প্যান্ট পরা এক ব্যক্তি এসে তাঁদের এক জনের কাছে বসে থাকার কারণ জানতে চান। আরপিএফ-কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। সন্দেহ হওয়ায় তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চান রাজকুমার সাহা নামে ওই যুবক। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধ’-এ মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। মারধর করা হয় তার বন্ধু আশিস মণ্ডলকেও।
শেষ পর্যন্ত আশিস তাঁর ভাই শুভাশিসকে ফোন করে ডেকে এনে রাজকুমারকে বাড়িতে নিয়ে যান। পর দিন সকালে পড়শিদের সাহায্যে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন হাসপাতালে। খবর দেওয়া হয় রাজকুমারের পরিবারেও। অভিযোগ করা হয় দমদম জিআরপি থানায়। ঘটনার ১১ দিন পরেও পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি।
ঠিক কী ঘটেছিল সে-রাতে? সিঁথি মোড়-কামারহাটি রুটে অটো চালান রাজকুমার। ৩১ জুলাই রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আশিস। রাজকুমারের বয়ান অনুযায়ী, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে ছিলেন তাঁরা। তখনই আরপিএফ-কর্মী পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি তাঁর বসে থাকার কারণ জানতে চান। আগন্তুকের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় এক জন। রাজকুমার আগন্তুকের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় পিছন থেকে লাঠির বাড়ি পড়ে তাঁর মাথায়। আশিস বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় তাঁকেও মেরে রেললাইনে ছুড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তার পরেই অভিযুক্তেরা পালিয়ে যান।
আহত আশিস কোনও রকমে রেললাইন থেকে প্ল্যাটফর্মে উঠে এসে দেখেন, রাজকুমার তখনও অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। মাথায় জল দিয়ে বন্ধুর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন তিনি। খবর দেন নিজের ভাইকে। তাঁর ভাই শুভাশিস স্টেশনে গিয়ে দাদা এবং দাদার বন্ধুকে বাড়িতে নিয়ে যান। তাঁর বক্তব্য, তখন স্টেশনে বা রাস্তায় কোনও পুলিশকর্মী বা অন্য কারও দেখা পাননি। পর দিন রাজকুমারকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। রাজকুমারের দিদি শ্রাবণী সাহার অভিযোগ, আর জি কর হাসপাতালে ভাইকে নিয়ে গেলেও পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। কিন্তু পিজি-তে শয্যা মেলেনি। তাঁদের যেতে হয় নীলরতন সরকার হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার নেই বলে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি ভাইকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। শ্রাবণীদেবী জানান, ওই ঘটনার কয়েক দিন পরে আরপিএফ থেকে এক অফিসার ফোন করেন। ভাইয়ের চিকিৎসা-ব্যয়ের অর্ধেকটা বহন করার আশ্বাস দেন তিনি। মিটমাট করার জন্য অনুরোধও করেন ওই অফিসার। শ্রাবণীদেবী রাজি হননি। তিনি অভিযোগ দায়ের করেন দমদম জিআরপি থানায়। আট দিন পরে রাজকুমার হাসপাতাল থেকে ফেরেন।
কী বলছে রেল? “খোঁজখবর করে চার জনকে চিহ্নিত করেছি। সোমবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে,” বলেন শিয়ালদহের এসআরপি উৎপল নস্কর। আর রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানান, পুলিশ তদন্ত করছে। অত রাতে ওই যুবক স্টেশনে কী করছিলেন, তা-ও দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy